দেশের খাদ্য ভান্ডার হিসাবে পরিচিত উত্তরাঞ্চলে আমন, আউস, বোরোর বাম্পার ফলনের পরও চালের বাজার চড়া। প্রত্যাশিত দামে কৃষক তার ঘাম ঝরানো ফসল বিক্রি করতে না পারলেও এখন সেই চাল কিনতে হচ্ছে বেশী দামে। ফসল ওঠার সময় ফড়িয়া আর মিলাররা কম দামে ধান কিনে মজুদ করে এখন বাজারে সঙ্কট সৃষ্টি করে দাম বাড়াচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে চাল উৎপাদনকারী এলাকা নওগাঁ ও রাজশাহীতে গত তিনদিনে চালের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি তিন থেকে চার টাকা। মিনিকেট, আটাশ, স্বর্ণা জাতের চালের দাম বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন ঈদের ছুটির কারণে চাল উৎপাদন কম হওয়ায় সরবরাহে টান পড়েছে। তাই দাম একটু বেড়েছে। চালের মোকাম গুলোর সর্বত্র দেখা যাচ্ছে দাম বাড়ানোর প্রবণতা।
রাজশাহী ও রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উত্তরের ষোল জেলায় মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ২৭ লাখ ১৬ হাজার ৩৫ হেক্টর। এরমধ্যে রাজশাহী বিভাগে ১৪ লাখ ২৮ হাজার ৩৯০ হেক্টর। আর রংপুর বিভাগে ১২ লাখ ৯৭ হাজার ৯৬৪ হেক্টর। চলতি সালে এসব জমিতে আমন, আউস ও বোরোর উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ২২ লাখ ৪৫ হাজার ২৪৫ মে. টন।
উত্তরাঞ্চলের জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন কোটি। এ অঞ্চলের মানুষের প্রতি বছর খাদ্য চাহিদা ৫৮ লাখ মে. টনের কিছু বেশী। মোট উৎপাদন থেকে চাহিদা বাদ দিলে দেখা যায় এক বছরে এ অঞ্চলে খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকার কথা পঞ্চাশ লাখ মে. টনের বেশী। যা এখানকার চাহিদা মেটানোর পর দেশের বিভিন্ন স্থানে সররাহ হয়। সে হিসাবে উৎপাদিত স্থানে স্বাভাবিক ভাবে সারা বছর চালের দাম কম থাকার কথা।
কারণ হিসাবে উৎপাদকরা দায়ী করেন মজুদদার ও মিলারদের। উত্তরাঞ্চলের যত্রতত্র গড়ে ওঠা বিশাল বিশাল অটোমেটিক রাইস মিল গুলো সব ধান গিলে খায়। তারপর কৃষকের ঘরশূন্য হলে ধীরে ধীরে বাজারে ছাড়ে। নানা অজুহাতে দাম বাড়ায়। এদের লাগাম টানার যেন থেকেও কেউ নেই।
করোনার মধ্যে জীবন বাজি রেখেছে কৃষক একের পর এক আবাদ করে চলেছে। বাম্পার ফলন ফলাচ্ছে। অথচ তারা থাকছে উপেক্ষিত। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের মাঠ পর্যায়ে কর্মকার্তারা বলছেন কৃষকরা এখন আবাদে অনেক সচেতন। উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার সরকারী সহায়তা তাদের ভাল ফলন এনে দিচ্ছে। কিন্তু বিক্রির সময় কৃষকের লাভের গুড় পিঁপড়ে খাচ্ছে। ধান চালের সুষ্ঠ বাজার ব্যবস্থাপনা এখন পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি। ফলে লাগাম টানা যায়নি মিলার আর ফড়িয়াদের। এ কারণে চালের বাজার তাদের কাছে জিম্মি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন