শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

উপকূলে রেকর্ড পরিমাণে বাড়ছে জোয়ারের পানি

ইনকিলাব রিপোর্ট | প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০২০, ১২:০২ এএম

জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে গোটা উপক‚লীয় অঞ্চল। গত তিন-চারদিন ধরে চলমান অমাবস্যার জোয়ারে ঘরবন্দি দুর্বিষহ জীবন কাটছে উপক‚লবাসীর। মৌসুমের রেকর্ড পরিমাণে জোয়ারে প্রতিদিন বাড়ছে পানির উচ্চতা। এতে পানি বেড়ে চট্টগ্রাম ও বরিশাল নগরীর নতুন নতুন এলাকা তলিয়ে যাচ্ছে। ফলে চরম ভোগান্তির পাশাপাশি গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন নগরবাসী। চট্টগ্রামে স্কুল, কলেজ হাসপাতালসহ অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে। গুদাম, আড়ত ও দোকানপাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। গত কয়েক বছরে শত শত কোটি টাকা ব্যয় হলেও পানিবদ্ধতার কবল থেকে চট্টলাবাসীর মুক্তি মিলেনি। জোয়ারে কুয়াকাটা সৈকতের দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় সৈকতে থাকা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। ধ্বংসস্ত‚পে পরিণত হয়েছে বনবিভাগের রিজার্ভ ফরেস্ট ও কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান। চরম ঝুঁকির মুখে পড়েছে কুয়াকাটার মসজিদ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায় : বৃষ্টির সাথে জোয়ারে ভাসছে নগরীর বেশিরভাগ এলাকা। এতে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। দুর্ভোগ লাঘবে গত কয়েক বছরে শত শত কোটি টাকা ব্যয় হলেও পানিবদ্ধতার কবল থেকে মুক্তি মিলেনি। বৃষ্টিহীন দিনেও নতুন নতুন এলাকায় জোয়ারের পানি উঠছে, বাড়ছে মানুষের ভোগান্তি। হাসপাতাল, বাণিজ্যিক এলাকা থেকে শুরু করে বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। রাতে দিনে দুই বার জোয়ারে ডুবছে অনেক এলাকা। গতকাল নগরীর প্রায় প্রতিটি এলাকায় রাস্তাঘাটে পানি উঠে যায়। শুক্রবার রাতের টানা বর্ষণে নিচু এলাকা তলিয়ে যায়। তার সাথে যোগ হয় প্রবল জোয়ার।

নিয়মিত জোয়ারে ডুবছে দেশের ভোগ্যপণ্যের অন্যতম প্রধান পাইকারি বাজার চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও আছদগঞ্জ। গুদাম, আড়ত আর দোকানপাটে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার পণ্য। ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। জোয়ারের কবল থেকে মালামাল রক্ষায় ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে ব্যবসায়ী ও গুদাম মালিকদের। নগরীর আগ্রাবাদ মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালের নিচতলা থেকে শুরু করে আশপাশের সড়কে হাঁটু পানি।

জোয়ারে পানিবদ্ধতা স্থায়ীরূপ নিয়েছে পুরো আগ্রাবাদ, হালিশহর, চান্দগাঁও এবং পতেঙ্গা এলাকায়। আগে যেসব এলাকায় জোয়ারের পানি উঠতো না এখন সেখানেও পানি উঠছে। জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় নতুন নতুন এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। নগরীর বেশিরভাগ সড়ক খানাখন্দে ভরা। তার ওপর জোয়ার আর বৃষ্টির পানি জমে এসব সড়ক যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। রাস্তায় নেমেই লোকজনকে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। এদিকে জেলার বাঁশখালী, আনোয়ারা, সীতাকুÐ, মীরসরাই, স›দ্বীপসহ উপকূলীয় এলাকায় প্রবল জোয়ার অব্যাহত থাকায় বসতবাড়ি, খেতের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। উপক‚লীয় জনপদে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। অসহায় মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, ভাদ্রের অমাবস্যার ভরাকাটালে ভর করে ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ার আর উজানের ঢলের সাথে অবিরাম বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় পুরো কৃষি জমিই সয়লাব হয়ে গেছে। সাগর ফুসে ওঠার সাথে উজানের বন্যার পানি সাগরমুখী হবার পথে দক্ষিণাঞ্চলকে সয়লাব করে দিচ্ছে। সাথে অবিরাম বর্ষণ। গত ৪ দিনের টানা বর্ষণ আর জোয়ারের প্লাবনে গোটা দক্ষিণের জনপদ এখন পানির তলায়। অবিরাম বর্ষণ আর জোয়ারে সয়লাব হয়ে গেছে দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জমির উঠতি আউশ ধান। এ ছাড়াও সদ্য রোপণ করা আরো সোয়া লাখ হেক্টর জমির আমন ধান। ফরিদপুর অঞ্চলের ৫টি জেলায়ও প্রায় ৩৭ হাজার হেক্টর আউশ, আমন, পাট, তিল, কলাসহ বিভিন্ন সবজি ইতোমধ্যে বন্যার পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। পুরো দক্ষিণাঞ্চলের ফসলি জমিতে চোখ রাখলে এখন শুধু পানি আর পানি। এ প্লাবনে আরো অন্তত ৫০ হাজার হেক্টর জমির শাক-সবজি থেকে অন্যন্য ফসলও নিমজ্জিত হয়েছে।

কীর্তনখোলা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় নগরীর বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। মৌসুমের রেকর্ড পরিমাণে জোয়ারের পানির কারণে প্রতিদিন বাড়ছে পানির উচ্চতা। এতে পানিতে তলিয়ে গেছে বরিশাল নগরীর নতুন নতুন এলাকা। এর ফলে চরম ভোগান্তির পাশাপাশি গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন নগরবাসী। জোয়ারের সময় পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাওয়ায় নগরীর বিভিন্ন সড়ক ও এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এর ফলে পাড়া-মহল্লার রাস্তা-ঘাট এমনকি বাসা বাড়িতে প্রবেশ করছে জোয়ারের পানি।

খুলনা থেকে আবু হেনা মুক্তি জানান, বৈরি আবহাওয়া, টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত, ও অস্বাভাবিক নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়িবাঁধ উপছে পানি প্রবেশ করায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বৃহত্তর খুলনার উপকুলীয়াঞ্চলের সাধারণ মানুষের জনজীবন। চলতি বর্ষা মৌসুমে গত কয়েকদিনের বিরামহীন বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। কয়রার রিংবাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে কয়রা সদর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা। বাগেরহাটের চিতলমারীতে প্রবল জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে চিংড়ি ঘের তলিয়ে ভেসে যাচ্ছে মাছ। এখানে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

বরিশালের হিজলা থেকে মো: আব্দুল আলীম জানান, গত কয়েকদিন ধরে অনবরত বৃষ্টি ও প্রবল বাতাসে মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে হিজলা উপজেলা চরাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মেঘনা নদীর জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৭-৮ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে জলোচ্ছ¡াসের সৃষ্টি হয়েছে। এতে উপজেলার মেঘনা নদীর উপক‚লীয় এলাকা ও চরাঞ্চলসহ প্রায় অর্ধ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

ঝালকাঠি জেলা সংবাদদাতা জানান, সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ৫০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে বসতঘর ও বিভিন্ন স্থাপনায়। শহর ও গ্রামের রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় পানি ভেঙে যাতায়াত করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বসতঘরে পানি প্রবেশ করায় জেলার নদী তীরের বাসিন্দারা উঁচুস্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া থেকে এ এম মিজানুর রহমান বুলেট জানান, কলাপাড়ায় জোয়ারের পানিতে ভাসছে গ্রামের পর গ্রাম। সাগর ও নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের অন্তত ১৩ গ্রাম তলিয়ে গেছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে প্রতিদিনই দুই দফা পানি প্রবেশ করে তলিয়ে গেছে ফসলি জমিসহ মাছের ঘের।
ল²ীপুর থেকে এস এম বাবুল জানান, জোয়ারের তীব্র পানির চাপে ল²ীপুরের কমলনগর উপজেলার কমলনগরের মতিরহাট-তোরাবগঞ্জ সড়ক, লুধূয়া-হাজিরহাট সড়ক এবং লরেঞ্চ-নবীগঞ্জ এই তিনটি গুরুত্বপ‚র্ণ সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। জোয়ারে মতিরহাট-তোরাবগঞ্জ সড়কের প্রায় ৪০ ফুট রাস্তা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এছাড়াও মাতাব্বরহাট সড়ক, কদিরপÐিতের হাট সড়কসহ উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন