বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

হিরোশিমা দিবস আজ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০২০, ১২:০২ এএম

আজ মানবেতিহাসের কলঙ্কের হিরোশিমা দিবস। আজ থেকে ৭৫ বছর আগে ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমায় দিনে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করেছিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ মুহূর্তে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়। পারমাণবিক বিস্ফোরণে হিরোশিমায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ভয়াবহ এ হামলার সাত দশক পেরিয়ে গেলেও ভয়াল সেই দিনের কথা স্মরণে রেখেছে জাপানবাসী। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে এক মিনিট নিরবতা পালনের মধ্য দিয়ে নিহতদের স্মরণ করা হয়। এসময় পৃথিবীকে পরমাণুমুক্ত করার আহ্বান জানান হিরোশিমার মেয়র।

১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট সকালে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী জাপানের হিরোশিমা শহরের ওপর লিটল বয় নামের নিউক্লীয় বোমা ফেলে এবং এর তিন দিন পর নাগাসাকি শহরের ওপর ফ্যাট ম্যান নামের আরেকটি নিউক্লীয় বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়।

অনুমান করা হয় যে, ১৯৪৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বোমা বিস্ফোরণের ফলে হিরোশিমাতে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার লোক মারা যান। নাগাসাকিতে প্রায় ৭৪ হাজার লোক মারা যান এবং পরবর্তীতে এ দুই শহরে বোমার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আরও দুই লাখ ১৪ হাজার মানুষ।
জাপানের আসাহি শিমবুনের হিসাব অনুযায়ী বোমার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগসমূহের ওপর হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য গণনায় ধরে হিরোশিমায় দুই লাখ ৩৭ হাজার এবং নাগাসাকিতে এক লাখ ৩৫ হাজার লোকের মৃত্যু ঘটে। দুই শহরেই মৃত্যুবরণকারীদের অধিকাংশই ছিলেন বেসামরিক ব্যক্তি।

জাপানের আত্মসমর্পণের পেছনে এ বোমার ভ‚মিকা এবং এর প্রতিক্রিয়া ও যৌক্তিকতা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে অধিকাংশের ধারণা, এ বোমাবর্ষণের ফলে যুদ্ধ অনেক মাস আগেই সমাপ্ত হয়। যার ফলে পূর্ব-পরিকল্পিত জাপান আক্রমণ সঙ্ঘটিত হলে উভয় পক্ষের যে বিপুল প্রাণহানি হত, তা আর বাস্তবে ঘটেনি। অন্যদিকে জাপানের সাধারণ জনগণ মনে করে, এ বোমাবর্ষণ অপ্রয়োজনীয় ছিল, কেননা জাপানের বেসামরিক নেতৃত্ব যুদ্ধ থামানোর জন্য গোপনে কাজ করে যাচ্ছিল।

বিশ্বব্যাপী আধিপত্য বিস্তারের নেশায় কথিত পরাশক্তিগুলো প্রতিপক্ষ তথা মানুষ মারার নেশায় বুঁদ হয়ে তৈরি করে চলেছে শত শত কোটি ডলারের মারণাস্ত্র। কিন্তু বর্তমান করোনাভাইরাস মহামারির কাছে এসব যে কত তুচ্ছ তা টের পাচ্ছে মৃত্যু ও সংক্রমণের সংখ্যায় শীর্ষে থাকা আমেরিকা, কথিত বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতসহ পরাশক্তির দাবিদার দেশগুলো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ১৯৪৯ সালে হিরোশিমাকে ঘোষণা করা হয় শান্তির শহর। নির্মিত হয় শান্তি স্মৃতি পার্ক। প্রতিবছরই শোক আর বেদনায় দিনটিকে স্মরণ করে বিশ্ব। সঙ্গে চলে যুদ্ধ বিরোধী প্রচার।

তারপরও থেমে নেই পরমাণু অস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতা। বিভিন্ন গবেষণার তথ্য বলছে, অন্তত ৯টি দেশের কাছে রয়েছে ৯ হাজার পরমাণু বোমা। কঠোর গোপনীয়তায় পরমাণু অস্ত্রের ভান্ডারসমৃদ্ধ করা হচ্ছে। চলছে আরো বিধ্বংসী বোমা তৈরির পরিকল্পনা। যদিও যুদ্ধ নয় শান্তির বার্তা প্রচারেই অগ্রগামী বিশ্বের এসব ক্ষমতাধর রাষ্ট্রনায়করা।

হিরোশিমা ট্র্যাজেডির ৭৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে জাপানের রাষ্ট্রদূত আইটিও নাওকি বাংলাদেশের জনগণকে শান্তির বার্তা দিয়েছেন। গতকাল ঢাকাস্থ জাপান দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, ‘গত বছর আমি বাংলাদেশে এসে অবাক হই যে, হিরোশিমা এবং নাগাসাকির ট্র্যাজেডির বিষয়ে এত বেশি বাংলাদেশি জানেন। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমা হামলার গল্প এমনকি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা অধ্যয়ন করে। এছাড়াও অনেকে কয়েক দশক ধরে হিরোশিমা এবং নাগাসাকির ট্র্যাজেডিকে স্মরণ করে চলেছেন। বাংলাদেশের নাগরিকরা জাপানের ট্র্যাজেডির প্রতি যে মমত্ববোধ দেখিয়েছিল আমাদের কাছে অনেক অর্থপূর্ণ। সুতরাং আমাদের এ দীর্ঘদিনের অংশীদারিত্বের জন্য বাংলাদেশের এ ‘হিরোশিমা দিবস’ তাৎপর্যপূর্ণ।

তিনি আরো বলেন, হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা ফেলে দেওয়ার ৭৫ বছর হয়ে গেছে। যেহেতু প্রতি বছর বেঁচে যাওয়া লোকের সংখ্যা কম হচ্ছে, তাই আমাদের সকলের পক্ষে ট্র্যাজেডির কথা স্মরণ করা এবং আমরা যে শিক্ষাটি শিখেছি তা ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়া আরও গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি ক্ষতিগ্রস্থদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে আশা প্রকাশ করেন যে, জাপান এবং বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বকে আরও শান্তিপূর্ণ করতে একসাথে কাজ করবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Shahab Uddin ৬ আগস্ট, ২০২০, ২:৪৭ এএম says : 0
আর এই জাপানিরাই এখন আমেরিকার মিত্র হয়ে গেল।
Total Reply(0)
কফিল রাজ ৬ আগস্ট, ২০২০, ২:৪৭ এএম says : 0
হিরোশিমা আঘাতের জন্য আমেরিকা কখনো কি ক্ষমা চেয়েছে??
Total Reply(0)
Meherul Mizu ৬ আগস্ট, ২০২০, ২:৪৮ এএম says : 0
And now Japan and USA both are good friends.
Total Reply(0)
Jasim Uddin ৬ আগস্ট, ২০২০, ২:৪৯ এএম says : 0
ধিক্কর আমেরিকাকে।
Total Reply(0)
MD Fazle Elahi ৬ আগস্ট, ২০২০, ২:৪৯ এএম says : 0
This is America. And they say they are fighting against terrorism while they are the main culprit behind everything.
Total Reply(0)
Ali Hossain ৬ আগস্ট, ২০২০, ২:৫০ এএম says : 0
এতো বড় ঘটনা ভুলার মতো না হলেও জাপান এটাকে ভুলে গিয়ে আমেরিকার সাথে বন্ধুত্ব করে উত্তর কোরিয়ার সাথে যুদ্ধ করতে চায়
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন