শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কামাল বেঁচে থাকলে সমাজকে অনেক কিছু দিতে পারতো

শেখ কামালের ৭১তম জন্মবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০২০, ১২:০৪ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজ কামাল যদি বেঁচে থাকতো, সমাজকে অনেক কিছু দিতে পারতো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে ও বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক শেখ কামালের ৭১তম জন্মবার্ষিকী ছিল গতকাল। এ উপলক্ষে প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে নানা আয়োজন করা হয়েছে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত শেখ কামালের বর্ণাঢ্য জীবনের ওপর ভার্চুয়াল এই আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে যোগ দেন প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বলেন, শেখ কামালের যে বহুমুখী প্রতিভা ছিল তা বিকশিত হয়ে সব অঙ্গনে ভূমিকা রাখতে পারতো। সে সেটা রেখেও গেছে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তার সে ভূমিকা আছে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে প্রতিটি আন্দোলনে সে বড় ভূমিকা রেখেছে।

সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে যোগ দিয়ে এ আয়োজনের শুরুতে তিনি শেখ কামালের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আল্লাহ যেন তাকে বেহেশত নসিব করেন। কামাল আমাদের মাঝে নেই। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট বাবা, মা, ভাই, আত্মীয়-পরিজনসহ ঘাতকের নির্মম আঘাতে সে শাহাদাত বরণ করেছে। এই আগস্ট শোকের মাস। এই মাসেই তার জন্মদিন।

ছোট ভাই সম্পর্কে শেখ হাসিনা আরও বলেন, আগস্ট আমাদের শোকের মাস। এই মাসে ঘাতকদের নির্মম বুলেটের আঘাতে পরিবারের সবাইকে হারাতে হয়েছে। অদ্ভুত বিষয় হলো আগস্টের ৫ তারিখে শেখ কামালের জন্মদিন। আর আমার মায়ের জন্মদিন ৮ আগস্ট। শেখ কামাল আমার থেকে দুই বছরের ছোট। কিন্তু তার সবকিছুতে পরিণত বোধ ছিল, তার মেধা বহুমুখী ছিল। একদিকে যেমন ক্রীড়া সংগঠক। সাংস্কৃতিক জগতেও তার প্রতিভা রয়েছে। স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠী সৃষ্টি করেছে। ঢাকা থিয়েটার যখন হয়, নিজেও অভিনয় করতো। গান গাইতো, সেতার বাজাতো। খেলাধুলাতে তার সবচেয়ে বড় অবদান। ধানমন্ডি এলাকায় তরুণ ছেলেমেয়েদের খেলাধুলার ব্যবস্থা ছিল না। সে-ই উদ্যোগ নেয়। আবাহনীকে আরও শক্তিশালী করে।

পুরোটা সময়ই আবেগ আক্রান্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সেই আবেগ আক্রান্ত কণ্ঠে আরও বলেন, একজন মানুষের মধ্যে এই যে বহুমুখী প্রতিভা। সত্যি বেমানান ছিল। পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনে তার ভূমিকা ছিল অপরিসীম। শাহীন স্কুল থেকে মেট্রিক পাস করে। ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানে ভর্তি হয়। সেখান থেকে অনার্স পাস করে, মাস্টার্স পরীক্ষা দেয়। তারপর ১৫ আগস্ট ঘটে। তার স্ত্রী সুলতানা কামালও একই সঙ্গে পাস করে। একই সঙ্গে পরীক্ষা দিয়েছে। সুলতানা কামাল ভাইবা দিতে পারেনি। ভাইবা দেওয়ার আগে এই জগৎ ছেড়ে চলে যায়। আজকে কামাল বেঁচে থাকলে এই সমাজকে অনেক কিছু দিতে পারতো। সব কিছুতেই অবদান রাখতে পারতো।

রাজনীতিতে শেখ কামালের অবদান নিয়ে শেখ হাসিনার বক্তব্য, রাজনীতির ক্ষেত্রে তার যে সাহসী ভূমিকা। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রে তার সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। ২৫ মার্চে রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড দিতে ব্যস্ত ছিল। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়, দেরাদুনে ট্রেনিং নেয়। সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশও নেয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে তার অবদান ছিল।

এছাড়া আবাহনীর প্রতিও ছিল তার দুর্নিবার আকর্ষণ। প্রধানমন্ত্রী সেইসব স্মৃতির কথা মনে করে আরও বলেছেন, আবাহনীর প্রতি তার অন্যরকম আকর্ষণ ছিল। ১৯৭৫-এর ৩০ জুলাই জার্মানির উদ্দেশে রওনা হই আমি ও রেহানা। যাওয়ার আগে কামালকে বলি। তখন তার বিয়ে হয়েছে, নতুন বৌ। তোমার জন্য কী নিয়ে আসবো? ও ডায়েরি এগিয়ে দিয়ে বললো, অ্যাডিডাস বুট নিয়ে আসবা খেলোয়াড়দের জন্য। নিজের জন্য কোনও দিন কিছু চাইতো না। লেখাপড়া খেলাধুলা নাট্যচর্চা উপস্থিত বক্তৃতা-প্রতিটি ক্ষেত্রে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করে রাখতো।
শৈশবে বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য কম পেয়েছেন শেখ কামাল। শেখ হাসিনা সেই প্রসঙ্গ তুলে বলেন, আব্বা তো বেশিরভাগ সময় জেলে থাকতেন। শেখ কামালের জন্ম নেওয়ার পর থেকে বেশিরভাগ সময় জেলখানায় ছিলেন। আমরা তো আব্বাকে আব্বা বলে ডাকার সুযোগ পাইনি। আমরা একসঙ্গে যখন খেলতাম, আমি আব্বা বলে ডাকতাম। তখন ও আমাকে জিজ্ঞেস করতো, হাসু আপা তোমার আব্বাকে আব্বা বলে ডাকি।

তিনি আরও বলেন, দেশের জন্য দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য বাঙালি জাতির জন্য আমার বাবা সারাজীবন উৎসর্গ করে গেছেন। আমরা ভাই-বোনরা পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমাদের মা আগলে রাখতেন। ছোটবেলা থেকে কামাল শুধু খেলাধুলা নয়, সাংসারিক কাজেও মায়ের সঙ্গে সহযোগিতা করে গেছে। আজকে কামাল আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তার সৃষ্টি আবাহনী ক্লাব এখনও আছে। খুশি হয়েছি-স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠীকে নতুন রূপে দেখে।
১৫ আগস্ট পরবর্তী ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিদেশে ছিলাম। দেশে ফিরতে পারিনি, ফিরতে বাধা দেওয়া হয়েছে। যখন ফিরলাম, মামলা করতে পারিনি। মামলা করার আইনগত অধিকার ছিল না। আইন করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ২১ বছর পর সরকারে এসে তারপর মামলা করে বিচার করি। কত বছর লেগে গিয়েছিল এই বিচার করতে। যখন আমি সরকার গঠন করেছি। তারপর আইন বাতিল করতে সক্ষম হয়েছি। তারপর বিচার হয়েছে।

জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেছেন, আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া আদায় করছি। কৃতজ্ঞতা জনগণের কাছে, তারা দেশসেবা করার সুযোগ দিয়েছে। অন্যায় অবিচার তার প্রতিকার করার ও হত্যার বিচার করার সুযোগ পেয়েছি। দিনের পর দিন আমাদের কাঁদতে হয়েছে। একসঙ্গে খেলাধুলা, চলাফেরা, ঝগড়া। দুই ভাই বোন কাছাকাছি ছিলাম। ওদের ছেড়ে থাকতে হবে। তা ভাবতেই পারিনি।’
ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ ও বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সভায় সভাপতিত্ব করেছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন