মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

করোনায় শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ থাকায় বাংলাদেশের শরণার্থী শিশুরা দুর্ভোগে- ইউনিসেফ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০২০, ১:১১ পিএম

মিয়ানমারে সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসার তিন বছর পর বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় অবস্থানরত লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশু এবং তাদের পরিবার এখন নতুন সঙ্কটের মুখোমুখি।

অবিশ্বাস্যরকমের কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও শিবিরগুলোতে করোনার হুমকি ঠেকাতে ও সামাল দেয়ার প্রচেষ্টায় শরণার্থী জনগোষ্ঠী সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে।

ইউনিসেফ দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক জিন গফ বলেন, বাংলাদেশে নির্বাসিত অবস্থায় থাকা এসব রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশু এবং পরিবারগুলো অসাধারণ দৃঢ়তা দেখিয়েছে। অকল্পনীয় রকম কঠিন পরিস্থিতিতে তারা রয়েছে যা মৌসুমি বৃষ্টি ও বৈশ্বিক মহামারির কারণে আরও কঠিন হয়ে উঠেছে এবং এই কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও শক্তি, সাহস ও অধ্যবসায় কী তা পরিবারগুলো প্রতিদিনই আমাদের শিখিয়ে চলেছে।

 

করোনা কক্সবাজার জেলায় বসবাসরত ৪ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা শিশুদের জীবনকে বাধাগ্রস্ত করে চলেছে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো মার্চ থেকে শিবিরগুলোতে শিক্ষা কেন্দ্রগুলো বন্ধ রয়েছে। প্রায় ৩ লাখ ১৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশু ও কিশোর-কিশোরী তাদের শিক্ষা কেন্দ্রের বাইরে রয়েছে। বাবা-মা ও সেবাদানকারীদের সম্পৃক্ত করে এবং ওয়ার্কবুক ও ভিজ্যুয়াল এইড প্রদানের মাধ্যমে বাড়িতে শিশুদের পড়াশোনায় সহায়তা করতে ইউনিসেফ ও তার সহযোগীরা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষকরা একইসঙ্গে করোনা সংক্রান্ত স্বাস্থ্য এবং হাইজিন বিষয়ক বার্তা দেওয়ার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে চলেছেন।

এর ফলশ্রুতিতে সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ৭৭ শতাংশ শিশু বাড়িতে সেবাদানকারীদের তত্ত্বাবধানে পড়াশোনার কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ছিল। তবে অনেক বাবা-মায়ের পড়তে ও লিখতে না পারার বিষয়টিসহ উল্লেখযোগ্য অনেক বাধা এখনও রয়ে গেছে এবং ইউনিসেফ শিশুদের পড়াশোনা এবং তথ্যের সঙ্গে যুক্ত রাখার জন্য বিকল্প উপায় অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে।

জিন গফ বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশুদের ভবিষ্যতের জন্য তাদের জ্ঞান ও দক্ষতা বিকাশের সুযোগ প্রয়োজন। এটি দীর্ঘমেয়াদে শান্তি ও স্থিতিশীলতায় অবদান রাখতে তাদেরকে সক্ষম করে তুলবে।

ভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তার রোধের প্রচেষ্টায় শিবিরে মানবিক সহায়তা কর্মীদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ইউনিসেফ এবং অন্যান্য মানবিক সংস্থাগুলো গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে নতুন উপায় খুঁজে বের করেছে। এই কার্যক্রমে রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবক ও বাংলাদেশী কর্মীরা অপরিহার্য ভুমিকা পালন করছেন এবং করোনা থেকে সর্বাধিক সুরক্ষা দিতে গুরুত্বপূর্ণ সেবা ও তথ্য প্রদানের সাথে কমিউনিটিগুলোকে সংযুক্ত করছেন।

গত মাস, ইউনিসেফ এবং সহযোগীরা ঘরে ঘরে গিয়ে ভিটামিন ‘এ’ সম্পূরক প্রদানে অভিযান পরিচালনা করে। ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী ১ লাখ ৫৪ হাজার শিশুর কাছে এই ভিটামিন ‘এ’ পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। যেসব শিশুকে লক্ষ্য করে এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে, তাদের ৯৭ শতাংশের কাছেই ভিটামিন ‘এ’ পৌঁছানো গেছে, যা বর্তমান মহামারী পরিস্থিতি ও ভারী মৌসুমি বৃষ্টিপাতের সময় বিবেচনায় দুর্দান্ত ফলাফল।

মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শিশুরা বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে চতুর্থ বর্ষে পা দিতে যাচ্ছে এবং এই পরিস্থিতিতে তাদের প্রত্যাবর্তন স্বপ্রণোদিত, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই করতে প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করতে হবে।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে গুরুতর প্রয়োজনের মুহুর্তে তাদের সুরক্ষা ও আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের প্রতি ইউনিসেফ তার কৃতজ্ঞতা পুনর্ব্যক্ত করছে। করোনার সময়ে প্রয়োজনগুলো আরও বেড়ে যাওয়ায় এবং একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য শরণার্থী শিশুদের আশা ও স্বপ্নগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে কক্সবাজারে শরণার্থী ও বাংলাদেশী উভয় জনগোষ্ঠীর প্রতি উদার সমর্থন অব্যাহত রাখার জন্য ইউনিসেফ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন