বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

পঞ্চগড়ে চোরে নিয়ে গেল মেয়ের বৃত্তির টাকায় কেনা চারটি গরু

পঞ্চগড় প্রতিনিধি | প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০২০, ৬:৪৯ পিএম

চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। তাইতো মেয়েদের বৃত্তির টাকা থেকে জমানো টাকায় কেনা ৪টি গরু নিয়ে গেছে চোরে। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাতকাজল দিঘী ইউনিয়নের ঘটবর গ্রামের দিনমজুর আনিসুর রহমানের ‘অমূল্য সম্পদ’ গরু কয়টি চুরি হয়ে যায়। প্রায় দুই লাখ টাকা মূল্যমানের ৪টি গরু চুরি হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন দিনমজুর আনিসুর ও তার মেয়েরা।
আনিসুর রহমান জানান, রাতে খাওয়া দাওয়ার পর ঘুমিয়ে পড়ে পরিবারের সবাই। ভোরে নামাজ পড়তে উঠে আনিসুরের স্ত্রী আয়েশা বেগম দেখতে পান গরু ঘরে কোন গরু নেই। তিনি চিৎকার করতেই চারপাশের সবাই এসে জড়ো হয়। আশপাশে অনেক স্থানে খোঁজ করলেও গরুর সন্ধান পাননি। তিনি বলেন, আমার মেয়েরা বৃত্তি আর টিউশনি টাকা দিয়ে এই গরুগুলো কিনে দিয়েছিলো। সেগুলো পালন করে এখন বড় করেছি। একটি বিদেশি গরুসহ মোট ৪টি গরুর বাজার মূল্য হবে প্রায় দুই লাখ টাকা। আশা ছিলো গরুগুলো বিক্রি করে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ ও বিয়ের খরচ জোগার করবো। কিন্ত আমার সব স্বপ্ন শেষ করে দিলো চোর। মেয়েরা নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। আমি পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছি। তারা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
দিনমজুর আনিসুরের চার মেয়ে। চারজনই অত্যন্ত মেধাবী। বড় মেয়ে আফসানা খাতুন এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর ইংরেজি বিষয়ে অনার্স সম্পন্ন করেন। মাস্টার্স পড়া অবস্থায় সম্প্রতি তার বিয়ে দিয়েছেন। মেজ মেয়ে রোমানা আক্তার এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ উত্তীর্ণ হয়। সে এখন রংপুর মেডিকেল কলেজে ডেন্টাল বিভাগে তৃতীয় বর্ষে পড়ছে। সেজ মেয়ে লাবনী আক্তার এসএসসিতে জিপিএ-৫ এবং এইচএসসিতে জিপিএ-৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। সে এখন রংপুর আইএইচটিতে রেডিওলোজি নিয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। এছাড়া ছোট রিপা আক্তার পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। বড় মেয়ে আফসানা ইসলামী ব্যাংক থেকে মাসে ৩ হাজার ও মেজ মেয়ে রোমানা ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে মাসে ২ হাজার টাকা করে শিক্ষাবৃত্তি পায়। সেই টাকার সাথে টিউশনির টাকা এবং বাড়ির কিছু টাকা যোগ করে কয়েক বছর আগে বাবাকে ৪টি গরু কিনে দেন তারা। স্বপ্ন ছিলো গরুগুলো বিক্রি করে মেয়েদের পড়াশুনা ও বিয়ের খরচ জোগার করবেন। কিন্তু চোর তাদের স্বপ্নগুলো ভেঙে দিয়েছে। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা।
রংপুর মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল বিভাগের ছাত্রী রোমানা আক্তার বলেন, গরুগুলো আমরা কিনেছিলাম যেন বিপদের সময় বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করতে পারি। এখন আমাদের আর কিছু রইলো না। সামনে আমার পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করতে ১২ হাজার টাকা লাগবে। সেই টাকা কোথায় পাবো ভেবে পাচ্ছি না। করোনার মধ্যে এমনিতে টানাপোড়েনে দিন যাচ্ছে। এখন সব কিছু অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
পঞ্চগড় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, ওই পরিবারের ৪টি গরু চুরির ঘটনাটি আমরা তদন্ত করছি। চোর চক্রটিকে ধরার জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন