শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পদ্মায় পানি বাড়ছেই

ভারত ফারাক্কার গেট খুলে দিয়েছে! ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় হ্রাস : দক্ষিণ-পশ্চিম, দক্ষিণ-মধ্য উপকূলীয় অঞ্চলের নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধির সতর্কতা

ইনকিলাব রিপোর্ট | প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০২০, ১২:০০ এএম

ফারাক্কা বাঁধের গেট খুলে দিয়েছে ভারত। হু হু করে নেমে আসছে বানের পানি। এতে পদ্মা যমুনাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়ছে। আবারও বন্যার কবলে পড়ছে দেশ। বন্যায় প্লাবিত ৩৩ জেলার পানি নামতে না নামতেই আবারও আসছে এই বন্যা। দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে কবলিত এলাকার মানুষের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। পানি বাড়ার সাথে সাথে তীব্র হয় নদী ভাঙন। এতে নি:স্ব হয় শত শত পরিবার। সরকারের পক্ষ থেকে যাবতীয় সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হলেও বন্যার্তরা এতে আশ্বস্থ হতে পারছেন না। বন্যার কারণে নদী ভাঙনের ফলে অনেকে এখন সর্বহারা। নদী ভাঙন রোধে এবং ভাঙন কবলিতদের পুর্নবাসনে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে নদী ভাঙনে সর্বহারাদের পুর্নবাসনে সরকারের এখন পর্যন্ত কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এ ছাড়া নদী ভাঙন রোধেও যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। তাই বন্যার দুশ্চিন্তায় দুর্গত এলাকার মানুষের চোখের ঘুম চলে গেছে।

চট্টগ্রাম থেকে শফিউল আলম জানান, বাংলাদেশে পদ্মার উজানে ভারতে গঙ্গা নদী। গঙ্গায় ঢল-বানের পানির চাপ সামাল দিতে গিয়ে ভারত বিনানোটিশে আকস্মিকভাবে ফারাক্কা বাঁধের গেইটগুলো খুলে দিয়ে থাকে। বরাবরের মতো এবারও তা করেছে! এরফলে ভাটিতে বাংলাদেশের দিকে গঙ্গা-পদ্মা নদীতে পানি গড়াচ্ছে। গতকাল গঙ্গা-পদ্মার সবক’টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পায়। গঙ্গা-পদ্মায় পাংখা পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার, রাজশাহীতে ৮ সেন্টিমিটার., হার্ডিঞ্জ ব্রিজে ৬ সেন্টিমিটার, তালবারিয়ায় ১৫ সেন্টিমিটার, গোয়ালন্দে ৫, ভাগ্যকুলে ৬, মাওয়ায় ৭ ও সুরেশ^রে ৬ সেন্টিমিটার পরিমানে পানি বেড়েছে।

পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে পাংখায় বিপদসীমার নিচে ১৭৬, রাজশাহীতে ১৯৩, হার্ডিঞ্জ ব্রিজে ১১৯, তালবারিয়ায় ৯২ সেন্টিমিটারে পৌঁছে গেছে। পদ্মা গোয়ালন্দে বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মায় পানি বৃদ্ধিতে দু’কুল উপচে বন্যার সঙ্গে নদীভাঙন আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে এমনটি আশঙ্কা রয়েছে।

গতকাল পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে দেশের প্রধান নদ-নদী প্রবাহের সর্বশেষ তথ্য-উপাত্তে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের সবক’টি পয়েন্টে পানি আরও কিছুটা হ্রাস এবং স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। গতকাল যমুনা নদের সারিয়াকান্দিতে বিপদসীমার ৫ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র পূর্বাভাসে জানায়, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের গাণিতিক মডেলের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম, দক্ষিণ-মধ্য উপকূলীয় অঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এরফলে উক্ত অঞ্চলের নদ-নদীসমূহের পানির সমতল দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।

পূর্বাভাসে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদে পানির সমতল স্থিতিশীল রয়েছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় হ্রাস পেতে পারে। গঙ্গা নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। পদ্মায় পানি স্থিতিশীল রয়েছে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আপার মেঘনা অববাহিকায় নদীগুলোতে পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

নদ-নদীসমূহের ১০১টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ২৯ পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৬৬টিতে হ্রাস পায়। অপরিবর্তিত থাকে ৬টিতে। ৪টি নদ-নদী ৪টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী জানান, যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে আবার বাড়ছে। গত ৭ দিনে পানি বেড়েছে ৪৯ সেন্টিমিটার। যেকোনো সময় নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। পানি বাড়তে থাকায় জেলাটিতে আবারও বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে নতুন করে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
টাঙ্গাইল থেকে আতাউর রহমান আজাদ জানান, টাঙ্গাইলে চলমান বন্যায় জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ১১টি উপজেলা আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি পৌরসভাও রয়েছে। রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট বিধ্বস্ত হয়ে প্রায় পৌনে ৩শ’ কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।

চাঁদপুর থেকে বি এম হান্নান জানান, উজানের ঢল ও অমাবস্যার প্রভাবে জোয়ারে চাঁদপুর শহরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পদ্মা-ঘেনার পানি এখনো বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর থেকে আলীম আকন্দ জানান, চলমান বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারো টাঙ্গাইলের ভ‚ঞাপুরে চতুর্থ দফায় যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। এতে বন্যা কবলিত হাজার হাজার মানুষ ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই ফের বন্যার কবলে পড়ার আশঙ্কা করছে।

কক্সবাজার ব্যুরো জানায়, সাগর উত্তাল থাকায় গত এক সপ্তাহ ধরে ভারি বর্ষন অব্যাহত রয়েছে কক্সবাজারে। টানা বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে কক্সবাজার জেলার উপক‚লীয় এলাকাসহ নিম্নাঞ্চল। এতে পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগ বেড়েছে হাজারো মানুষের। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে কক্সবাজারে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে।

গোপালগঞ্জ থেকে মোঃ অহেদুল হক জানান, বন্যায় সাড়ে ৬ হাজারেরও বেশি পুকুরের মাছ ভেসে ৪৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এতে জেলার ৫ উপজেলার সাড়ে ৫ হাজারেরও বেশি মৎস্যচাষী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।
জামালপুর থেকে নুরুল আলম সিদ্দিকী জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ঘর-বাড়ি আর ক্ষতবিক্ষত রাস্তা-ঘাটে দুর্ভোগ বেড়েছে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষজনের। বেশির ভাগ বানভাসি মানুষ ঘরে ফিরলেও বন্যার পানির তীব্র স্রোতের মুখে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া ভাঙ্গাচোড়া ঘরবাড়িতে দুর্ভোগ বেড়েছে।

মুন্সীগঞ্জ থেকে মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। মাওয়ায় পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে । পানি বৃদ্বি পাওয়ায় এবং গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে লৌহজং এবং শ্রীনগরের নিম্নাঞ্চলের বন্যার্তদের দুর্ভোগ আবারো বৃদ্ধি পেয়েছে।

লক্ষীপুরের রামগতি ও কমলনগর থেকে আমানত উল্লাহ এবং কাজ্বী মুহাম্মাদ ইউনুছ জানান, পনের দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো অস্বাভাবিক জোয়ারে আঘাত হেনেছে লক্ষীপুরের রামগতি-কমলনগর উপজেলার ৩০টি গ্রামে। জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে মানুষের ঘর-বাড়ীতে। গত ৩ দিনের টানা বৃষ্টির পানি আর মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারে তলিয়ে গেছে স্কুল মাদ্রাসা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
তোফাজ্জল হোসেন ২০ আগস্ট, ২০২০, ৩:৫২ এএম says : 0
আমার দেশ আমার স্বপ্ন খমতার লোভে ভারতের দালালরা কখনো এসব জুলুমের প্রতিবাত করেনি
Total Reply(0)
থলের বিড়াল ২০ আগস্ট, ২০২০, ৩:৫২ এএম says : 0
ভারতের পররাষ্ট্র সচিবকে কেন কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হল না।।
Total Reply(0)
Faruk Hossain ২০ আগস্ট, ২০২০, ৩:৫২ এএম says : 0
ফারাক্কার বাঁধ খোলার জন্য গতকাল গো মুত্রখোর শ্রীংলা এসেছিল।
Total Reply(0)
D Shahin Reza ২০ আগস্ট, ২০২০, ৩:৫৩ এএম says : 0
প্রতি বছর এতো, এতো পরিমাণের ক্ষতি হচ্ছে ভারতের ফারাক্কার কারণে,,,, তাও আমরা কেন চুপ বুঝিনা বাপু,,,স্বাধীনতা যুদ্ধে যেটুকু সাহায্য করেছিল ভারত,, এখন তো ক্ষতিটাই বেশি করছে,,,,কেন আমাদের দেশের সরকার চুপচাপ নিরবে মেনে নিচ্ছেন এই অত্যাচার,,,, আমরা কি পারিনা ফারাক্কার বিপরীতে আমাদের দেশ রক্ষা করতে একটি বাদ।।।
Total Reply(0)
Mohammad Oli Ullah ২০ আগস্ট, ২০২০, ৩:৫৩ এএম says : 0
মাওলানা ভাসানী বলেছিলেন,, খড়ার সময় পোড়াও তুমি, বর্ষাকালে ভাষাও, এটা তার উদাহারন,এখন ভারতকে এই কথা বলার মত এমন একজন রাজনীতিবিদ দেখা স্বপ্নের ব্যাপার
Total Reply(0)
Moniruzzaman Sikder ২০ আগস্ট, ২০২০, ৩:৫৩ এএম says : 0
ফারাক্কার বিপরিতে বাংলাদেশের উচিত্ ফারাক্কার দ্বিগুণ উচা বাধ বানানো , উপরে বন্ধু ভিতরে শত্রু আচরন আর কতদিন সজ্য করবো ?
Total Reply(0)
Solaiman Mojumder ২০ আগস্ট, ২০২০, ৩:৫৪ এএম says : 0
ভারত এই বর্ষায় ফারাক্কা বাঁধের গেট খুলে দিয়ে বাংলাদেশ কে পানিতে ডুবিয়ে দু’দেশের সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় তৈরি করতে চাচ্ছে । তাইনা ?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন