বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ক্ষমতায় টিকে থাকতে অপরাজনীতিতে নেমেছে সরকার

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০২০, ১২:০০ এএম

ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার ইতিহাস বিকৃত করে অপরাজনীতিতে নেমেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তমকে বিতর্কিত করার হীন উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা অপপ্রচারের একটি সংগঠিত ঘৃণ্য অপততপরতা জাতি গভীর ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য করছে। সরকার প্রধান ১৫ আগস্ট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ঐতিহাসিক ভ‚মিকাকে বিকৃত করার মাধ্যমে সে অপচেষ্টা নতুনভাবে শুরু করা হলো।কারণ এখন আর সরকারের কোনো রাজনীতি নেই। তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অপরাজনীতিতে নেমেছে। ক্ষমতাসীনরা এই মিথ্যাচার করে ইতিহাস বিকৃত করার প্রক্রিয়ায় জিয়াউর রহমানকে খাটো করার অপচেষ্টয় লিপ্ত হয়েছে। জিয়াউর রহমানকে নিয়ে এই ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান তিনি।

১৫ আগস্টের ঘটনার সাথে জিয়াউর রহমানকে জড়িত করে সরকার প্রধানের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় গতকাল মঙ্গলবার বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা যে গণতান্ত্রিক চেতনা, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করেছিলাম, গত এক দশকের অধিককাল ধরে বর্তমান সরকার সেই চেতনাকে হিমাগারে পাঠিয়েছে। সেই চেতনাকে বিনষ্ট করে দিয়ে তারা একটি ফ্যাসিবাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে। ক্ষমতাসীনরা এই মিথ্যাচার করে ইতিহাস বিকৃত করার প্রক্রিয়ায় জিয়াউর রহমানকে খাটো করার অপচেষ্টয় লিপ্ত হয়েছে। শহীদ জিয়াউর রহমানকে নিয়ে এহেন মিথ্যাচার ও তার চরিত্র হননের অপপ্রয়াসে আপামর জনগণ দারুনভাবে ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। শহীদ জিয়া ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কোটি কোটি ভক্ত ও অনুরক্তরা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সংগঠিত এই ষড়যন্ত্রকে শুধু ঘৃণাভরে প্রত্যাখানই করছে না। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির মাধ্যমে এই ষড়যন্ত্রকে ভেঙে চুরমার করে দেয়ার দৃপ্ত শপথ ঘোষণা করছে।

১৫ আগস্টের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, জিয়াউর রহমানকে ১৫ আগস্ট হত্যা মামলার সাথে সম্পৃক্ত করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের কারা হত্যা করেছে সেটা শেখ হাসিনার দায়ের করা মামলায় ইতোমধ্যে আদালতে নির্ধারিত হয়ে গেছে এবং এই হত্যার জন্য কোথাও জিয়াউর রহমানকে দোষারোপ করার মতো কিছুই পাওয়া যায়নি। ওই মামলায় জিয়াউর রহমান কিংবা তার ঘনিষ্ঠ কাউকে আসামীও করা হয়নি। কিন্তু তাতে আওয়ামী লীগের মন ভরছে না। এখন তারা জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পৃক্ত করার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।

মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির ভিডিও প্রচার উদ্দেশ্যমূলক উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১৫ আগস্ট হত্যা মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত এক আসামীকে (মেজর (অব) মাজেদ) দিয়ে বন্দি অবস্থায় দেশের আইন, আদালত, শাসনব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে সরকাররের মুসাবিদায় মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ধারণকৃত ভিডিও উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারে বাধ্য করা এবং একই সাথে বেতনভুক্ত সাইবার ফোর্স নিয়োগ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করা হয়েছে। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ১৫ আগস্ট হত্যার সকল আসামীদেরকে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করা এবং রায় কার্যকর করার পর্ব প্রায় সম্পন্ন হতে চলেছে। এই অবস্থায় আইনিভাবে এই ধরনের বক্তব্যের কোনো সাক্ষ্যমূল্য নাই। এই পদক্ষেপ বরঞ্চ সংঘটিত বিচার প্রক্রিয়া ও রায়কে নতুনভাবে বিতর্কিত করে তুলতে পারে। আইন বিরোধী এই ধরনের পদক্ষেপ আসলে অপরাজনীতি ছাড়া আর কিছুই নয়।

তিনি বলেন, কথিত মাজেদের জবানবন্দিতে বয়ান করা হয়েছে ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডে জড়িতদের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেও ১৯৭৫ সালের ঘটনার নায়কদের ইনডেমনিটি রেফারেন্স দিয়ে জিয়াউর রহমানকে ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের মদদদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন। অথচ জাতি জানে, প্রকৃতপক্ষে সরকার প্রধান নিজেও জানেন, ওই সময়ের ঘটনার নায়কদের ইনডেমনিটি দিয়েছিল ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক, জিয়াউর রহমান নয়। এই অধ্যাদেশটি ১৯৭৫ সালের অধ্যাদেশ ৫০ নামে অভিহিত। ‘দ্য বাংলাদেশ গেজেটে’ প্রকাশিত অধ্যাদেশটিতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদ ও আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এমএইচ রহমানের স্বাক্ষরে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, জিয়াউর রহমানকে ঘিরে এই অপপ্রচার সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার। মাজেদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সত্যকে মিথ্যা করা যাবে না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের পর তার লাশের উপর দিয়ে খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে যে মন্ত্রিসভা হয়েছিলো তারা সকলেই আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। ১৫ আগস্ট এবং ৩ অক্টোবরে তৎকালীন আওয়ামী-বাকশাল নেতা খন্দকার মোশতাকের জাতির উদ্দেশ্য দেয়া দুটি ভাষণ এর সুস্পষ্ট দালিলিক প্রমাণ বহন করে। সে ভাষণে তিনি মুজিব হত্যাকান্ডকে “এক ঐতিহাসিক প্রয়োজন” বলে উল্লেখ করেন। হত্যাকারীদেরকে তিনি প্রশংসিত করেন “অসম সাহসী সূর্য সন্তান” হিসেবে। ঐ সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার আব্দুল মালেক উকিল লন্ডনে বসে কী মন্তব্য করেছিলেন তা সকলেরই জানা আছে। এটি ঐতিহাসিকভাবে সুস্পষ্ট যে ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের সুবিধাভোগী (বেনিফিসিয়ারি) ছিল খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের নেতারাই।

তিনি বলেন, মূলত এই নির্মম হত্যাকান্ডের অনাকাক্সিক্ষত প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল স্বাধীনতা উত্তর সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা,স্বজনপ্রীতি, দলীয় স্বেচ্ছাচারিতা ও কুখ্যাত রক্ষীবাহিনীর নির্যাতনের ধারাবাহিকতায়। ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের করুণ কাহিনী। ৭২-৭৫ চলাকালীন সময়ে দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা হরণ করেছিল জনগণের ভোটাধিকার। সেই সময় সংসদে একটি বিরোধী দল গঠন পর্যন্ত করতে দেয়া হয়নি। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথ শুধু রুদ্ধই করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছে সিরাজ শিকদার সহ হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে, যার মধ্যে দিয়ে এদেশে শুরু হয়েছিল বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের ধারা। জাসদ ও গণবাহিনীর হাজার হাজার নেতা কর্মীরা সে সময়ে শিকার হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের নিষ্ঠুর রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ডের। জন্ম হয়েছিল বিরোধী মতকে দমন করার জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিচারবহির্ভ‚ত হত্যাসংস্কৃতির। ক্ষমতাসীন দল ইতিহাস থেকে কোনো ধরনের শিক্ষা গ্রহণ করেছে বলে মনে হয় না। তারই ধারাবাহিকতায় ৭২-৭৫ সরকারের বিচার বহির্ভুত হত্যাসংস্কৃতি আজো চলছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত ১১ বছরে বর্তমান সরকারের আমলে বিচারবর্হিভুত হত্যার শিকার হয়েছে প্রায় তিন হাজার জন। এই সকল হত্যাকান্ডের সুনির্দিষ্ট ফৌজদারি অভিযোগ যা বাংলাদেশের দন্ডবিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য। একদিন সকল বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের বিচার ঠিকই হবে এদেশে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি নেতা রিয়াজ উদ্দিন নসু ও চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Mohammed Shah Alam Khan ১৯ আগস্ট, ২০২০, ১০:৩০ পিএম says : 0
ঐতিহাসিকভাবে এটাই সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণ করে যে, ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের সুবিধাভোগী (বেনিফিসিয়ারি) ছিল খন্দকার মোশতাকের সাথে এই হত্যাকান্ডে জড়িত সবাই। জিয়া মিয়া জড়িত ছিলেন এটা প্রমাণিত কারন তারই স্বাক্ষরে ট্যাংক শহরে নেমেছিল। তাঁকে অবগত করে তাঁর অনুমতি নিয়েই ডালিম গং এরা এই ক্যু করেছিল। ক্যুর পরপরই জিয়া মিয়াকে খন্দকার মোশতাকের পাশেই সবসময় দেখাগেছে। তাছাড়া ক্যুর পরপরই জিয়া মিয়া সামরিক বাহিনীর প্রধান হয়েছিলেন। এতসবই প্রমাণ দেয় জিয়া মিয়া জাতীর জনকের হত্যার সাথে জড়িত এবং সুবিধাভোগীদের একজন। কাজেই এখন মরণ উত্তর বিচার করার আইন পাশ হলেই জিয়া মিয়া ও খন্দকার মোশতাকের মরণউত্তর বিচার করা সম্ভব। ইতিহাস কাওকে ক্ষমা করেনা এটাই ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন