কূটনৈতিক সংবাদদাতা : বাংলাদেশে আবারও ভ্রমণবিষয়ক সতর্কতা দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আরও সন্ত্রাসী হামলার বড় হুমকি রয়েছে। এতে বিদেশিরা, বিশেষ করে পশ্চিমারা সরাসরি টার্গেটে পরিণত হতে পারেন। তাই তাদেরকে বড় ধরনের জনসমাবেশ হয় এমন সব স্থানে কম কম যেতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, তাদেরকে চলাচল করতে হবে সতর্কতার সঙ্গে। একই সঙ্গে এতে ঢাকায় হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় যা যা করার তার অনেকটারই ঘাটতি রয়েছে। এখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করছে ব্রিটিশ সরকার। ব্রিটিশ সরকারের ওয়েবসাইটে দেয়া এ সতর্কতা আপডেট করা হয়েছে গত ২ আগস্ট। তা বিদ্যমান থাকবে। এতে নিজ দেশের নাগরিকদের সতর্ক করে বলা হয়েছে, গত ১ জুলাই ঢাকায় সন্ত্রাসী হামলায় ২০ জিম্মি ও ২ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে আপনাকে চোখ-মুখ খোলা রাখতে হবে (ভিজিল্যান্ট), স্থানীয় ও সামাজিক মিডিয়া মনিটরিং করতে হবে। সুনির্দিষ্ট কোনো এলাকা এড়িয়ে চলতে স্থানীয় নিরাপত্তাবিষয়ক কর্তৃপক্ষ বিশেষ কোনো পরামর্শ দিলে তা অনুসরণ করতে হবে। আরও সন্ত্রাসী হামলার বড় ধরনের হুমকি রয়েছে। এতে বিদেশি, বিশেষ করে পশ্চিমারা সরাসরি টার্গেটে পরিণত হতে পারেন। যেসব এলাকায় পশ্চিমারা সমবেত হন বলে পরিচিত হামলার জন্য সেসব এলাকা হতে পারে বড় ঝুঁকি। তাই আপনাকে এসব এলাকায় যতটা সম্ভব উপস্থিত কমাতে হবে। চলাচল করতে হবে সতর্কতার সঙ্গে। ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ১ জুলাইয়ের হামলার দায় স্বীকার করেছে দায়েশ (আগে এটি আইসিল নামে পরিচিত ছিল)। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে আরও বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলার দায় স্বীকার করেছে তারা। যেসব মানুষ ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি ও জীবন-যাপনের বিরোধী তাদের অনেককে হত্যার দায় স্বীকার করেছে আল-কায়েদা ইন দ্য ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্ট (একিউআইএস)-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত গ্রুপগুলো। আগের হামলাগুলোর পর উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে বাংলাদেশের নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো। অল্প সময়ের নোটিশে উপস্থিতির বিষয়ে ও চলাচল সীমিত করতে পারে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা।
এতে আরও বলা হয়, বৃটেনের পরিবহনবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ঢাকায় হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা মূল্যায়ন করেছে। তাতে দেখা গেছে, ঢাকার ওই বিমানবন্দরটিতে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে যা যা করতে হবে তা পুরোপুরি পূরণ করা হয়নি। আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল বিষয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ব্রিটিশ সরকার।
গুলশানের মতো ঘটনা আবারো ঘটতে পারে : ই-ইউ দূত
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়ের মায়াদু বলেছেন, গুলশান হামলার পরে বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে তাদের উদ্বেগ এখনো কাটেনি। তিনি বলেন, গুলশান হামলার মতো ঘটনা বাংলাদেশে আরও ঘটতে পারে।
বিবিসি বাংলার সাথে এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রদূত মায়াদু বলেন, নিরাপত্তা নিয়ে এই উদ্বেগের কারণে ঢাকায় তাদের মিশনে যেসব বিদেশি কর্মকর্তারা কাজ করেন তাদের পরিবারের সদস্যদের ইউরোপে ফেরত পাঠিয়ে দেবার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তর থেকে এরই মধ্যে একজন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ঢাকায় এসেছেন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে তিনি নিরাপত্তা নিয়ে মূল্যায়ন কার্যক্রম শেষ করবেন।
মি. মায়াদু বলেন, “আমাদের কিছু সহকর্মী এরই মধ্যে তাদের পরিবারের সদস্যদের নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। বাকিরা এখনো অপেক্ষা করছে কী সিদ্ধান্ত আসে সেটি দেখার জন্য। আমি জানি অনেক বিদেশি মিশন তাদের কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিতে বলেছে। আমরা কয়েকদিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। আগস্টের মাঝামাঝি ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল স্কুলগুলো খুলতে যাচ্ছে। সুতরাং এখন আমাদের সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।”
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমনকি ইউরোপেও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে তারা কি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন?
এই প্রশ্নে মি. মায়াদু বলেন, “অবশ্যই আমরা বেশি প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছি না। জুলাই মাসের এক তারিখে ১৭ জন বিদেশিকে চোখের সামনে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। এর পরে কেউ যদি বলে নিরাপত্তা নিয়ে আমরা অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছি, তাহলে সেটি নিহত এবং তাদের পরিবারকে অপমান করার মতো।”
রাষ্ট্রদূতের বর্ণনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি ‘খুবই মারাত্মক’।
সূত্র : বিবিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন