বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পোল্ট্রি ডেইরি ও মৎস্য খাত

সচল উত্তরের অর্থনীতি

মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে | প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০২০, ১২:০৪ এএম

মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণের শুরুতে যোগাযোগ ব্যবস্থার অচলাবস্থায় পোল্ট্রি ডেইরি ও মৎস্য প্রজেক্টগুলোতে প্রায় লালবাতি জ¦লে ওঠার উপক্রম হয়। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এর তথ্যে ২০ মার্চ থেকে ২৪ এপ্রিল এই এক মাস সময়ে যোগাযোগ অচলাবস্থার কারণে পোল্ট্রি ও ডেইরি খাতের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ৬২ কোটি টাকা।

বিকাশমান এই দুটি খাতে ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের জীবিকা নিয়ে সৃষ্টি হয় গভীর অনিশ্চয়তা। পোল্ট্রি ফার্মগুলোতে উৎপাদিত কোটি কোটি ডিম ও হ্যাচারিগুলোতে উৎপাদিত লাখ লাখ মুরগির বাচ্চা অবিক্রিত ছিল। ২৫ থেকে ৩৫ টাকার ১টি মুরগির বাচ্চা ২ টাকা মূল্যেও বিক্রি করাও সম্ভব ছিল না। ডেইরি ফার্মগুলোতে উৎপাদিত গড়ে প্রতিদিনের ২ কোটি ৪১ লাখ লিটার দুধের প্রায় পুরোটাই অবিক্রিত থেকে যেত। তবে পণ্য পরিবহনের সরকারি সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরপরই পাল্টে যায় উত্তরাঞ্চলের চিত্র।

এই পরিস্থিতির বিবরণ দিয়ে বগুড়া ডেইরি এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আবেদীন সবুর বলেন, করোনার শুরুতেই পরিস্থিতি বিপর্যয়কর হলেও দ্রæতই বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটায় খামার মালিকরা। পদক্ষেপ গুলোর মধ্যে ছিল ভ্রাম্যমাণ সেলসম্যান নিয়োগ। এই সেলসম্যানরা সাইকেল, মোটরবাইক বা বাহনের মাধ্যম বাড়ি বাড়ি বা পাড়া মহল্লায় দুধ বিক্রি করে এক নতুন ব্যবস্থার প্রচলন ঘটায়। এতে বহু মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থান হয়। এছাড়াও করোনাকালীন সময়ে সমগ্র উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বিপুল সংখ্যক দই ও মিষ্টির কারখানা তৈরী হয়ে অন্যান্য খাতের বেকার জনশক্তির নতুন করে কর্মসংস্থান হয় ।
একই ধরনের বিবরণ দিয়ে পোল্ট্রি এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুখতার হোসেন জানান, করোনার শুরুতে ছোট, বড়, মাঝারি পোল্ট্রিগুলোর ডিম বিক্রি সমস্যা হয়ে দাঁড়ালেও বিভিন্ন ছোট ছোট যানবাহনের মাধ্যমে সেলসম্যান দিয়ে ডিম ও ব্রয়লার ও গোশতের জন্য তৈরি পাকিস্তানি মুরগির বিক্রির প্রচলন হলে পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি ঘটে। নতুন এই খাতে বহু মানুষের কর্মসংস্থানও হয়।

অর্থনীতি বিষয়ক একটি গবেষণা জরিপে জানা যায়, গার্মেন্টসের পর পোল্ট্রি দেশের সবচেয়ে বড় শ্রম খাত। উত্তরাঞ্চল এই সেক্টরে শুরু থেকেই এগিয়ে আছে। পোল্ট্রির পাশাপাশি ডেইরি ও মৎস প্রজেক্টের উৎপাদিত পণ্য যাতে মানসম্মত ভাবে বিদেশে পাঠানো যায়, তাহলে এই খাতটিও রেমিটেন্স আয়ের একটি বৃহত্তম উৎস হতে পারে।

বগুড়া ও নওগাঁ এবং জয়পুরহাটের চেম্বার নেতারা জানিয়েছেন, পাকিস্তান আমল থেকেই এই অঞ্চলে একটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর চালুর আবেদন মন্ত্রণালয়ে ঝুলে আছে। এখনকার বিদ্যমান বাস্তবতায় এটা আরও যৌক্তিক ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন তারা।
উত্তরাঞ্চলের চরাঞ্চল সমূহে বাথানের উৎপাদিত লাখ লাখ গরু, মহিষ, ভেড়া ও ছাগল দিয়ে গত ৩টি কোরবানির হাটের চাহিদা পূরণ হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা জানালেন, প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ হওয়ার ঘটনাটি উত্তরাঞ্চলের গবাদী পশুর খামারীদের জন্য শাপে বর হয়েছে । এখন এই অঞ্চলে গরুর গোশতের উন্নতমানের প্রসেসিং এর ব্যবস্থা থাকলে এখান থেকেই মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম দেশগুলোতে গরুর গোশত রফতানির স্বর্ণ দুয়ার খুলে যাবে। তারা জানালেন, ধর্মের কথা বলে ভারত বাংলাদেশে গরু রফতানি বন্ধ রাখলেও মুসলিম দেশগুলোতেই তারা বিপুল পরিমাণে গরুর গোশত রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।

সরকারি সূত্র মতে উত্তরাঞ্চলে বর্তমানে খাদ্য শস্যের পাশাপাশি পোল্ট্রি, ডেইরি ও মৎস্য প্রজেক্টের উৎপাদন স্থানীয় চাহিদা পূরণের পরও রাজধানী ঢাকা, বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহরে সরবরাহ হয়। করোনাকালেও এই খাতের সচলাবস্থা তাই দেশের জন্য বড় আশির্বাদ হিসেবেই সরকারের কাছে চিহ্নিত হয়েছে ।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন