শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

প্রবাসীদের বিদেশ গমনে সহযোগিতা করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০২০, ১২:০২ এএম

দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নের চাকা গতিশীল রাখতে প্রবাসে কর্মরত শ্রমিকদের অনন্য অবদান রয়েছে। এই করোনাকালের অর্থনৈতিক মন্দায়ও প্রায় এককোটি শ্রমিকের পাঠানো রেমিটেন্স দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর কারণে প্রায় ৬ মাস ধরে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী শ্রমিকদের ভাবিষ্যত নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ভর করেছিল। ইতিমধ্যে সে অনিশ্চয়তা অনেকটা কেটে গেলেও কোথাও কোথাও প্রবাসী শ্রমিকরা অহেতুক বিড়ম্বনা ও হয়রানির শিকার হচ্ছে। দেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষায় গাফিলতি, করোনা টেস্ট জালিয়াতি এবং বাংলাদেশ ফেরত প্রবাসীদের মধ্যে করোনা পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়ার কারণে ইতালিসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে বাংলাদেশীরা অনাকাক্সিক্ষত নিষেধাজ্ঞা ও বিড়ম্বনার সম্মুখীন হয়েছেন। তবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অবস্থানরত লাখ লাখ বাংলাদেশী নাগরিক করোনাকালেও এসব দেশের সেবা ও উন্নয়ন খাতে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। সেখানে অনেক বাংলাদেশী করোনায় মৃত্যুবরণ করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের ভ্রাতৃপ্রতিম দেশগুলোতে বাংলাদেশীদের নানাবিধ সমস্যা ও সংকটেরও যেন শেষ নেই। বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে সংযুক্ত আরব আমিরাত গিয়ে বিমান বন্দর থেকে পরবর্তী ফ্লাইটে ফেরত পাঠানো হয় ৬৮ জন বাংলাদেশী বা তার বেশি শ্রমিককে। এরা বৈধ কাগজপত্র নিয়ে সেখানে গেলেও কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সিকে আমিরাত কর্তৃপক্ষ নিষিদ্ধ ও কালো তালিকাভুক্ত করার কারণে সেসব এজেন্সির মাধ্যমে যাওয়া শ্রমিকদের প্রবেশে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে ফেরত আসতে হয়েছে।

দেশে উপযুক্ত কর্মসংস্থান না থাকায় দরিদ্র মানুষের স্বচ্ছলতার স্বপ্ন পূরণের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে বৈদেশিক কর্মসংস্থান। সাধারণত গ্রামের নি¤œমধ্যবিত্ত মানুষ জমি জিরাত বিক্রি করে এবং আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে ধারদেনা করে বিদেশে যাওয়ার খরচ যোগাড় করে। এভাবে লাখ লাখ টাকায় রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশ যাওয়ার পর অনাকাক্সিক্ষতভাবে প্রত্যাগমনের শিকার হওয়ার কারণে তাদের ভাগ্য বিপর্যয় ঘটে। গত সোমবার আবুধাবি থেকে ফেরত আসা ৬৮জন এমন ভাগ্য বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন। তারা যথাযথ সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন। তারা জানিয়েছেন, আবুধাবির যে এজেন্সি ও কোম্পানির মাধ্যমে তারা দেশটিতে গেছেন, সম্প্রতি আবুধাবি সরকার সেসব এজেন্সির অনুমোদন বাতিল করে দিয়েছে। তাই তাদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। কোনো এজেন্সি সংশ্লিষ্ট দেশে নিষেধাজ্ঞা বা কালো তালিকাভুক্ত কিনা সাধারণ বিদেশগামী শ্রমিকের তা জানা থাকার কথা নয়। তবে বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ বিমানের সংশ্লিষ্ট শাখা এ বিষয়ে আগে থেকে যাচাই করে প্রবাসীদের যাত্রা নিরাপদ ও নিশ্চিত করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারত। এ কাজটি তারা করেনি। এর দায়-দায়িত্ব তারা এড়াতে পারে না। এতে বিদেশে শ্রমবাজারের ওপর এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে। এমনিতেই বিদেশে আমাদের শ্রম বাজার সংকুচিত হয়ে আসছে। লাখ লাখ শ্রমিক ফিরছে। এ অবস্থায় যাদের যাওয়ার সুযোগ রয়েছে, তারা যদি এমন অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির মুখে পড়েন, তবে তা দু:খজনক। ফেরত আসা প্রবাসী শ্রমিকরা শাহজালাল বিমান বন্দরে বিক্ষোভ করেছে বলে জানা যায়। তারা কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে বাড়ি ফিরে গেলেও তাদের সমস্যার সমাধানে যথাশীঘ্র সরকার কার্যকর উদ্যোগ নেবেন, এটাই সকলের প্রত্যাশা।

করোনাকালের স্থবিরতা ও নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার মধ্য দিয়ে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আবার গতিশীল হয়ে উঠতে শুরু করেছে। দেশে এসে করোনার কারণে আটকে পড়া হাজার হাজার প্রবাসী শ্রমিক এখন নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন। ইতিমধ্যে ছুটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় অনেকে সময়মত কাজে যোগ দিতে না পারলে কাজ হারানোর আশঙ্কা করছেন। এহেন বাস্তবতায় বিমান টিকিটের সংকট ও হাহাকার চলছে বলে গতকাল প্রকাশিত একটি দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেও বিমানের টিকিট না পাওয়ায় প্রবাসী শ্রমিকরা চরম অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগজনক সময় পার করছেন। এ প্রেক্ষিতে, বিমান কর্তৃপক্ষের উচিৎ যেসব প্রবাসীর সঠিক কাগজপত্র রয়েছে, তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে টিকেটের ব্যবস্থা করা। প্রয়োজনে বাড়তি বিমান চালু করে তাদের বিদেশে যেতে সহায়তা করতে হবে। পাশাপাশি আবুধাবি বিমানবন্দর থেকে ফেরত আসা শ্রমিকদের বাস্তবতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। বিদেশ যাওয়ার আগেই সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সি এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিক রয়েছে কিনা, তা যাচাই করে নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া আবশ্যক। সেই সাথে সংশ্লিষ্ট দেশের ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত আইন, নীতিমালা এবং সাধারণ নিয়ম-কানুন ও শৃঙ্খলা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য, নির্দেশনা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আগে থেকেই বিদেশগামীদের অবহিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিদেশে শ্রমবাজার সৃষ্টি এবং তা ধরে রাখা সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করে। যেহেতু বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আমাদের অর্থনীতির অন্যতম মূল স্তম্ভ, তাই এ খাতটিকে ধরে রাখা এবং সম্প্রসারণে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। করোনার মন্দাবস্থার মধ্যেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড করেছে এবং তার প্রবাহ ঠিক রয়েছে। ফলে এ প্রবাহ ধরে রাখতে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের প্রধান দেশগুলোর সাথে সরকারি পর্যায়ে কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে হবে। এতে শ্রমবাজার যেমন সম্প্রসারিত হবে, তেমনি দেশে শ্রমিক ফেরা এবং বিদেশে হয়রানি থেকে মুক্ত থাকা যাবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ভূমিকা নিতে হবে। এই সময়ে যারা বিদেশে কর্মস্থলে যোগ দিতে যাবেন, তাদের জ্ঞাতার্থে বিমানবন্দরে সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেয়া বাঞ্চনীয়। তাদের কর্মস্থল ঠিক আছে কিনা কিংবা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যথাযথভাবে হালনাগাদ করা রয়েছে কিনা, এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। বিমানের টিকিট ও ফ্লাইট সংকটসহ করোনা পরবর্তি বাস্তবতায় বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতে সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলায় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এখন থেকেই বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন