বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নদী ভাঙনে দিশেহারা মানুষ

চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধে ফের ভাঙন : গাইবান্ধায় ভাঙছে তিস্তা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০২০, ১২:০২ এএম

বন্যার পানিতে ভাঙনের কবলে কেরানীগঞ্জের খারাকান্দি গ্রাম। সম্প্রতি তোলা ছবি -ইকবাল হাসান নান্টু


বন্যার পানি কমতে শুরু করায় তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন। মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙছে পদ্মা। চাঁদপুরে নদী ভাঙনে ফের হুমকির মুখে শহর রক্ষা বাঁধ। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তার ভাঙন দিশেহারা মানুষ। টাঙ্গাইলে ভাঙছে যমুনা। সিরাজগঞ্জেও যমুনার ভাঙন তীব্র হচ্ছে। বরিশালে মেঘনা, কীর্তনখোলা, আড়িয়াল খাঁ, সুগন্ধা ও সন্ধ্যা এই পাঁচ নদী ভাঙছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে এই পাঁচ নদী তীরবর্তী ১ হাজার ৩০০ মিটার এলাকা। টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপে শতকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন দ্বীপ প্রতিরক্ষার বেড়িবাঁধের কাজ শেষ না হতেই সাগরে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

চাঁদপুর থেকে বি এম হান্নান জানান, চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের পুরানবাজার হরিসভা এলাকায় ফের ভাঙন দেখা দিয়েছে। ২৫ মিটার এলাকায় দু’দিন আগে আবারো ফাটল দেখা দিয়েছে। মুহূর্তেই কিছু এলাকা মেঘনায় তলিয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে পুরো এলাকা। আতঙ্কে স্থানীয় বাসিন্দারা মালামাল সরিয়ে নিচ্ছে। গত বুধবার রাত ১১টায় পুরানবাজার হরিসভা এলাকায় ফাটল দেখা দেয়। এসময়ে শহর রক্ষা বাঁধের বেশকিছু সিসি বøক নদীতে তলিয়ে যায়। বিরাট এলাকাজুড়ে ফাটল দেখা দেয়ায় স্থানীয় লোকজনের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা জানান, মেঘনা নদীর পানি প্রবল বেগে প্রবাহিত হওয়ার পাশাপাশি সৃষ্ট ঘূর্ণিপাকে হরিসভাসহ পুরানবাজার ব্যবসায়িক এলাকা ঝুঁকিতে রয়েছে। শহর রক্ষা বাঁধের হরিসভা এলাকায় মাসখানেক আগে ভাঙন দেখা দেয়। ওই সময় ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড বালিভর্তি জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করে।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে মোশাররফ হোসেন বুলু জানান, তিস্তার ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মানুষ। গত এক সপ্তাহের ভাঙনে শতাধিক বসত বাড়িসহ হাজার হাজার হেক্টর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে আরও হাজার হাজার বসতবাড়ি, আবাদি জমি, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপুর্ণ স্থাপনা। ভয়াবহ বন্যার ধকল সেরে উঠতে না উঠতেই উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের কানিচরিতাবাড়ী, মাদারীপাড়া, পাড়াসাদুয়া ও বেলকা ইউনিয়নের বেলকা নবাবগঞ্জ ও কিশামত সদরে তিস্তার লাগামহীন ভাঙন চরবাসীকে নাকাল করে তুলেছে। প্রতিবছর নদী ভাঙনে উপজেলার আবাদি জমি কমে যাওয়ায় অসংখ্য মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। আতঙ্কিত করে তুলেছে তিস্তার দুইপাড়ের মানুষ। হরিপুরের কাশিম বাজার এলাকায় নদীভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিওব্যাগ ফেলছেন ধীরগতিতে।

বরিশালে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র হচ্ছে ভাঙন। মেঘনা, কীর্তনখোলা, আড়িয়াল খাঁ, সুগন্ধা ও সন্ধ্যা এই পাঁচ নদী প্রতিনিয়ত ভাঙছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে পাঁচ নদী তীরবর্তী ১ হাজার ৩০০ মিটার এলাকা।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, স¤প্রতি বৃষ্টি এবং পানিবৃদ্ধির প্রভাবে নদীর ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এরই মধ্যে জেলার ছয়টি উপজেলার ১২টি পয়েন্টে ১ হাজার ৩০০ মিটারজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি পয়েন্টে শুরু হয়েছে জরুরি প্রটেকশনের কাজ। বর্তমানে যেসব পয়েন্ট ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে সেসব এলাকায় ভাঙন রোধে কয়েকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

কক্সবাজার থেকে জাকের উল্লাহ চকোরী জানান, শাহপরীর দ্বীপে শতকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন দ্বীপ প্রতিরক্ষার বেড়িবাঁধের কাজ শেষ না হতেই সাগরে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বাঁধ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের দিকে হলেও কাজ শেষ করা অংশে দশটির অধিক স্থানে বøকগুলো ধসে পড়ছে। এতে নির্মাণাধীন এ বেড়িবাঁধের টেকসই ও স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাঁধ নির্মাণকাজে তড়িগড়ির অভিযোগ দ্বীপের বাসিন্দাদের। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দাবি, ডিজাইনে কিছুটা ত্রæটি থাকার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শাহপরীর দ্বীপে বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন দ্বীপ রক্ষায় নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধের সাগর অংশে দুই স্তরে বøক বসানো শেষ করেছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের আগে দ্বীপের দক্ষিণপাড়া এলাকার দিকে বেড়িবাঁধের শেষাংশে বøক বসানোর কাজগুলো খুব তাড়াহুড়া করা হয়েছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল করিম বলেন, বেড়িবাঁধ নির্মাণে প্রথম দিকের কাজগুলো খুব টেকসইভাবে করতে দেখেছি। কিন্তু দক্ষিণপাড়া অংশে যেখানে সাগরের আগ্রাসন বেশি সেখানে এসে কাজে তাড়াহুড়া দেখা গেছে। প্রতিরক্ষা বøক বসানোর আগে বিছানো বালু পর্যন্ত গাড়ি দিয়ে ভালোভাবে চেপে দেয়নি।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, শাহপরীর দ্বীপের দক্ষিণাংশে নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধে যে সমস্যা দেখা দিয়েছে সেটি আসলে ডিজাইনে ত্রæটির জন্য হয়েছে। আমরা সেটা ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি, ডিজাইন রিভিউর ব্যাপারেও আমাদের মতামত ব্যক্ত করেছি। আশা করি খুব দ্রæত সমাধান হবে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসটিএ গ্রæপের প্রতিনিধি উত্তম কুমার শাখারী (ননী) বলেন, নৌবাহিনীর তত্ত¡াবধানে এবং পাউবোর নিয়মিত তদারকিতে আমাদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাঁধ নির্মাণ কাজ করছে। সেখানে কোনো ধরনের অনিয়মের সুযোগ নেই। তবে জোয়ারে বøক সরে যাক বা থাক, শেষ পর্যন্ত আমরা একটি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ করব।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন