শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

‘বাংলাদেশে বিনিয়োগের মাধ্যমে কাতারের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের সুযোগ বাড়বে’

ওয়েবিনারে এফবিসিসিআই সভাপতি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০২০, ৫:২৬ পিএম

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেছেন, বাংলাদেশ ও কাতারের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের সুযোগ বাড়াতে ট্যাক্স ও শুল্ক প্রণোদনা সহ অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশকে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে বিবেচনা করে বৈচিত্রপূর্ণ বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য দুই দেশেকেই এগিয়ে আশা উচিত। শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, আশা করি, কাতারের সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য জ্বালানি, বিদ্যুৎ, অবকাঠামো, প্রযুক্তি, হালাল ইকোসিস্টেম, পুনঃনবায়নযোগ্য শক্তি, স্টার্ট-আপস, উদ্ভাবনী জ্ঞান ও রিসোর্স শেয়ারের ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করবেন।

বুধবার (১৯ আগস্ট) বাংলাদেশ ফোরাম কাতার ও দোহা ব্যাংক-এর যৌথ উদ্যোগে ‘কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ও সমন্বয়মূলক সুযোগ’ শীর্ষক একটি ওয়েবিনারে বক্তব্য প্রদানকালে এসব কথা বলেন তিনি।

ফজলে ফাহিম বলেন, বাংলাদেশে ১৬০ মিলিয়নের অভ্যন্তরীণ বাজার রয়েছে। সাউথ এশিয়া অ্যাসোসিয়েশন রিজিওনাল কোঅপারেশন (সার্ক)-এর অধীনে সাউথ এশিয়া ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (সাফটা)-এর অনুযায়ী আমাদের ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কেট অ্যাক্সেস ব্যবস্থা রয়েছে। এদিকে, অস্ত্র ছাড়া (ইবিএ) এর সবকিছুতেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, চীন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (এপিটিএ) এর মাধ্যমে বেশ কিছু অতিরিক্ত বাজারেও শুল্কমুক্ত ও কোটা-মুক্ত (ডিএফকিউএফ) অ্যাক্সেস সুবিধা রয়েছে। এছাড়া জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো)-এর গবেষণায় বাংলাদেশকে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জাপানি বিনিয়োগের শীর্ষ স্থান হিসেবেও দেখানো হয়েছে।

দুই দেশের দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক ও সেবা, জ্বালানি অংশীদারিত্ব এবং মানব উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এফএমসিজি, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, চামড়া, জুতা, ফার্মাসিউটিক্যালস, সিরামিক ও আইসিটি রপ্তানির মতো বৈচিত্রপূর্ণ ব্যবসায়ের জন্য বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য করার সুযোগ রয়েছে।

অর্থনৈতিক কর্মকা-ের নিম্নমুখী প্রবণতার কারণে সরকারি ব্যয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে করোনা মহামারী মোকাবিলায় অর্থ সঞ্চালন বাড়ানোর ব্যবস্থা, সামাজিক সুরক্ষা নেট প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে ৪৫ মিলিয়ন মানুষকে খাদ্য সহায়তা, ৫০ লাখ পরিবারকে নগদ অর্থ হস্তান্তর, ব্যাংকিং খাতে তারল্য বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের শিথিলতার ব্যবস্থা, সকল ঋণের উপর দুই মাসের জন্য ১ শতাংশ সুদের হার মওকুফ, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া সকল ঋণ পরিশোধ স্থগিত ও সকল প্রকার ঋণের সুদের হার বণ্টন এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ অনুমোদন করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ নিশ্চিত করা, ৫০:৫০ এমএসএমই ঋণের জন্য প্রনোদনা ও ঋণের ঝুঁকি গ্যারান্টি সমন্বয় করে এমএসএমই তহবিল গঠনের মাধ্যমে কৃষি, রপ্তানি এবং বৃহত্তর খাতগুলিতে প্রণোদনা প্যাকেজ সম্পাদন করতে ব্যাংকিং খাতগুলো আরও সহজতর করার পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের নীতিগত হস্তক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

এই বছর জাতীয় বাজেটে সমস্ত আয়কর এর পাশাপাশি ২ দশমিক ৫ শতাংশ করপোরেট কর কমানো হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই সব পদক্ষেপের সমন্বয় করে এই বছরের বাকি সময়গুলো টিকে থাকতে পারবো এবং ২০২১ ও ২০২২ সালের মধ্যে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আবারও ঘুরে দাঁড়াবে।

বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, মহামারী সত্ত্বেও বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২ শতাংশ, রেমিট্যান্সে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ ও চলতি অর্থবছরে ১০ শতাংশ বৈদেশিক মজুদ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।

বেশিরভাগ বহুজাতিক কোম্পানির বৈশ্বিক শীর্ষ পাচঁ অপারেশনের মধ্যে তাদের বাংলাদেশে পরিচালিত কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য। কাতার সার্বভৌম তহবিল ব্যবস্থাপনা জ্ঞান ও উদ্ভাবনী ধারণা স্থানান্তর, বেসরকারি খাতের দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প অর্থায়ন, কম সুদের হারে বাণিজ্য অর্থায়ন, বিভিন্ন খাতে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ, উদ্ভাবন, একাডেমিয়ার ক্ষেত্রে এফবিসিসিআই’র প্রাতিষ্ঠানিক সম্পৃক্ততার মাধ্যমে কাতার, জিসিসি ও এর বাইরে রপ্তানির জন্য বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক ভ্যালু চেইন (বিভিসিআই) অনুসন্ধান করা যেতে পারে। বাংলাদেশের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয় বলেছন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা এশিয়ার সবচেয়ে আড়ালে থাকা একটি বিষয়। তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ছয়টি চালিকাশক্তি পোশাক শিল্প, বাণিজ্য, রেমিট্যান্স, বিদ্যুৎ উৎপাদন, অবকাঠামো এবং ডিজিটাল স্পেসের বিষয় তুলে ধরে বলেন, গত ১২ বছরে বাংলাদেশ ৪০০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। সরকারী বন্ডে বিনিয়োগ একটি বড় সুযোগ, কারণ মুদ্রা বেশ স্থিতিশীল হওয়ায় বাংলাদেশে ভালো সাফল্য পাওয়া যায়। কাতারে পুঁজি বাজারে তারল্যের আধিক্য থাকায় কাতারের ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ করতে পারে। তিনি বলেন, দ্বিগুণ টেক্সের এওয়ারনেস ট্রিটি কাতারের বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে সহযোগিতা করবে।

ওয়েবিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আশুদ আহমেদ। তিনি বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশ ও কাতারের সম্পর্ক শ্রমের উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশ সরকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের জন্য চমৎকার সুযোগ-সুবিধা এবং প্রণোদনা দিয়ে আসছে; কাতার বাংলাদেশের দিকে নজর দিতে পারে। বাংলাদেশ নিজেই একটি বঙ্গবাজার এবং দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যকার সেতু। তিনি বলেন, উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শ্রম বাণিজ্য বজায় রেখে সম্পর্কের বৈচিত্র আনতে আলোচনায় বসতে পারেন।

ওয়েবিনারে দোহা ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. আর সিথারামান বলেন, বিনিময় ও রিফান্ডের ক্ষেত্রে আমাদের পরিচিতি রয়েছে এবং একইভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোও বিনিয়োগ করতে পারে। আমরা এখন বাংলাদেশে তারল্য বিনিয়োগ করতে যাচ্ছি। তিনি বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাতারে অবকাঠামো স্থাপন এবং কাতারের শিল্প অঞ্চল ও মুক্ত অঞ্চল থেকে একটি বৈশ্বিক প্রবেশদ্বার তৈরি করার আহবান জানান।

দোহা ব্যাংক বাংলাদেশ রিপ্রেজেন্টেটিভ অফিসের চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ অজয় কুমার সরকার অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন এবং পুরো অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গলফ এক্সচেঞ্জের ভিপি ও বাংলাদেশ ফোরামের কাতারের ভাইস প্রেসিডেন্ট জাফর আলী আল-সারাফ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন