শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঢাকায় বেড়েছে কর্মব্যস্ততা

স্বাস্থ্যবিধি মানার বাধ্যবাধকতা কোথাও নেই মাস্ক ব্যবহারে উদাসীনতা জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপদ : ডা. মুশতাক হোসেন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০২০, ১২:০০ এএম

রাজধানী ঢাকার মানুষকে ঘর থেকে বের হলেই মাস্কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অথচ বেশিরভাগ মানুষ মাস্ক পড়েন না। মহানগরীর মানুষের জীবনযাত্রার চেহারা দেখলে বোঝার উপায় নেই যে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২৭৬৬ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময় মারা গেছেন আরো ৩৪ জন মানুষ। এই মৃতের বেশিরভাগই হয়েছে ঢাকা শহরেই। একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া রাজধানীসহ সারা দেশের হাটবাজার, অফিস আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, দোকানপাট, রাস্তাঘাট, লঞ্চ-স্টিমার, ট্রেনে মানুষের সমাগম ফিরেছে আগের চেহারায়। কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই; স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষকে বাধ্য করারও কেউ নেই।
জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, সংক্রমণ পরিস্থিতির এই সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জরুরি প্রয়োজনীয় কাজের পরিসর আরও বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু সবকিছু উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হলে বিপদের ঝুঁকি আরও বাড়বে। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানতে হবে। এগুলো ঠিকমতো মানা হচ্ছে কি না, তা অফিসের ভেতরে-বাইরে থেকে তদারক করতে হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, প্রথমত সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখীর এই সময়ে সবকিছু খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জনস্বাস্থ্যের বিপদের ঝুঁকি আরও বাড়বে। আরও সংক্রমণের আশঙ্কা আছে। এখন সরকার আত্মসামাজিক ও প্রশাসনিক কারণে খুলছে কি না, সেটি বলা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়গুলো ঠিক করতে হবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি না, সেটি অফিসের ভেতরে এবং বাইরে থেকে তদারক করা দরকার।
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন, আইসোলেশন, কোয়ারেন্টিন এবং বিভিন্ন সেক্টর বন্ধ রাখায় রাজধানীতে স্থবির হয়ে গিয়েছিল জীবনযাত্রা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া সবকিছু খুলে দেয়ায় মানুষের জীবনযাত্রা এখন পুরোটাই ফিরেছে আগের জায়গায়। শুরু হয়েছে রাজধানীর ফুটপাতজুড়ে হকারদের রমরমা বাণিজ্য। রাজপথে এখন নিয়মিত যানজট। হাটবাজার, মার্কেট, বিপণিবিতান, বাস, লঞ্চ সর্বত্রই প্রচন্ড ভিড়। আগের মতোই সকাল থেকে বাসস্ট্যান্ডে শুরু হয় অফিসগামী মানুষের দীর্ঘ লাইন, ভিড় এবং চিরচেনা গাড়িতে ওঠার ঠেলাঠেলি।
সচিবালয়সহ সরকারি অফিস আদালতে ‘ঘরে থেকে অফিস’ প্রথা তুলে দিয়ে অসুস্থ ও সন্তানসম্ভাবা স্টাফদের বাদ দিয়ে শতভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত আগের নিয়মে অফিস করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১২ আগস্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ভার্চুয়াল কিংবা শারীরিক উপস্থিতিতে মামলার শুনানিতে বিচারপতি এবং আইনজীবীরা বসতে শুরু করেছেন। বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা করপোরেট হাউসগুলো এখন চলছে পুরনো নিয়মে। সেখানেও শতভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। পাড়া-মহল্লায় চায়ের দোকানগুলোয় মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে আড্ডা। আগের মতোই স্টেশনগুলোর চায়ের দোকান, হোটেল চলে সারা রাত।
বাস, লঞ্চ, স্টিমারসহ গণপরিবহন চালানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব মানার শর্ত থাকলেও এখন তা পুরোটাই হয়ে গেছে ম্লান। ৬০ শতাংশ বাড়তি ভাড়া আদায় করার কথা বলা হলেও দ্বিগুণ তিনগুণ ভাড়া আদায় করলেও গণপরিবহনে সামাজিক দূরত্ব বলে কিছু মানা হচ্ছে না। বাসে প্রতি দুই সিটে একজন যাত্রী পরিবহনের বিধান করে দেওয়া হলেও এখন প্রতি দুই সিটে দুইজনসহ দাঁড়িয়েও যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যাত্রীরা অসহায়। মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধির কোনও শর্তই। বাসে, লঞ্চে কোনও গণপরিবহনেই রাখা হয় না হ্যান্ড সেনিটাইজার। রেলের অবস্থাও সেইদিকে যাচ্ছে।
ঈদের ছুটি শেষে অফিস খোলার পর নিস্তব্ধতা কেটে সরকারের প্রধান প্রশাসনিক দফতর বাংলাদেশ সচিবালয়ের গেইটে এখন দর্শনার্থীদের ভিড় আগের মতো। দর্শনার্থী পাস ইস্যু শুরু না হলেও দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সচিবালয়ের ভেতরে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা সংকুলান হয় না। আগের মতোই বিভিন্ন তদবির নিয়ে লোকজনের আগমন ঘটছে।
করোনাকালে রাজধানীর থানাগুলোয় ভিড় ছিলও না বললেই চলে। এখন পাল্টে গেছে সেখানকার চিত্র। রাত বাড়লে জমে ওঠে থানার কর্মতৎপরতা। নেই কোনও ভয়, নেই শঙ্কা। করোনা আগমনের পর থেকে স্থবির হতে থাকা জীবনযাত্রা কিছুটা ঘুড়িয়ে দাঁড় করানোর চেষ্টা করলেও এখন সরাসরি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে সবাই। মানুষের জীবন ও অর্থনীতিকে অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছে এই করোনা
রাজধানীর মহল্লায় দোকানপাট বা কাঁচাবাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকান পাটগুলো এখন পুরোপুরি খুলেছে। রাত ১০টার মধ্যে এখন রাজধানীর কোনও মহল্লায়ই এখন আর অন্ধকার নেমে আসে না। জন্মদিন বা বিয়েসাদির আয়োজন এখনও শুরু না হওয়ায় পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে কমিউনিটি সেন্টার ভিত্তিক ব্যবসা।
রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোয় ভিড় বাড়তে শুরু করেছে অনেক আগে থেকেই। কাঁচাবাজারের মাছ-সবজির অনেক দোকান এবং স্টল পুরোটাই পূর্ণ হয়ে গেছে। সারাদেশে লকডাউন চলাকালে যারা ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে গ্রামে চলে গেছেন, তারা আবার রাজধানীতে ফিরে এসেছেন। অবশ্য এদের অনেকেই পেশা পরিবর্তন করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সরকারি অফিস যথারীতি আগের নিয়মে চলা শুরু হয়েছে। অসুস্থ ও সন্তানসম্ভাব কর্মকর্তা-কর্মচারী বাদ দিয়ে সবাইকে অফিসে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন