শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

৫ আগস্ট মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিজেপি’র জন্য বিজয় দিবস!

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০২০, ১২:০১ এএম

ভারতের ক্ষমতাসীন কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি স্বাধীনতা দিবসের (১৫ আগস্ট) চেয়ে ৫ আগস্টকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। গেরুয়া দলটি এই দিনটিকে ভারতীয় ও কাশ্মীরি মুসলমানদের উপর হিন্দুদের বিজয়ের দিন হিসাবে দেখছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট কাশ্মীর ‘বিজয়ে’র পর চলতি বছরের ৫ আগস্ট ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের জায়গায় বিতর্কিত রামমন্দির নিমার্ণের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কাশ্মীরের অনেকে মনে করেন যে, করোনা মহামারি ও অন্যান্য বিভিন্ন সমস্যার মধ্যেও এই অনুষ্ঠানের জন্য ৫ আগস্ট বেছে নেয়া ইচ্ছাকৃত। তাদের দৃষ্টিতে, বিজেপি কাশ্মীরের পরে এবার একই দিনে সমগ্র ভারতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিজয়ের আরেকটি বার্তা দিচ্ছে। গত বছরের ৫ আগস্টে কাশ্মীরে যা ঘটেছে তার ফলে, অঞ্চলটি নিয়ে বাস্তবতা এবং রাজনীতির উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন ঘটেছে। এখন কাশ্মীরে আদর্শ, পরিচয়, ডেমোগ্রাফি, আধিপত্য, মর্যাদা এবং বেঁচে থাকা, সব কিছু নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। ভারতীয় সংবিধানের ৩৫-এ অনুচ্ছেদটি বাতিল হওয়ায় সমস্ত ভারতীয় নাগরিকরা এখন কাশ্মীরে বসতি স্থাপন করতে পারেন এবং নির্দিষ্ট যোগ্যতার মানদÐ পূরণের পরে সেখানে জমি ও সম্পত্তি কিনতে পারবেন। এর বাইরে বিভিন্ন আইনের নতুন সংশোধনীগুলো ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে জম্মু ও কাশ্মীরের যে কোনও অঞ্চলকে ‘কৌশলগত’ হিসাবে ‘অবহিত’ করার এবং সেখানে স্থায়ী নির্মাণকাজ করার ক্ষমতা দিয়েছে। কাশ্মীরে ভিত্তিক সমস্ত রাজনৈতিক সংগঠনগুলো একে ‘ইসরায়েলি ধাঁচে জনবসতি’ গড়ে তোলার পরিকল্পনা হিসাবে অভিহিত করেছে।

জম্মু ও কাশ্মীরের সাংবিধানিক সুবিধা বাতিলের সাথে সাথে ন্যাশনাল কনফারেন্স (জেকেএনসি) এবং পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) মতো আঞ্চলিক দল ছাড়াও সর্বদলীয় হুরিয়াত সম্মেলন (এপিএইচসি), স্বাধীনতাপন্থী এবং পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী সংগঠন, আইনজীবি এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা ভারতের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, সেখানে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার অবাধ আন্দোলনে অভ‚তপূর্ব বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। কয়েক হাজার কাশ্মীরিকে কারারুদ্ধ করা হয়েেেছ। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে টলতি বছরের ফেব্রæয়ারির মধ্যে সেখানে ৭ হাজার ৩৫৭ জন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে, শ্রীনগরে অবস্থিত বিশিষ্ট মানবাধিকার সংগঠন জম্মু ও কাশ্মীর কোয়ালিশন ফর সিভিল সোসাইটির (জেকেসিসিএস) মতে, গত এক বছরে ১৩ হাজারেরও বেশি কাশ্মীরিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এটি বোধগম্য যে, হতাশাগ্রস্থ কাশ্মীরিরাও পাকিস্তানের প্রতিও অসন্তুষ্ট। তাদের কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, পাকিস্তান যদি তাদের পক্ষে ভারতের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংঘাতে না যায়, তবে কীভাবে তারা বন্দী অবস্থা থেকে সেøাগান, পাথর এবং অব্যাহত আত্মত্যাগের মাধ্যমে পারমাণবিক শক্তিধর সেনাবাহিনীকে প্রতিরোধ করবে? মনস্তত্ত¡বিদরা বলছেন, চরম ভয়ের মধ্যে থাকলে মানুষের সামনে কেবল তিনটি উপায় থাকে। পালানো, ভয়ে জমে যাওয়া এবং লড়াই। কাশ্মীরের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, গত এক বছরে জনগণ এবং রাজনীতিবিদরা ভয়ে জমে যাওয়া অবস্থায় রয়েছেন। কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে তা নিয়ে অনেকেই অনিশ্চিত। শ্রীনগর ভিত্তিক প্রভাবশালী বাণিজ্য সংস্থা কাশ্মীর চেম্বার অব কমার্সের (কেসিসিআই) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে কাশ্মীরের ৫৩০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ও পর্যটন খাতের সাথে যুক্ত কয়েক হাজার তরুণ তাদের চাকরি হারিয়েছে এবং অনেকগুলো বিনিয়োগকারীরা সংস্থা মূলধন হারিয়েছে।

ভারত সরকার কাশ্মীরের স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর মুখও বন্ধ করে দিয়েছে। সংবাদপত্রগুলো ৫ আগস্টের পদক্ষেপের পর থেকে আর কাশ্মীরের জ্বলন্ত পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ, সম্পাদকীয় এবং মন্তব্য কলাম লেখার সাহস পায়নি। সদ্য চালু হওয়া জম্মু ও কাশ্মীরের মিডিয়া পলিসি ২০২০ এর মাধ্যমে এই অঞ্চলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কফিনে চ‚ড়ান্ত পেরেক ঠুকে দেয়া হয়েছে। খুন হয়েছে সাংবাদিকতা। নীতিমালায় জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসনের তথ্য ও জনসংযোগ দফতরের একজন কেরানী বা আমলাকে যে কোনও সম্পাদক, সংবাদপত্রের স্বত্বাধিকারী এবং সাংবাদিককে ‘অনৈতিক, দেশবিরোধী, রাষ্ট্রদ্রোহী’ লেখার জন্য দায়বদ্ধ করা ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের অবারিত ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

ইতিমধ্যে কয়েক ডজন সাংবাদিককে নিয়মিত রিপোর্ট করার জন্য বিভিন্ন থানায় তলব ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অবৈধ কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন এবং ভারতীয় দন্ডবিধির (আইপিসি) বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে পুরষ্কার বিজয়ী মহিলা ফটো সাংবাদিক মাসরাত জেহরাসহ ছয়জন বিশিষ্ট কাশ্মীরি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে একজন প্রবীণ সাংবাদিক কটাক্ষ করে বলেছিলেন, ‘কাশ্মীরের একমাত্র রাজনৈতিক দল হচ্ছে পুলিশ।’ সূত্র : ডন।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন