শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

উত্তরবঙ্গে কমছে বন্যার পানি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ আগস্ট, ২০২০, ১২:১১ এএম

ভূরুঙ্গামারীতে দুধকুমার নদীর ভাঙনে বিলীন ৩টি মসজিদ : মধ্যাঞ্চলে এখনও বন্যা


দেশের সামগ্রিক বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নত হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ জেলায় পানি কমতে শুরু করায় দেখা দিয়েছে তীব্র নদীভাঙন। কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে দুধকুমার নদীর ভাঙ্গনে ইসলামপুর গ্রামের ৩টি মসজিদসহ কয়েকশ’ হেক্টর আবাদি জমি ও শতাধিক বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভাঙছে কালজানী নদীও। এ ছাড়া প্রচন্ড স্রোতে পদ্মায়ও তীব্র ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। নদ-নদীর পানি কমে যাওয়ায় ভাঙনের তান্ডবে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা। এদিকে দেশের মধ্যাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলা এখনও বন্যাকবলিত। বিশেষ করে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি গতকালও কিছুটা অবনতি হয়েছে। বালু নদ, শীতলক্ষা, তুরাগ, বংশী ও ধলেশ্বরী নদীর পানি এখনো বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

শীতলক্ষায় হঠাৎ করে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলে প্রবল স্রােতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ভেসে গেছে বেশ কিছু ঘরবাড়ি, দোকানপাট। এ ছাড়া ফতুল্লায় বন্যার পানির সাথে কলখারনার বর্জ্য মিশে গোটা এলাকার পরিবেশকে দূষিত করেছে। এতে চর্মরোগসহ নানা রোগ ছড়াচ্ছে। এ ছাড়া রাজধানীর আশপাশের নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি মানুষও চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। অন্যদিকে পদ্মার পানি মুন্সীগঞ্জের ভাগ্যকূল ছাড়াও মাওয়া ও গোয়ালন্দ পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। চাঁদপুরে মেঘনার পানিও এখনো বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বন্যা প‚র্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি কমছে। গঙ্গা নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। পদ্মা নদীর পানিও কমছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তর-প‚র্বাঞ্চলের উজানে মেঘনা অববাহিকায় প্রধান নদীর পানি কমছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। রাজধানীর আশপাশের নদীগুলোর পানি হ্রাস পাচ্ছে যা আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকবে। এতে ঢাকা ও এর আশপাশের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞদের অভিমত রাজধানীর বন্যা পরিস্থিতি আগামী কয়েকদিন আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।

এরমধ্যে আবার আগস্ট মাসের শেষের দিকে দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-প‚র্বাঞ্চল আকস্মিক বন্যায় আরেকবার ডুবতে পারে বলে আভাস দিয়েছে বন্যা প‚র্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। মেঘ মানচিত্রের সূত্র দিয়ে কেন্দ্রটি বলছে, চলতি মাসের শেষের দিকে উজানে ভারী বর্ষণ হতে পারে। একই সময়ে বাংলাদেশেও প্রবল বৃষ্টি হবে। এই কারণে আকস্মিক বানে আবারও তলিয়ে যেতে পারে দেশের নিম্নাঞ্চল।

চলমান বন্যায় ইতোমধ্যেই পানিতে ডুবে ও নানা কারণে দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বন্যার পানিতে ডোবার পাশাপাশি সাপের দংশনে এবং বিভিন্ন রোগে মানুষের মৃত্যু ঘটছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ন্যাশনাল হেল্থ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ এখনো পর্যন্ত ১৬১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। এদের সবাই পানিতে ডুবে, ডায়রিয়ায়, সাপের কামড়ে ও বজ্রপাতে মৃত্যুবরণ করেছেন। এরমধ্যে পানিতে ডুবে ১৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বজ্রপাতে মারা গেছে ১৩ জন। বন্যা উপদ্রুত এলাকায় চর্মরোগ, চোখের প্রদাহ, শ্বাসনালীর প্রদাহসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ২৭ হাজার ৭৭৩ জন। সবচেয়ে বেশি ১০ হাজার ২২ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।

কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, জেলার ভূরুঙ্গামারীতে দুধকুমার নদীর ভাঙনে বিলীনের পথে উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়নের পাইকডাঙ্গা ও চরভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রাম। ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ঐ গ্রামের ৩টি মসজিদসহ কয়েকশ’ হেক্টর আবাদি জমি ও শতাধিক বসতবাড়ি। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দুধকুমার, ফুলকুমার, কালজানী, সংকোশ, গঙ্গাধরসহ সবকটি নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে ফলে প্লাবিত হওয়া নিম্নাঞ্চলগুলো থেকে পানি নেমে যাচ্ছে। এদিকে নদ-নদীগুলোর পানি কমে যাওয়ায় দুধকুমার ও কালজানী নদীর ভাঙনের তান্ডবে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা। ভাঙছে কালজানী নদী। বড় বড় চাপ ধরে পাকারাস্তা, ঘাট, ঘাটসংলগ্ন বাজার বসতভিটা, গাছবাগান, বাঁশঝাড় আর আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। হুমকিতে আছে বিজিবি ক্যাম্প, মডেল প্রাইমারী স্কুল এবং জনবসতিসহ বিস্তীর্ণ এলাকা।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ওমর ফারুক জানান সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমন্বিত পরিদর্শন শেষে নদী শাসনের জন্য একটি প্রস্তাব ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আপাতত শিলখুড়ি খেয়া ঘাটের দুই পাড়ের জনগণের পারাপারের সুবিধার্থে ঘাট উন্নয়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন। এছাড়াও কালজানি ও দুধকুমার নদীর ভাঙন রোধে ‘দুধকুমার নদী উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে।

গোপালগঞ্জ থেকে মো: অহেদুল হক জানান, মধুমতি, কুমার নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গোপালগঞ্জ সদর, মুকুসুদপুর, কাশিয়ানী, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলার বিলবেষ্টিত নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলার ৩২টি গ্রামের অন্তত ৩ হাজার ২শ’ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। এ দিকে মধুমতি নদী ও মধুমতি বিলরুট চ্যানেলের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মানিকদহ, উরফি, ইছাখালি ও ধলইতলায় নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে ।

রাজধানীর পূর্বাঞ্চলে পানি বাড়ছে। এরই মধ্যে পূর্বাঞ্চলের অনেক এলাকায় মানুষের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে সব কিছুই পানির নিচে। ফলে নৌকা দিয়েই যোগাযোগ করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। অনেকেই বাড়ি-ঘরও ছেড়ে অনত্র আশ্রয় নিচ্ছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৭০, ৭১, ৭৩ ও ৭৫ নম্বর ওয়ার্ড গত এক মাসের বেশি সময় ধরে বন্যাকবলিত। নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোর বাসিন্দাদের কাছে কোনো খাদ্য বা ত্রাণ সহায়তাও এখনো পৌঁছেনি।

এদিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় পানির স্রোতে ভেসে গেছে বেশ কিছু ঘরবাড়ি দোকানপাট। বন্যার পানির সাথে কলকারখানার বর্জ্য মিশে পুরো এলাকার পরিবেশকে দূষিত করেছে। এতে বিভিন্ন চর্মরোগসহ পানিবাহিত নানা রোগ ছড়াচ্ছে। ফতুল্লা থানাধীন চারটি ইউনিয়নের বানভাসি ৫০০ পরিবারের মাঝে গতকাল ত্রাণ বিতরণ করেছেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা বারিক। ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম সাইফউল্লাহ বাদলের নিজস্ব অর্থায়নে প্রত্যেক পরিবারকে পাঁচ কেজি করে চাল ও শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে।

বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার চারটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে যায়। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়া মানুষগুলো কেউ মাচা বেঁধে ঘরে বসবাস করছেন। আবার কেউ অন্য স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Mohammad Akram Hossain ৯ আগস্ট, ২০২০, ৩:০০ পিএম says : 0
very good,informative news.
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন