শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মক্কা মদীনার মসজিদ আধুনিকায়নের বিস্ময়কর গল্প-১

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ৮ আগস্ট, ২০২০, ১২:০২ এএম

সউদী আরবের বাদশাহদের ইচ্ছায় মক্কা ও মদীনা শরীফের পবিত্র দুই মসজিদের আধুনিকায়ন ও সাম্প্রতিক সম্প্রসারণের এ কাজটি করেছেন মিসরের সৌভাগ্যবান এক শতায়ু স্থপতি। যার জন্ম ১৯০৮, মৃৃত্যু ২০০৮ ঈসাব্দে। তার জীবন যেমন বিস্ময়কর, ঠিক তেমনি দুই মসজিদের, বিশেষ করে মদীনার মসজিদে নববীর কাজও অলৌকিকতাপূর্ণ।

ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র স্থান সৌদী আরবের মক্কা শহরে অবস্থিত কাবা ঘিরে মসজিদুল হারাম। ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.) এর দ্বারা প্রথম কাবা নির্মাণ করা মুসলিমরা হজ্জ ও উমরার জন্য মসজিদুল হারামে যান। হজ্জের সময় এখানে উপস্থিত হওয়া মানুষের জমায়েত পৃথিবীর বৃহত্তম মানব সমাবেশের অন্যতম। অপরদিকে মসজিদে নববী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মসজিদ যা বর্তমান সৌদী আরবের মদিনায় অবস্থিত। গুরুত্বের দিক থেকে মসজিদুল হারামের পর মসজিদে নববীর স্থান। হজরত মুহাম্মদ (সা.) হিজরত করে মদিনায় আসার পর এই মসজিদ নির্মিত হয়। নির্মাণের পর অনেকবার পুন-নির্মাণ কিংবা সংস্কার করা হয়েছে মুসলমানদের এই পবিত্র দুটি মসজিদ। আর মক্কার মসজিদুল হারাম কিংবা মদিনার মসজিদে নববীর সংস্কারে একজন মিশরীয় প্রকৌশলী এবং স্থপতি অনেক ভ‚মিকা রেখেছেন যিনি খ্যাতি থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করেছিলেন। তাই তিনি আজো অনেকেরই অজানা।

সেই মহান ব্যক্তির নাম ড. মুহাম্মদ কামাল ইসমাঈল। তিনি মিশরের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ হিসাবে উচ্চ বিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট প্রাপ্ত ব্যক্তি। এবং রয়েল স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হওয়া এবং স্নাতক অর্জন করা সবচেয়ে কম বয়সী ব্যক্তিও ছিলেন তিনি। সবচেয়ে কম বয়সে ইসলামী আর্কিটেকচারে তিনটি ডক্টরেট ডিগ্রি প্রাপ্তির জন্য ইউরোপে গিয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি রাজার কাছ থেকে নীলে স্কার্ফ এবং আয়রন র‌্যাঙ্ক প্রাপ্ত সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন। এছাড়াও তার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনিই প্রথম প্রকৌশলী যিনি মক্কা ও মদীনা মসজিদ স¤প্রসারণ প্রকল্পের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করেছিলেন।

বাদশাহ ফাহাদ এবং বিন লাদেন কোম্পানির প্রচেষ্টা সত্তে¡ও তিনি তার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন এবং স্থাপত্যকর্ম তদারকির জন্য কোনো প্রকার অর্থ গ্রহণ করতে রাজি হননি। তাদের লাখ লাখ টাকার চেক ফিরিয়ে দিয়ে বাকের বিন লাদেনকে তিনি বলেন, আমি কেন পবিত্র দুটি মসজিদে আমার কাজের জন্য অর্থ গ্রহণ করব? তাহলে আমি কীভাবে বিচার দিবসে আল্লাহকে মুখ দেখাব? তিনি ৪৪ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন। তার স্ত্রী একটি পুত্রের জন্ম দিয়ে মারা যান। এরপর তিনি আর বিয়ে করেননি এবং তার মৃৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি আল্লাহর ইবাদতে পূর্ণ সময় নিবেদিত করেছিলেন। তিনি গণমাধ্যমের যশ, খ্যাতি এবং অর্থের থেকে দূরে থেকে তিনি দুটি পবিত্র মসজিদের সেবায় ব্যয় করেছিলেন।

এই প্রতিভাবান ব্যক্তিটির মসজিদুল হারাম এর মার্বেলের কাজ সম্পর্কিত একটি চমকপ্রদ গল্প রয়েছে। তিনি তাওয়াফকারিদের জন্য হারাম মসজিদের মেঝেটি ঢাকতে চেয়েছিলেন। আর এই বিশেষ তাপ শোষণক্ষমতাসম্পন্ন মার্বেল কেবল গ্রীসের একটি ছোট পর্বতে পাওয়া যেত। তিনি গ্রীস ভ্রমণ করেন এবং হারামের জন্য প্রায় অর্ধেক পাহাড়ের পরিমাণে মার্বেল কেনার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। তিনি চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেন এবং মক্কার দিকে ফিরে আসতেই সাদা মার্বেল চলে এসেছিল এবং প্রকৃতপক্ষে মক্কার পবিত্র মসজিদের মেঝেতে মার্বেলের স্থাপন সমাপ্ত হয়েছিল। এর ১৫ বছর পরে, সৌদি সরকার তাকে মদীনার পবিত্র মসজিদে অনুরূপ মার্বেল স্থাপন করতে বলে। এ ব্যাপারে ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ কামাল বলেন, যখন বাদশাহ তাকে নবীজির মসজিদটিকেও একই মার্বেল দিয়ে ঢাকতে বললেন, তখন আমি খুব বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম, কারণ এই ধরণের মার্বেল পাওয়ার জন্য পৃথিবীতে কেবলমাত্র একটি জায়গা ছিল। এটি ছিল গ্রীস এবং আমি এরইমধ্যে তার অর্ধেক কিনে নিয়েছি।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (12)
মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুর রশিদ ৭ আগস্ট, ২০২০, ১:৩৬ এএম says : 2
জাযাকাল্লাহ। সামনে লেখা পাওয়ার অপেক্ষায় রইলাম।
Total Reply(0)
মামুন ৭ আগস্ট, ২০২০, ১:৫৫ এএম says : 1
আল্লাহ লেখক ও ও দৈনিক ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে উত্তম জাযা দান করুক
Total Reply(0)
কাওছার আহমেদ ৭ আগস্ট, ২০২০, ১:৫৫ এএম says : 1
পত্রিকার পাতায় ধারাবাহিক এই লেখাগুলো আমাদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করে
Total Reply(0)
নাসিরুল হক ৭ আগস্ট, ২০২০, ১:৫৬ এএম says : 0
আপনাদের এই বিভাগের লেখাগুলো নিয়মিত পড়ার জন্যই প্রতিদিন একবার হলেও দৈনিক ইনকিলাব সাইটে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করি
Total Reply(0)
আব্দুল হাকিম ৭ আগস্ট, ২০২০, ১:৫৭ এএম says : 0
এই ধরনের লেখার জন্যই দৈনিক ইনকিলাব আমার সবচেয়ে প্রিয় পত্রিকা
Total Reply(0)
আরিফ ৭ আগস্ট, ২০২০, ১:৫৭ এএম says : 0
পরবর্তী পর্ব গুলোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি
Total Reply(0)
মাজহারুল ইসলাম ৭ আগস্ট, ২০২০, ১:৫৮ এএম says : 0
আমাদের সকলের এই ইতিহাস গুলো জানা খুব দরকার
Total Reply(0)
নিসারুল ইসলাম ৮ আগস্ট, ২০২০, ১২:১৭ এএম says : 0
লেখকের প্রশ্ন উত্তর নিয়মিত পড়ি । তাঁর যৎসামান্য লেখাও পড়েছি । এসব পড়তে পড়তে তাঁর প্রতি একটা শ্রদ্ধা ও ভালবাসা অনুভব করি । কিন্তু তাঁর পরিচয় আমার জানা নেই, আমি সাধারন বিষয়ে লেখাপড়া করা মানুষ । আমার এই প্রিয় ব্যক্তিটি সম্বন্ধে কেউ জানালে খুশী হবো ।
Total Reply(1)
Saleh ahmed ৮ আগস্ট, ২০২০, ৫:৪২ এএম says : 362
উনার নাম উবায়দুর রহমান খান নদভী
Saleh ahmed ৮ আগস্ট, ২০২০, ৫:৪৬ এএম says : 1
উনার নাম উবায়দুর রহমান খান নদভী
Total Reply(0)
Md. Emdadul Haque Badsha Badsha ৩০ আগস্ট, ২০২০, ৪:১৭ এএম says : 1
লেখাটী শেষ করুন, এরপর কি হয়েছে ?
Total Reply(1)
মুহাম্মাদ তানভীর হুসাইন ১৪ জানুয়ারি, ২০২১, ৪:০৯ পিএম says : 0
...
Md Nooruddin Molla ১৮ মে, ২০২১, ১:১৯ পিএম says : 0
masha allah , a lot of sukria for discovering such types of news or information..
Total Reply(0)
mohammad khairul islam ২২ মে, ২০২১, ১০:০১ এএম says : 0
lekhati bhalo hoyese
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন