বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জোয়ারে নিঃস্ব উপকূলবাসী

খুলনায় ভেসে গেছে ৫ হাজার চিংড়ি ঘের

ইনকিলাব রিপোর্ট | প্রকাশের সময় : ২৬ আগস্ট, ২০২০, ১২:০২ এএম

উপকূলীয় এলাকায় গতকালও থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। ফলে উপকূলের মানুষের ভোগান্তি আরো বেড়েছে। এদিকে চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরি সার্ভিস চলছে জোয়ার-ভাটার ওপর ভরসা করে। পদ্মায় প্রবল স্রোতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি সার্ভিস চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। কুয়াকাটায় জোয়ারের ঢেউয়ে ভাঙনের তীব্রতা এতো বেশি যে বালুর নিচের সাবমেরিন ক্যাবলের অপটিক্যাল লাইন বের হয়ে গেছে। উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে ভেঙে গেছে সৈকতের লাগোয়া একটি আবাসিক হোটেলের একাংশ। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের চেয়ে জোয়ারের পানিতে বেশি ক্ষতি হয়েছে বাগেরহাটের চিংড়ি চাষিদের।

গত কয়েক দিনের অবিরাম বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে জেলার ৫ হাজার চিংড়ি ঘের। সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলা আশাশুনি ও শ্যামনগরের খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদের প্রবল জোয়ারের পানিতে জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে অর্ধশতাধিক গ্রাম। উপকূলীয় অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামত না করায় জোয়ারের পানি বাঁধ ভেঙে প্লাবিত করেছে গ্রামের পর গ্রাম। সর্বনাশা জোয়ার উপক‚লের মাছ ও চিংড়ি চাষিদের এরই মধ্যে পথে বসিয়ে দিয়েছে। তাদের করেছে নিঃস্ব। একই অবস্থা ফসল আবাদকারী কৃষকদেরও। উপক‚লের ফসল ভরা ক্ষেতে এখন শুধুই থৈ থৈ পানি। জোয়ারের পানি চাষিদের স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, গত রোববার মধ্যরাত থেকে জোয়ারের উচ্চতা হ্রাস পেতে থাকে। গতকাল সকাল থেকে সাগর উজানের বন্যার পানিও গ্রহণ করতে শুরু করেছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলসহ উপকূলভাগ ধীরে ধীরে প্লাবনমুক্ত হতে শুরু করলেও নতুন আরেকটি লঘুচাপ নিয়ে স্বস্তিতে নেই উপকূলবাসী। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতে, পানি হ্রাসের সাথে নদীভাঙনের তীব্রতাও বাড়বে। ফলে আগামী দু’তিনদিন দক্ষিণাঞ্চলের অনেক এলাকায়ই নদীভাঙন পরিস্থিতি নতুন সঙ্কট তৈরির আশঙ্কা রয়েছে।

গত কয়েক দিনের জোয়ারে দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার সবগুলোই পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। প্রায় সোয়া ৪ লাখ পুকুর, দীঘি থেকে কোটি কোটি মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। মাঠে থাকা ৩ লাখ হেক্টর জমির উঠতি আউশ ও রোপা আমন এবং বিভিন্ন ধরনের ফসল তলিয়ে গেছে। এ ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণে অন্তত ৫ লাখ কৃষক সর্বশান্ত হয়েছেন।

খুলনা ব্যুরো জানায়, টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত ও বেড়িবাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বৃহত্তর খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জনজীবন। চলতি বর্ষা মৌসুমে গত কয়েকদিনের বিরামহীন বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের চেয়ে জোয়ারের পানিতে বেশি ক্ষতি হয়েছে বাগেরহাটের চিংড়ি চাষিদের। গত কয়েক দিনের অবিরাম বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে জেলার ৫ হাজার চিংড়ি ঘের। এর ফলে শত কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। সাতক্ষীরার উপক‚লীয় উপজেলা আশাশুনি ও শ্যামনগরের খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদের প্রবল জোয়ারের পানিতে জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে অর্ধশতাধিক গ্রাম। ভেসে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি। পানিতে ভেসে গেছে গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগি। ধসে পড়েছে শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি। অপরদিকে, ভারি বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে সুন্দরবনের অন্যতম পর্যটন স্থান চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকা।

ঝালকাঠি জেলা সংবাদদাতা জানান, সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। শহরের রাস্তাঘাট থেকে পানি নামলেও বেড়িবাঁধ ভেঙে এখনো তলিয়ে আছে নিচু এলাকা। কাঁঠালিয়া উপজেলার বিষখালী নদীর অরক্ষিত বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়েছে বসতঘর, মাছের ঘের ও ফসলের ক্ষেতে। এ উপজেলার ২৫ গ্রামের মানুষ এখনো পানিবন্দি। এদিকে বন্যায় দুই শতাধিক মাছের ঘের ও এক হাজারেরও বেশি ছোট-বড় পুকুর তলিয়ে ভেসে গেছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ঘেরের মালিকরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন