শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভোগান্তির শেষ নেই

কুমিল্লা-নোয়াখালী মহাসড়ক চলেন ভিআইপি মন্ত্রীরা

কামাল আতাতুর্ক মিসেল | প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০২০, ১২:০০ এএম

কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের বেহাল দশা দীর্ঘদিন ধরেই। বর্ষাকালে এই দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়েন এ সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা। কুমিল্লার টমছম ব্রিজ থেকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ পর্যন্ত ৫৯ কিলোমিটার সড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে। ২ হাজার ১শ’ ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের জুনে। কিন্তু ভ‚মি জটিলতাসহ ধীরগতির কারণে কাজ শেষ না হওয়ায় এই সড়কে চলাচলকারীদের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। অথচ কাজ শুরুর আগে বিকল্প সড়ক রাখার কথা থাকলেও তা না রাখায় সড়কে নিয়মিত চলাচলকারীরা অতিষ্ট।

কাইয়ুম খান নামে এক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, নোয়াখালী যাওয়া মানে সাজা ভোগ করা। দেড় ঘণ্টার পথ যেতে এখন সময় লাগে ৪/৫ ঘণ্টা। নোয়াখালী-কুমিল্লা সড়কের বর্তমান অবস্থা নিয়ে এ বক্তব্য শুধু কাইয়ুম খানের নয়। এই মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকদেরও। নোয়াখালী-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের চার লেন প্রকল্পের কাজ মন্থরগতিতে চলায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ। মহাসড়কের প্রায় ৫৯ কিলোমিটার জুড়ে এই কাজ চলছে। সড়কের বিভিন্ন জায়গায় এক পাশের কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় যানবাহন চলাচল বিঘিœত হচ্ছে।

বেশি ভয়ঙ্কর অবস্থা কুমিল্লার বাগমারা বাজার, লাকসামের মিশ্রি, জংশন ও লাকসামের হাউজিং বাইপাস এলাকার ৫ কিলোমিটার সড়ক। এখানে ভাঙা সড়কে প্রতিনিয়ত যানবাহন আটকে যাচ্ছে। যানবাহন উল্টে যাচ্ছে। সড়কে একেকটি গর্তের গভীরতা তিন ফুটের বেশি। বৃষ্টির পানি জমে তা পুকুরে পরিণত হয়েছে। কাঁদা আর পানিতে থৈ-থৈ এই সড়ক। সড়কে গর্তের কারণে গাড়ি চলছে ধীরগতিতে। সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। লাকসামের যাত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, লাকসামের হাউজিং বাইপাস, মিশ্রি ও বাগমারা বাজার এলাকায় সড়কের বেহাল দশার কারণে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা না হলে এটি যেকোন সময় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।

ইকবাল বাহার নামের অপর এক যাত্রী বলেন, শীর্ষস্থানীয় চার মন্ত্রী সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির নির্বাচনী এলাকায় যেতে হলে এই সড়কের কিছুটা পথ অতিক্রম করতে হয়। অথচ এই জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটির এই দুরবস্থা কেন? স্থানীয় জনগণের প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের কাজে ধীর গতি কেন? বাস চালক শাকিল আহমেদ বলেন, নোয়াখালী-কুমিল্লা সড়ক থেকে গ্রামের রাস্তা আরো ভালো। এ সড়কের ওপর দিয়ে গাড়ি চালাতে গিয়ে যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে।

এদিকে গত বছরের শেষ দিকে ঢাকার এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘মহাসড়কের আয়ুষ্কাল, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে অর্থমন্ত্রী বলেন, রাস্তার খারাপ অবস্থার কারণে নিজের এলাকায় যেতে লজ্জা লাগে। সড়কের বেহাল অবস্থার জন্য লজ্জায় গাড়ির গ্লাস তুলে রাখতে হয়, নামানো যায় না। দ্রুতও যাওয়া যায় না, রাস্তা খারাপ। অর্থমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের একদিন পর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্মাণ কাজে ধুলা ওড়াটাই স্বাভাবিক। উনাকে (অর্থমন্ত্রী) বলেছি, ওই রাস্তাটি (কুমিল্লা-নোয়াখালী) ফোর লেন হচ্ছে। কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কে তো ধুলাবালি উড়বেই। তাই হয়তো উনি বাড়ি যেতে বারবার বিরক্ত হচ্ছেন।
আবুল কাশেম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, দুই প্রভাবশালী মন্ত্রীর এই রকম মন্তব্যের বিষয়টি বিগত দিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় এবং এ বিষয়ে দৈনিক ইনকিলাবসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকায় কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের ৪ লেন কাজে ধীরগতি নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পরও সড়কে কাজের গতি আগের মতোই।

সূত্রমতে, প্রকল্প শুরুর এক বছর পর লাকসাম থেকে লালমাই পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার এলাকার টেন্ডার হয় গত নভেম্বরে। লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজার বাইপাস ও লালমাই উপজেলার বাগমারা বাজার এলাকার বেহাল সড়কের কারণে যানজট লেগেই থাকে। এতে যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি বাড়ছে।

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, উন্নয়নের প্রধান শর্তই হচ্ছে সঠিক পরিকল্পনা, নিবিড় মনিটরিং ও নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। কাজে বিলম্ব মানেই অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়। অপ্রীতিকর হলেও সত্য, বাংলাদেশের উন্নয়ন কাজে সেটা সড়ক হোক, সেতু বা অবকাঠামো, বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়। ব্যয়ভার বাড়ে, জনগণের টাকার অপচয় হয়, শুধু সততা, আন্তরিকতা, দক্ষতা এবং যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাবে। সব নির্মাণকাজে সময় বৃদ্ধি, বারবার সময় বৃদ্ধি একটি রুটিন সংস্কৃতি। গত দু’তিন বছর ধরে এই সড়কের কাজে বিলম্ব। কেন বারবার সময় বৃদ্ধি? সড়ক ও সেতুমন্ত্রীর নিজ জেলার সড়কের নির্মাণকাজের যদি এই হাল হয়, তাহলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের পরিস্থিতি কেমন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তবে স্থানীয় বাসচালক ও যাত্রীরা কুমিল্লা-নোয়াখালী চার লেন মহাসড়ক নির্মাণে সড়কমন্ত্রীর নিবিড় মনিটরিং দাবি করেছেন।

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মো. আহাদ উল্লাহ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক ফোর লেনে উন্নীতকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। তাই খুব গুরুত্বসহকারে কাজের মান তদারকি করি। তবে করোনার কারণে দীর্ঘদিন সংস্কার কাজ করা যায়নি। এখন ৪ লেনের কাজ চলছে। স্তরে স্তরে বালু ও খোয়া ফেলে সড়কের পাশ বর্ধিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি ভাঙা অংশে ইট ফেলা হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Abdullah ১৩ আগস্ট, ২০২০, ১০:০৭ এএম says : 0
ওবায়দুল কাদের সাহেব এই রাস্তা ব্যবহার না করলে কি হবে? ওনার জন্য বিশেষ ট্রানজিট ফেনী তো আছেই। এবং আর ও বিশেষ ট্রানজিট ওপেন স্কাই উইথ হেলিকপ্টার। So nothing happen to mr.obaidul qader.only happen for laksham & noakhali s pepoles. Thanks for ভোগান্তি।
Total Reply(0)
joban ১৩ আগস্ট, ২০২০, ১১:৪৩ এএম says : 0
আসল বাংলাদেশ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন