বেশ কয়েকবছর ধরে আলোচনার পর এবার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। নতুন এই পদ্ধতি কার্যকর করতে চলতি বছরের প্রথম দিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নেতৃত্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও তাদের প্রতিনিধিরা কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন। এসব বৈঠক শেষে প্রথম সারির ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকি সবগুলোতেই গুচ্ছ পদ্ধতি ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এজন্য কয়েকটি কমিটি গঠন করে দেয় ইউজিসি। তবে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, করোনা মহামারির কারণে নতুন এই ভর্তি পদ্ধতির জন্য গঠিত কমিটিগুলো ঠিকভাবে কাজ করতে পারেনি। ফলে এ বছর থেকেই এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। তবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দেয়। এই ৫ বিশ্ববিদ্যালয় তাদের একাডেমিক কাউন্সিলে আগের নিয়মে পৃথকভাবে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাইরে রেখেই বাকীদের নিয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কমিশন। এসব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি গুচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। গুচ্ছগুলো হচ্ছে- কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও সাধারণ। সাধারণ গুচ্ছে বিজ্ঞান, কলা ও ব্যবসায় শিক্ষায় তিনটি পরীক্ষা। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় কৃষিতে সাতটি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ১১টি, প্রকৌশলে তিনটি এবং সাধারণ নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নেয়ার বিষয়ে নিশ্চিত করেছিল। এই পরীক্ষা পদ্ধতি কার্যকর করতে এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য কমিটিও গঠন করে দেয়া হয়। ইউজিসির সদস্য দিল আফরোজা বেগমের নেতৃত্বে কমিটি মার্চের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন গ্রæপের সঙ্গে বসে ভর্তি পরীক্ষার মডালিটিজ, কোথায়-কীভাবে পরীক্ষা হবে, পরীক্ষার প্রশ্ন ও মূল্যায়ন প্রভৃতি বিষয় ঠিক করার কথা ছিল। কথা ছিল একেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে হবে একেকটি গুচ্ছের পরীক্ষা। কোন গ্রæপের লিড বিশ্ববিদ্যালয় কোনটা হবে, সেটি পরে ঠিক করার কথা ছিল।
এরই মধ্যে গত মার্চ থেকে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়। ১৮ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করায়। এখনো ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে না আসায় বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যদিকে গত এপ্রিলে শুরু হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষা। সেই পরীক্ষাও করোনার কারণে স্থগিত রয়েছে। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে- এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ সিলেবাস পড়ানো হয়েছে। অন্যান্য সব কাজই শেষ, শুধু পরীক্ষা গ্রহণ করা বাকি। তাই তাদের পরীক্ষা নেয়া হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ১৫ দিন পরেই এই পরীক্ষা আয়োজনের প্রস্তুতি রেখেছে মন্ত্রণালয়।
ইউজিসির এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, করোনা মহামারির কারণে নতুন এই ভর্তি পদ্ধতির জন্য গঠিত কমিটিগুলো ঠিকভাবে কাজ করতে পারেনি। ফলে এ বছর থেকেই এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর কাজী শহিদুল্লাহ বলেন, আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছি না। আমরা এই বিষয়ে আলোচনা করতে আগামী মাসে বৈঠকে বসব। এ বছর এই পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব যাতে এভাবে পরীক্ষা নেওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, এই বছর এখনও এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি, ফলে আমরা আরও কিছুটা সময় পাব।
গত বছর পর্যন্ত ৩৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩২টির ভর্তি পরীক্ষা হয়েছিল স্বতন্ত্রভাবে। বাকি সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় সমন্বিত পদ্ধতিতে। এবার ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে প্রথমে গুচ্ছ ভিত্তিতেই ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইউজিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন