মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ত্যাগের দৃষ্টান্ত দেখিয়ে গেছেন বঙ্গমাতা : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও মায়ের কোনো অহমিকা ছিল না

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ আগস্ট, ২০২০, ১২:১১ এএম | আপডেট : ১২:৪৯ এএম, ৯ আগস্ট, ২০২০

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার মা বাবার একজন উপযুক্ত সাথী হিসেবেই চলে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মাত্র দু’বছর সংসারের স্বাদ পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, ১৯৫৮ সালে মার্শাল ল’ জারি হওয়ার পর আব্বা আলফা ইন্স্যুরেন্সে চাকরি করতেন। এই দু’বছর মা সংসারের স্বাদ পেয়েছিলেন। কারণ তখন রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী হওয়া স্বত্তে¡ও মায়ের কোনো অহমিকা ছিল না। গতকাল বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ১৫ আগস্টের ঘাতকদের কাছে জীবন ভিক্ষা চাননি জানিয়ে তার বড় মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি তো জীবন ভিক্ষা চাননি। তিনি নিজে বাঁচতে চাননি। তিনি সাহসের সঙ্গে সেখানে এ কথাই বলেছিল আমার স্বামীকে হত্যা করেছো আমি তার কাছেই যাবো। সেখানেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। মা বাবার একজন উপযুক্ত সাথী হিসেবেই চলে গেছেন। আব্বার যে আদর্শ, সেই আদর্শটা তিনি খুব সঠিকভাবে ধারণ করেছিলেন। আর সেটা ধারণ করেই তিনি নিজের জীবনটাকে উৎসর্গ করে দিয়ে গেছেন। শেখ হাসিনা বলেন, ত্যাগের মধ্যে দিয়ে একটা সংসারকে সুন্দর করা যায়, একটা প্রতিষ্ঠানকে সুন্দর করা যায়, একটা দেশকে সুন্দর করা যায়। চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার চেয়ে বড় আর কিছু হয় না। মা সেই দৃষ্টান্তই দেখিয়ে গেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহীয়সী নারী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর একজন যোগ্য ও বিশ্বস্ত সহচর এবং বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের সহযোদ্ধা। বঙ্গমাতা অসাধারণ বুদ্ধি, সাহস, মনোবল, সর্বসংহা ও দূরদর্শিতার অধিকারী ছিলেন এবং আমৃত্যু দেশ ও জাতি গঠনে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বঙ্গমাতার জন্মদিন। সেই জন্মের পর ৩ বছর থেকেই পিতা-মাতা সব হারিয়ে সারাটা জীবন শুধু সংগ্রামই করে গেছেন। কষ্টই করে গেছেন। কিন্তু এই দেশের স্বাধীনতার জন্য তিনি যে কত দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন সেটা আমরা জানি। সংসার সামলে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুকে সহযোগিতা করতেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি কাজে মাকে দেখেছি বাবার পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন। কখনো সংসারের কোন সমস্যা নিয়ে বিরক্ত করেননি বা বলেনও নি। বরং বেশিরভাগ সময়ই তো বাবা কারাগারে ছিলেন। একটানা দুই বছরও তিনি কারাগারের বাইরে থাকেননি। কিন্তু মা যখন কারাগারে দেখা করতে যেতেন তখন মা নিজেই বলতেন চিন্তার কিছু নেই। সব কিছু তিনি নিজেই দেখতেন। আমাদের মানুষ করার দায়িত্ব মায়ের হাতেই ছিল। তার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ প্রতিটি সংগঠনের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। নির্দেশনা দেয়া বা বাইরের অবস্থা জেলখানায় থাকা আব্বাকে জানানো, বাবার নির্দেশনা নিয়ে এসে সেগুলো পৌঁছে দেয়া এই কাজগুলো তিনি খুব দক্ষতার সঙ্গে করতেন। বঙ্গমাতার মধ্যে কোন অহমিকা বোধ ছিল না।

শেখ হাসিনা বলেন, বাবা যখন প্রধানমন্ত্রী হয়ে ফিরে এলেন তখনও কিন্তু মায়ের মধ্যে এই অহমিকা বোধ কখনো ছিল না। তিনি কখনো সরকারি বাসভবনে বসবাস করেননি। কাজের জন্য বাবা সকালে চলে আসতেন, বাড়ি থেকে নাস্তা করে আসতেন। আবার দুপুরে মা নিজের হাতে রান্না করে টিফিন ক্যারিয়ারে করে পাঠিয়ে দিতেন। রান্নাটা সব সময় নিজের হাতে করতেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী পাকের ঘরে গিয়ে রান্না করবেন সেই সমস্ত চিন্তা তার কখনো ছিল না। মায়ের হাতের রান্না খুব সুস্বাদু ছিলো।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা সন্তানদের মাটির দিকে চেয়ে চলতে শিখিয়েছেন। আমরা শিক্ষা পেয়েছি বাবা-মায়ের কাছ থেকে মাটির দিকে তাকিয়ে চলার। অন্তত তোমার চেয়ে খারাপ অবস্থায় কে আছে তাকে দেখো। তোমার চেয়ে কে ভালো আছে সেটা না তোমার চেয়ে খারাপ যারা আছে তাদের দিকে দেখো এবং সেটাই উপলব্ধি করো। কখনো নিজের দৈন্যতার কথা বলতেন না। কখনো কোন চাহিদা ছিল না। নিজে কোন দিন কিছু চাননি। সব সময় তিনি দিয়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণভবনে বা সরকারি বাসভবনে থাকেননি। না থাকার কারণটা হচ্ছে তিনি বলতেন আমার ছেলে মেয়েকে নিয়ে সরকারি বাসভবন বা শানশওকতে থাকবো না। তারা বিলাসী জীবনে অভ্যস্থ হোক সেটা আমি চাই না। বিলাসিতায় আমরা যেন গা না ভাসাই সেটার ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। তিনি সব সময় আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়েছেন। ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের নির্মম বুলেটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ সপরিবারে নিহত তিনি।

অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতার কর্মময় জীবনের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র পরিবেশন করা হয়। ভিডিও কনফারেন্সে প্রাধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তন এবং গোপালগঞ্জের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন। বঙ্গমাতার ৯০তম জন্মদিন উপলক্ষে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ১শ’ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ল্যাপটপ, দরিদ্র, অসহায় নারীদের মধ্যে ৩২শ’ সেলাই মেশিন এবং ১৩শ’ দরিদ্র নারীকে নগদ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২ হাজার টাকা করে প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী। গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তন প্রান্তে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি, মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তার উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া গোপালগঞ্জ প্রান্তে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Md Islam ৯ আগস্ট, ২০২০, ৪:০৭ এএম says : 0
বিনম্র শ্রদ্ধা
Total Reply(0)
নাজমুস শাকিব অভী ৯ আগস্ট, ২০২০, ৪:০৮ এএম says : 0
“ কোনকালে একা হয়নিকো জয়ী, পুরুষের তরবারী; প্রেরনা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়ালক্ষ্মী নারী।” শুভ জন্মদিন সতত প্রেরণাদায়ী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব
Total Reply(0)
Swapan Kumar Sarker ৯ আগস্ট, ২০২০, ৪:১১ এএম says : 1
চির সম্মানিত থাকবে। জয় বাংলা
Total Reply(0)
Hafez Md Shafikul Islam ৯ আগস্ট, ২০২০, ৪:১১ এএম says : 0
আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন.... আমিন
Total Reply(0)
Md Asadujjaman Asad ৯ আগস্ট, ২০২০, ৪:১২ এএম says : 0
বাংলার রত্নগর্ভা মহীয়সী নারী।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন