বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

হুজি জেএমবি শিবিরই আইএস সাজার চেষ্টা করছে -স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কক্সবাজার অফিস : দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের স্থান নেই মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এমপি। তিনি বলেন, দেশের সকল জঙ্গিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তার মতে, এ পর্যন্ত যেসব জঙ্গি ধরা পড়েছে এদের একজনও বিদেশী নাগরিক নয়। তারা সবাই সমাজের প্রতিষ্ঠিত ও শিক্ষিত লোক। তবে, প্রশ্ন এরা কারা? তিনি বলেন, সেই স্বাধীনতা বিরোধীচক্র দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে, ভিন্ন কৌশলে এগুচ্ছে। এদের কঠোর হাতে দমন করা হবে।
গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টায় কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন শেষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কথা বলেন।
জঙ্গিরা হরকাতুল জিহাদ (হুজি), জেএমবি ও শিবির মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা মানুষের ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছিল, ৬৩ জেলায় এক সাথে বোমা ফাটিয়েছিল, তারাই সোস্যাল মিডিয়ায় নিজেদের ‘আইএস’ নামে আত্মপ্রকাশ করতে চেয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
মন্ত্রী জঙ্গিদের প্রশ্ন করে বলেন, বেহেস্ত কি এত সোজা যে, এমনেই সেখানে ঢুকে যাবেন? মানুষ মেরে বেহেস্ত আশা করবেন না। মন্ত্রীর ভাষ্য মতে, জঙ্গিরা বেহেস্তের আশায় এসব করছে। অথচ তাদের ঠিকানা জাহান্নামেও হবে না। সন্ত্রাস ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আজ দেশের মানুষ সোচ্চার। আলেম সমাজ থেকে শুরু করে দেশের সব জায়গায় জঙ্গি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করছে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমজনতা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ বিরোধী কমিটি হচ্ছে। মানুষ যেখানে জেগেছে, সেখানে জঙ্গিদের আর কোন ঠাঁই নেই।
সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধনকালে মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীদের ভিন্নরূপ হচ্ছে জঙ্গিবাদ। জঙ্গিবাদসহ এর উস্কানীদাতা, সহযোগিতাকারীদের সমূলে উৎপাটন করা হবে। কয়েকজন ব্যক্তির জন্য মুসলমানদের কপালে যে কালিমা লেগেছে তা সহ্য করার মতো নয়। ইসলামের নামে যখন জঙ্গিবাদ হয়, তখন মাথা হেট হয়ে যায়। এসব জঙ্গিদের প্রতিরোধ করতে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে অর্থযোগান দিয়ে সহযোগিতা করছে তাদের আমরা গোয়েন্দা বিভাগের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে চিহ্নিত করছি। খুব দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। আর যারা ইতিমধ্যে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে ফিরে আসতে চাইছে, আমরা তাদের সাধারণ ক্ষমা করবো। আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে মুক্ত দেশ চাই।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ভারতসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশে জঙ্গিবাদ দমনে আমাদের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ-ভারত এক যোগে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সন্তানদের সময় দিন। সন্তানেরা কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, তার খোঁজখবর নিন। সন্তানেরা জঙ্গিবাদে চলে গেলে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করুন।
আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, শেখ হাসিনা বিশ্বের নেত্রী। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কোন কিছুই তাকে দমাতে পারবেনা। আমরা সবাইকে ভালোবাসা দিয়ে শান্তিতে রাখার পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই। বাংলাদেশে আর গুলশান ট্রাজেডি দেখতে চাই না।
ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করে সরকারের প্রভাবশালী এই মন্ত্রী বলেন, পাসপোর্টসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বর্তমান সরকার কাজ করছে। এ পর্যন্ত ১ কোটি ৪৫ লাখ ডিজিটাল পাসপোর্ট জনগণের হাতে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। দেশের ৬৫ জেলার মধ্যে ৬৬টি পাসপোর্ট অফিস স্থাপন করা হয়েছে। এখন মানুষ খুব সহজেই ডিজিটাল পাসপোর্ট পাচ্ছে।
তিনি বলেন, বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ই-পাসপোর্ট তৈরীর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনলাইনেই পাসপোর্টর সব তথ্য যোগ করা হচ্ছে। আবেদন প্রক্রিয়াও অনলাইনে হচ্ছে। এ সময় মন্ত্রী পাসপোর্ট করতে এসে কোন মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি কড়া নির্দেশ দেন।
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রেজওয়ানের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে সকাল পৌনে এগারটার দিকে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উখিয়া-টেকনাফের সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি বলেন, সরকার মহান উদ্দেশ্যে পাসপোর্ট অফিস স্থান করেছে। কিন্তু কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীর কারণে সরকারের বদনাম হচ্ছে। মানুষ হয়রানীর শিকার হচ্ছে। এ বিষয়ে মন্ত্রী, পাসপোর্ট অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, কোরআনের কোথাও জঙ্গিবাদের স্থান নেই। জঙ্গিবাদীরা কোরআনের অপব্যাখ্যা করে ইসলামকে ধ্বংস করছে। জঙ্গিদের কোন ধর্ম নেই। এ সময় তিনি মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিজ এলাকার সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের এমপি আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, ব্যর্থ-তলাবিহীন ঝুড়ির এই দেশ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা বাঁধাগ্রস্ত করতে দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্র চলছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এ সময় তিনি মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে মাতারবাড়ী ও সোনাদিয়া এলাকায় জলদস্যুতা রোধে ‘নৌপুলিশ ক্যাম্প’ স্থাপনের দাবী তুলেন। একই সাথে দ্বীপের প্রয়োজনে ‘ফায়ার সার্ভিস স্টেশন’ স্থাপনের প্রয়োজনের কথাও বলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন কক্সবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা সোলাইমান কাসেমী।
এতে উপস্থিত ছিলেন, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমদ ভুঁইয়া, জেলা পরিষদের প্রশাসক মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেন, পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান প্রমুখ।
তিন তলা বিশিষ্ট (প্রায় ৯৯৩৭ বর্গ ফুট) পাসপোর্ট অফিস ভবন নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেন বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর এবং গণপূর্ত অধিদপ্তর। সরকার ১৯টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নির্মাণ প্রকল্পের কাজ অনুমোদন দেয়া হয় ২০১২ সালের জানুয়ারী হতে।
২০১৫ সালে শুরু হয় কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবন নির্মাণ কাজ। গত মার্চ মাসে এটির পুরোপুরি নির্মাণ কাজ স¤পন্ন করেন গণপূর্ত বিভাগ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের অধীনে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ২০০৯ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জেলার অধিবাসীদের জন্য হাতে লেখা পাসপোর্ট প্রদানের মাধ্যমে কাযর্ক্রম শুরু করা হয়। পরবর্তীতে ২০১১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ‘মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ও ভিসা প্রকল্প’ এর আওতাভুক্ত করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন