শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

গঙ্গা-পদ্মায় পানি বৃদ্ধি

ব্রহ্মপুত্র-যমুনা স্থিতিশীল : চট্টগ্রাম অঞ্চলে বন্যা-পানিবদ্ধতা-পাহাড়ধসের সতর্কতা

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০২০, ১২:০২ এএম

প্রধান নদ-নদীসমূহের উজানের অববাহিকায় ভারত, তিব্বতসহ চীন, নেপাল, হিমালয় পাদদেশে সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। দেশের অভ্যন্তরেও হচ্ছে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ, কোথাও কোথাও অতিবৃষ্টি। এরফলে প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি হ্রাস-বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
অতিবর্ষণে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাহাড়ি ঢল-বান ও খরস্রোতা নদ-নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে করে এ পর্যন্ত বন্যামুক্ত চট্টগ্রাম অঞ্চলে বন্যা, পানিবদ্ধতা এবং পাহাড়ধসের আশঙ্কাও রয়েছে। দেশের ৩৩টি বন্যা কবলিত জেলায় বানের পানি না কমতেই বিভিন্ন স্থানে বন্যা অবনতির মুখে। সেই সঙ্গে অব্যাহত রয়েছে সর্বনাশা নদীভাঙন। করোনাকালে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা পরিস্থিতিতে খাদ্য, বসতঘর ও চিকিৎসার সঙ্কটে বন্যার্তদের দুর্ভোগ সীমাহীন।

গতকাল মঙ্গলবার পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের পানি সকাল পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। আবার বিকেল থেকে স্থিতিশীল হয়ে আসে। যমুনা নদ বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনার অপর ৫ পয়েন্টে পানি আরও কিছুটা বেড়ে গিয়ে স্থানভেদে বিপদসীমার ৬ থেকে ২৭ সে.মি. নিচে রয়েছে।

ব্রহ্মপুত্র নদে পানির প্রবাহ স্থিতিশীল রয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলার নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৯ এবং চিলমারীতে ৪৩ সে.মি. নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীতে গতকাল ধীরে ধীরে পানি বৃদ্ধি পায়। গতকাল বিকেল পর্যন্ত গঙ্গা নদীর সবক’টি পয়েন্টে পানির সমতল ধীরগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। যদিও বিপদসীমার বেশ নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মার গোয়ালন্দে পানি আরও কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৪ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মা ভাগ্যকুল, মাওয়া ও সুরেশ^র পয়েন্টে পানি কিছুটা কমেছে। বিপদসীমার নীচে রয়েছে।
বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র পূর্বাভাসে জানায়, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চল এবং দক্ষিণ-মধ্য উপক‚লীয় অঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। এরফলে এ অঞ্চলের নদ-নদীসমূহের পানির সমতল দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার কতিপয় স্থানে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে পাহাড়ধস বা ভ‚মিধসের আশঙ্কা রয়েছে।

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আপার মেঘনা অববাহিকায় বৃহত্তর সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারাসহ নদ-নদীগুলোতে পানির সমতল হ্রাসের দিকে রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকায় গুড়, আত্রাই, ধলেশ^রী এবং ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও এর আশপাশের নদীসমূহের পানি কিছুটা হ্রাস-বৃদ্ধি ও স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। গুড়, আত্রাই ও ধলেশ^রী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। বানের পানির চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে মধ্যাঞ্চল থেকে ভাটি অবধি। ভাটিতে চাঁদপুরে মেঘনা নদী বিপদসীমার ৭ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ এবং ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের পৃথক পূর্বাভাসে জানা গেছে, সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকার উজানভাগে উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, অরুণাচল, সিকিম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরামে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় আসামের চেরাপুঞ্জিতে ১১৫ মিলিমিটার অতিভারী বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়। এরফলে প্রধান নদ-নদীসমূহের উজান থেকে ঢল আসা অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের অনেক জেলায় মাঝারি থেকে ভারী ও অতিভারী বর্ষণের কারণেও নদ-নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দেশের নদ-নদীগুলোর ১০১টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৫৩ পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৪৪টিতে হ্রাস পায়। অপরিবর্তিত থাকে ৪টিতে। ৬টি নদ-নদী ৬টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীসমূহের পানির সমতল স্থিতিশীল রয়েছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় হ্রাস পেতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীসমূহের পানির সমতল স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন