বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নতুন মাইলফলকে রিজার্ভ

রিজার্ভ ছাড়াল ৩৮ বিলিয়ন ডলার অর্থমন্ত্রীর প্রণোদনা ও হুন্ডি কমে যাওয়ায় ঈদের পরও উর্ধ্বগতিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০২০, ১২:০১ এএম

করোনার সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন আরেকটি মাইলফলক অতিক্রম করেছে। কোরবানির ঈদের পরও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স উর্ধ্বগতিতে রয়েছে। গত সোমবার দিন শেষে রিজার্ভ রেকর্ড ৩৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বেশি রিজার্ভ আগে কখনই ছিল না। রেমিট্যান্স বাড়ায় গত দেড় মাসে ৩৪ বিলিয়ন ডলার থেকে রিজার্ভ ৪০০ কোটি ডলার বেড়ে ৩৮ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে। প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসেব করে এই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় সাড়ে নয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মহামারীর কারণে হুন্ডি বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং অর্থমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনায় উৎসাহিত হওয়ায় বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়ার একটি কারণ। এছাড়া সঙ্কটকালে পরিবারের সহায়তার জন্য প্রবাসীরা যেমন বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন, আবার সঙ্কটে পড়ে বিদেশের পাট চুকিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকে জমানো টাকা দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন বলেও তা রেমিট্যান্স বাড়ায় প্রভাব ফেলছে বলে মনে করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে রিজার্ভ পাঁচ বার রেকর্ড গড়েছে। গত ৩ জুন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে ২৪ জুন সেই রিজার্ভ আরও বেড়ে ৩৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই ৩০ জুন রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। এক মাস পর ২৮ জুলাই রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারের ঘরও অতিক্রম করে। তিন সপ্তাহ পর গত সোমবার রিজার্ভ ৩৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল রিজার্ভের নতুন রেকর্ডের তথ্য জানিয়ে বলেছেন, মূলত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের উপর ভর করেই রিজার্ভ একটার পর একটা রেকর্ড গড়ছে। মহামারীর এই কঠিন সময়ে বেশি বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অবদান রাখার জন্য তিনি প্রবাসীদের কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান। অর্থমন্ত্রী বলেন, এই রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে সরকারের বড় ভূমিকা আছে। বৈধ পথে রেমিট্যান্স আনতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত বছরের জুলাই থেকে ২ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে সরকার তার সঙ্গে ২ টাকা যোগ করে স্বজনকে ১০২ টাকা দেয়া হচ্ছে। এতে প্রবাসীরা উৎসাহিত হচ্ছেন। বেশি রেমিটেন্স দেশে পাঠাচ্ছেন।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, রিজার্ভের এই উল্লম্ফন আমাদের সাহস জোগাচ্ছে; আমরা সাহসিকতার সঙ্গে কোভিড-১৯ মোকাবেলা করতে পারব বলে আশা করছি। রেমিট্যান্সের পাশাপাশি বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি ও এআইআইবির ঋণ সহায়তাও রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। গত চার মাসে (এপ্রিল-জুলাই) এই দাতা সংস্থাগুলোর সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ-সহায়তা যোগ হয়েছে রিজার্ভে। এক বছর আগে গত বছরের ৮ অগাস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার।

করোনাভাইরাস মহামারীতে রেমিট্যান্সের গতিতে ছেদ তো পড়েইনি, বরং তা আরও বেড়েছে। গত জুলাই মাসে ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই এক মাসে এত বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসেনি। সবাই আশঙ্কা করছিলেন, কোরবানির ঈদের পর চলতি অগাস্ট মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমবে। কিন্তু তা ঘটছে না।

রেকর্ড রেমিট্যান্স বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, দুই কারণে করোনাকালে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। একটি হলো-মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে যারা বেশি বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন, তারা মূলত দেশে ফিরে আসার জন্য দিন গুনছেন। এই দিন গোনা প্রবাসীরা সেখানে যে টাকা সঞ্চয় করেছিলেন তার সবই দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। ফলে রেমিট্যান্স আসার ক্ষেত্রে রেকর্ড হয়েছে। তিনি মনে করেন দ্বিতীয় আরেকটি কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহে রেকর্ড হয়েছে, তা হলো-এই করোনাকালে ইউরোপ ও আমেরিকা থেকেও আগের চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। এটা দীর্ঘমেয়াদের জন্য ভালো লক্ষণ।

ইউরোপ-আমেরিকা থেকে রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, দেশগুলোর প্রবাসীরা ওইসব দেশে টাকা রেখে এখন কোনও মুনাফা পাচ্ছেন না। অথচ বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে এই করোনাকালেও ৬ শতাংশ মুনাফা দিচ্ছে। আবার জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে ১১ শতাংশের বেশি মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে। ফলে ইউরোপ আমেরিকার অনেকেই লাভের আশায় বাংলাদেশে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এর সঙ্গে ২ শতাংশ প্রণোদনা সুবিধা তো আছেই।

তিনি বলেন, ইউরোপ আমেরিকার প্রবাসীরা বাংলাদেশে বেশি বেশি টাকা পাঠানোর পেছনে আরেকটি কারণ হলো, বাংলাদেশে এখন সস্তায় ফ্ল্যাট পাওয়া যাচ্ছে। এর সঙ্গে কালো টাকা বিনিয়োগ করারও সুযোগ রয়েছে। ফলে বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেদার ফ্ল্যাট কিনছেন। তিনি মনে করেন দীর্ঘদিন বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় হুন্ডি কমে যাওয়ার কারণেও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাজী ছাইদুর রহমান বলেন, চলতি আগস্ট মাসের ১৬ দিনে (১ আগস্ট থেকে ১৬ আগস্ট) ১০১ কোটি ৬০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। গত বছরের আগস্ট মাসের এই ১৬ দিনে ৮১ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। মূলত রেমিট্যান্সের উপর ভর করেই রিজার্ভে রেকর্ডের পর রেকর্ড হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন ছাইদুর রহমান।

জুলাইয়ের আগে এক মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল গত জুন মাসে, ১৮৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্স। দেশের জিডিপিতে এই রেমিট্যান্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো। এবার করোনাভাইরাস মহামারীতে মার্চ থেকে বৈশ্বিক পরিস্থিতি ওলটপালট হয়ে যাওয়ায় রেমিট্যান্সও কমে গিয়েছিল। কিন্তু এপ্রিল থেকে রেমিট্যান্সে ঊর্ধ্বগতির ধারা চলছে। ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট এক হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ (১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ছিল আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন রেমিট্যান্স এসেছিল।##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
সঞ্জয় ১৯ আগস্ট, ২০২০, ২:৪৫ এএম says : 0
এটা খুবই ভালো খবর
Total Reply(0)
তুষার ১৯ আগস্ট, ২০২০, ২:৪৬ এএম says : 0
এর জন্য যারা সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে সেই প্রবাসীদের জন্য সরকারের নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত
Total Reply(0)
আসমা ১৯ আগস্ট, ২০২০, ২:৪৬ এএম says : 0
এটা উত্তরোত্তর বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে
Total Reply(0)
জসিম ১৯ আগস্ট, ২০২০, ২:৪৭ এএম says : 0
এতে খুব বেশি খুশি হওয়ার কিছু নাই
Total Reply(0)
জাহিদ হাসান ১৯ আগস্ট, ২০২০, ২:৪৮ এএম says : 0
হুন্ডি বন্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে
Total Reply(0)
পাবেল ১৯ আগস্ট, ২০২০, ২:৪৯ এএম says : 0
এর একটা বড় অবদান বর্তমান অর্থমন্ত্রীর
Total Reply(0)
বুলবুল আহমেদ ১৯ আগস্ট, ২০২০, ২:৫০ এএম says : 0
প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে সরকার তার সঙ্গে ২ টাকা যোগ করে স্বজনকে ১০২ টাকা দেয়া হচ্ছে। এতে প্রবাসীরা উৎসাহিত হচ্ছেন। বেশি রেমিটেন্স দেশে পাঠাচ্ছেন।
Total Reply(0)
মারিয়া ১৯ আগস্ট, ২০২০, ২:৫১ এএম says : 0
এই সাফল্যের জন্য অর্থমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাচ্ছি
Total Reply(0)
Mohammedmohiuddin ২২ আগস্ট, ২০২০, ১০:৩৪ এএম says : 0
যেহেতু প্রবাসীরা ২০/৩০ বছর প্রবাস থেকে দেশের চাকা সচ্ছল করে,সেহেতু প্রবাসীদেরকে সরকার প্রবাসী ভাতা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন