শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

রাজনৈতিক সন্ত্রাসের দুর্বৃত্তায়ন জেঁকে বসেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে

প্রকাশের সময় : ৪ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : শুরুটা হয়েছিল রাজনীতিমুক্ত পরিবেশে। কিন্তু দেড় বছরের মাথায় ক্যাম্পাসে জেঁকে বসেছে নেতিবাচক ছাত্র রাজনীতির ভূত। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি ও ধূমপান করা যাবে না এমন অঙ্গীকার দিয়ে ভর্তি হলেও শিক্ষার্থীরা কোনো না কোনোভাবে জড়িয়ে পড়ে রাজনীতির গ্যাড়াকলে। আর ধূমপানের ধোয়া, এটাতো শুরু থেকেই উড়ছে ক্যাম্পাসের আকাশে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থায় হতাশ সাধারণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের রাজনীতি কেড়ে নিয়েছে এক ছাত্রলীগ নেতার প্রাণ। মেঝেতে রক্তের দাগ থাকতেই বন্ধ ঘোষণা হলো বিশ্ববিদ্যালয়। চরম উৎকণ্ঠা নিয়ে হল ছেড়েছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা জানেন না কবে খুলবে বিশ্ববিদ্যালয়। অনিশ্চয়তায় পড়েছে তাদের শিক্ষাজীবন। রাজনৈতিক সন্ত্রাসের দুর্বৃত্তায়ন থেকে কি কুমিল্লা বিশ্বদ্যিালয় মুক্ত হবে না? এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে।   
কুমিল্লার ঐতিহাসিক লালমাই ময়নামতি পাহাড়ের পাদদেশে প্রত্মতত্ত্ব সমৃদ্ধ কোটবাড়ির সালমানপুর এলাকায় প্রায় ৫০ একর ভূমির উপর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান। ২০০৭ সালের ২৮ মে রাজনীতিমুক্ত প্রাণচাঞ্চল্য পরিবেশে মাত্র তিনশ’ শিক্ষার্থী নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে দশটি ব্যাচে ১৯টি বিভাগে প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে। প্রতিবছর ভর্তির সময় ছাত্র রাজনীতি ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ধূমপান করবেন না বলে অঙ্গীকারনামা দিয়ে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হন। কিন্তু ২০০৮ সালের শেষের দিকে ছাত্রলীগ প্রকাশ্যে ছাত্র রাজনীতি শুরু করে ক্যাম্পাসে। ব্যস, ছাত্রলীগের দেখাদেখি ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরও ক্যাম্পাসে শুরু করে ছাত্র রাজনীতির চর্চা। অথচ ছাত্র রাজনীতির ভালো দিকগুলো কোনো দলই প্রদর্শন করতে পারেনি তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমে। নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব, বিরোধ লেগেই থাকে নিজেদের মধ্যে। এদিক থেকে ছাত্রলীগ এগিয়ে ছিল বিরোধের জায়গায়। ক্যাম্পাসে অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোর পারফরমেন্স না থাকায় নেতৃত্বের আধিপত্য বিস্তারকে ঘিরে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে বিরোধের জায়গাটি দিন দিন বাড়তে থাকে। ছাত্র রাজনীতি ঘিরে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক লাঞ্ছিত করার ঘটনাও ঘটেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সাধারণ ছাত্রছাত্রী যারা হলে থাকে তারা রাজনীতিতে জড়াতে না চাইলেও তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে রাজনীতিতে বাধ্য করা হতো। নয়তো হলে থাকাটা তাদের জন্য সুখকর হতো না।
দেশের ২৫তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর পরের বছরে ছাত্র রাজনীতি শুরু হয়। গত আট বছরে নেতিবাচক ছাত্র রাজনীতির কারণে হানাহানি, মারিমারি, অস্ত্রবাজি, বহিরাগত সন্ত্রাসীদের আনাগোনা, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপসহ নানা অপকর্মের কারণে দেশব্যাপী আলোচনায় উঠে আসে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। রাজনৈতিক সন্ত্রাসের দুর্বৃত্তায়নের গ্যাড়াকলে পড়ে বারবার ব্যাহত হচ্ছে কুবির স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম। রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসে অপরাজনীতি নিয়ন্ত্রণে বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে কুবি প্রশাসন। রক্তাক্ত ক্যাম্পাস থেকে চেহারায় হতাশা, উৎকণ্ঠার ছাপ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছে হলের শিক্ষার্থীরা। কুবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা শিক্ষাঙ্গনে আর রক্ত দেখতে চায় না। তারা চায় শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ এবং নিরাপদ শিক্ষাজীবন। যেখান থেকে সন্তানরা লাশ হয়ে নয়, উচ্চশিক্ষা অর্জন করে মা-বাবার কোলে ফিরে যেতে চায়।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ঘটনা প্রসঙ্গে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ রাজনীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গন কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এএসএম আবদুল ওহাব বলেন, কোটবাড়ি লালমাই পাহাড় ঘিরে দেড় হাজার বছর আগে শালবন বিহারের মাটির নিচে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোঁয়া রয়েছে। আর দেড় হাজার বছর পর এ মাটিতেই আমরা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছি। এ মাটি শান্তির প্রতীক। অথচ আজ এ লাল মাটির ক্যাম্পাসে চলে রক্তের হোলি খেলা। এটা তো কারোরই কাম্য হতে পারে না। ছাত্র রাজনীতি তো হবে ইতিবাচক, যা শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে পরিচালিত হবে। ছাত্ররা প্রয়োজনে টিউশনি করবে, টেন্ডারবাজি থেকে দূরে থাকবে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে রক্তাক্ত প্রাণহানির যে ঘটনা ঘটেছে, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেটাই দেখতে চায় কুমিল্লাবাসী। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে রক্ষা করতে হবে।





 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন