ইসরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনে চুক্তির পরে দুই দেশের মধ্যে টেলিফোন সেবা চালু করেছে ইসরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। এবার আমিরাতের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট চালাবে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল।
মার্কিন কর্মকর্তারা গতকাল মঙ্গলবার জানিয়েছেন, ইসরায়েল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে বাণিজ্যিক ফ্লাইট আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হবে। প্রথম ফ্লাইটে মার্কিন এবং ইসরায়েলি প্রতিনিধিদের আবুধাবি নিয়ে যাওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তারা। খবর আল আরাবিয়ার।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা এল-আলর একটি বিমান ওই ফ্লাইট পরিচালনা করবে। ওই ফ্লাইটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিনিয়র উপদেষ্টা এবং জামাতা জেরাড কুশনার এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ওব্রায়েন থাকবে বলে জানা গেছে।
গত সোমবার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করবে তার দেশ। সউদী আরবের আকাশপথ ব্যবহার করে এই ফ্লাইট চালানো হবে।
আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে ওয়াশিংটনে দুই পক্ষ চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার পদক্ষেপের মধ্যে অন্যতম এক দেশ আরেক দেশে দূতাবাস চালু করবে।
এদিকে ইসরায়েল ও আমিরাতের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক উন্নয়নের তাগিদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল মঙ্গলবার আবুধাবির যুবরাজ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডি ফ্যাক্টো শাসক মোহাম্মদ বিন জায়েদ (এমবিজেড)-এর সঙ্গে এক ফোনালাপে এমন তাগিদ দেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফোনালাপে ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাতের সম্পর্ক স্বাভাবিক করা সংক্রান্ত চুক্তির বিষয়ে কথা হয়েছে।
আমিরাতের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা বিষয়াদি নিয়েও দুই নেতার কথা হয়েছে। উভয়েই বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইসরায়েল ও আমিরাতের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
মধ্যপ্রাচ্য সফরের অংশ হিসেবে সোমবার ইসরায়েল পৌঁছান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাতের পর মঙ্গলবার সরাসরি ফ্লাইটে তিনি আমিরাতের মিত্র সুদানে পৌঁছান। ইসরায়েল থেকে খার্তুমে এটিই প্রথম কোনও সরাসরি ফ্লাইট।
এদিকে ইসরায়েলের সঙ্গে প্রকাশ্য সম্পর্ক উন্নয়নে আমিরাত মরিয়া চেষ্টা চালালেও এরইমধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান সংগ্রহে অনেকটা মরিয়া সংযুক্ত আরব আমিরাত। তবে খোদ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আমিরাতের কাছে এই যুদ্ধবিমান বিক্রির প্রকাশ্য বিরোধিতা করেছেন। এর জেরে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আমিরাতের এফ-৩৫ কেনার উদ্যোগ ভেস্তে যেতে শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের সামরিক আধিপত্য নিশ্চিত করবে যুক্তরাষ্ট্র।
এর আগে আমিরাতের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণার পুরস্কার হিসেবে দেশটির কাছে এই যুদ্ধবিমান বিক্রির ঘোষণা দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এখন নেতানিয়াহুর বিরোধিতার মুখে দৃশ্যত সেটি ভেস্তে গেছে।
সোমবার পম্পেও-র সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনেও এ নিয়ে কথা বলেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, আমিরাতের সঙ্গে তার দেশের যে চুক্তি হয়েছে তাতে ইসরায়েল আমিরাতকে কোনও অস্ত্র চুক্তির অনুমোদন দেবে; এমন কথা বলা নেই।
নেতানিয়াহু সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তার দেশ আরব দেশগুলোর কাছে অগ্রসর প্রযুক্তির মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম রফতানির বিরোধী। এটা যে কোনও আরব দেশের জন্য; এমনকি যারা ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করেছে তাদের জন্যও প্রযোজ্য।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন