মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

আবাসন ব্যবসায়ী খুনের ঘটনায় মূলহোতা গ্রেফতার, রহস্য উদঘাটন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ আগস্ট, ২০২০, ৪:০৯ পিএম

রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকায় আসাবন ব্যবসায়ী আবুল খায়ের হত্যার ঘটনায় মূলহোতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আবুল খায়ের ছিলেন গ্রেফতারকৃত মো. মিলনের ভগ্নিপতি। আবুল খায়েরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সজিব বিল্ডার্সে ‘রড বাইন্ডার’ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন মিলন। মুলত তাদের দুজনের মধ্যে দেনা-পাওনার দেন দরবারের দ্বন্দ্বে রাগান্বিত হয়ে মিলন প্রথমে রড এবং পরে কাঠ দিয়ে মাথায় একের পর এক আঘাত করে নির্মমভাবে হত্য করে আবুল খায়েরকে।

রোববার (৯ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপির গুলশান বিভাগের ডিসি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গুলশান বিভাগের ডিসি সুদীপ কুমার চক্রবর্তী এসব তথ্য জানান।

ডিসি গুলশান বলেন, গত শুক্রবার সকালে রাজধানীর ভাটারা থানার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এম ব্লকে একটি নির্মাণাধীন ভবন থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সজীব বিল্ডার্সের মালিক আবুল খায়েরের (৫২) রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় ভিকটিম আবুল খায়েরের মেয়ে বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার ১৫ ঘণ্টার মধ্যে শনিবার (৮আগস্ট) তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে মূল অভিযুক্ত মো. মিলনকে (৪৪) গ্রেফতার করে ভাটারা থানা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে আসামী মিলন হত্যার দায় স্বীকার করেন এবং আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

তিনি আরো বলেন, গত ৬ আগস্ট বিকেল ৩টায় একটি ফোন পেয়ে বাসা থেকে বের হন আবুল খায়ের। প্রতিদিন সন্ধ্যার মধ্যে বাসায় ফিরলেও সেদিন ফেরেন নি। তার ফোনও বন্ধ ছিলো। পরে তার স্ত্রী রুপালী বেগম বসুন্ধরা এম ব্লকের একটি নির্মাণাধীন ভবনের স্বামীর বন্ধুদের নিয়ে যান। রাস্তায় তার স্বামীর মোটরসাইকেল দেখতে পান। পরে ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় উপুড় হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পরে পুলিশকে খবর দিলে মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

অভিযুক্ত মো. মিলন ও ভিকটিম আবুল খায়ের দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে একসঙ্গে কাজ করতেন। প্রথমে দুজনই ছিলেন নির্মাণ শ্রমিক। পরবর্তীতে তারা নির্মাণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তিল তিল করে গড়ে ওঠা এই নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এমডি হোন আবুল খায়ের। আবুল খায়েরের ভাগ্য ফিরলেও ফেরেনি মিলনের। তিনি এখনো নির্মাণ শ্রমিকই। মিলন মূলত: সজীব বিল্ডার্সেই রড বাইন্ডার হিসেবে কাজ করতেন। দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরিতে মিলন কাজ করে আসছিলেন। তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল। নির্মাণ ব্যবসা করেই তারা তাদের জীবিকা নির্বাহ করতেন। নবনির্মিত যে প্রজেক্টে কাজ চলছিল সেখানে ভিকটিম আবুল খায়ের ছিলেন মূল ঠিকাদার এবং সেখানে অভিযুক্ত মিলন ছিলেন প্রধান শ্রমিক।

জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত মিলন দাবি করেছেন, তিনি তার প্রাপ্য মজুরি হিসেবে প্রায় ৮ লাখ টাকা আবুল খায়ের কাছ থেকে পেতেন। মিলন ক্ষোভ ছিল ভগ্নিপতি আবুল খায়েরের উপর। ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে যে মুনাফা আসতো তার কোনো ভাগই ভগ্নিপতি আবুল খায়ের মিলনকে দিতেন না। একই প্রজেক্টে তিনি কাজ করেন তার ভগ্নিপতিও কাজ করেনম ভগ্নিপতি মুনাফা পাচ্ছেন কিন্তু তিনি পাচ্ছেন না। তাছাড়া শ্রমিক হিসেবেই মিলনকে ট্রিট করতো আবুল খায়ের। ডাকতে হতো বস বলে। এসব মানতে পারেন নি মিলন।

ডিসি বলেন, আসামী মিলন আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যার বিষয় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেন, মিলন প্রায় বোনের বাসায় যেতেন। বোন এবং বোন জামাই আবুল খায়ের এর মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। সেটি ভেবেই তিনি ভগ্নিপতি আবুল খায়েরকে ওই নির্মাণাধীন ভবনে কথা বলতে ডেকেছিলেন। কিন্তু সেখানে যাবার পর তাদের মধ্যে তুমুল বাকবিতণ্ডা হয়। এতে ক্ষেপে গিয়ে ওই ভবনে থাকা লোহার রড ও নির্মাণ সামগ্রী কাঠ দিয়ে আবুল খায়েরের মাথায় আঘাত করে।

ডিসি গুলশান সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, আমরা পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও বিভিন্ন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে নিশ্চিত হয়েছি নিহত আবুল খায়েরের স্ত্রীর বড় ভাই মো. মিলন একাই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। হত্যাকাণ্ডের পর তার চাঁদপুর চলে যাওয়া এবং চাঁদপুর থেকে ঢাকা আসা পুলিশের সাথে লুকোচুরিতে সন্দেহ হয়। গ্রেফতারের পর মিলন সব দায় স্বীকার করেন। আমরা খুব দ্রুতই এই মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করবো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন