বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে বছরে ৬৫ লাখ মানুষ দরিদ্র হচ্ছে

স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশগম্যতা শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা

প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে দেশে প্রতি বছর ৬৫ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে রোগীরা তাদের চিকিৎসার ৬৫ শতাংশ ব্যয়ই নিজেদের পকেট থেকে করেন। আর তাই আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা (ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ) নিশ্চিত করতে হলে সারা দেশে প্রতিষ্ঠিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে হবে। এদিকে দেশের ৩১-৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থায়ী ও অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত ২১ থেকে ৩৫ জন ডাক্তারের পোস্টিং থাকলেও এদের মধ্যে নিয়মিত ৩ থেকে ৫ জন ডাক্তার সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকেন। অবশিষ্ট ডাক্তাররা নিয়মিত কর্মস্থলে আসেন না। এর বাইরে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও এমবিবিএস ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হয়েছে কিন্তু সেখানেও একই অবস্থা। এদের খুব কম সংখ্যককে কর্মস্থলে পাওয়া যায়। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই।
বনানীর পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে দি ঢাকা ফোরাম আয়োজিত ‘ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ, হাউ টু মোভ ফরোয়ার্ড ইন বাংলাদেশ?’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. মোজাহেরুল হক উপরিউক্ত সুপারিশ করেন।
দি ঢাকা ফোরামের প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি প্রফেসর ডা. রশিদ-ই মাহবুব, সাবেক স্বাস্থ্য সচিব মো. নাসির উদ্দিন, অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক এমডি সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত এফ এ শামীম আহমেদ, ড. মাহবুব জামিল, সাবেক রাষ্ট্রদূত ইফতিখারুল করিম, সাবেক রাষ্ট্রদূত মাসুদ আজিজ, সাবেক রাষ্ট্রদূত শাহেদ আখতার, ল্যাব এইডের এমডি ডা. শামীম আহমেদ, ব্র্যাকের স্বাস্থ্য পুষ্টি ও জনসংখ্যা বিভাগের পরিচালক ড. রাইসুল হক প্রমুখ।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, আজকাল আদর্শ ও কার্যকর সমাধানের মধ্যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সমাজে সম্মানের জায়গাগুলো ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। গ্রামে ডাক্তারদের ধরে রাখার জন্য পুলিশি চিন্তা করলে হবে না। তাদের জন্য সম্মানজনক সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। তিনি বলেন, শহুরে বস্তির মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা থাকলেও এদের স্বাস্থ্য সুবিধা গ্রামের চেয়ে খারাপ। নগরের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে ন্যাস্ত করার সুপারিশ করেন ড. জিল্লুর। তিনি বলেন, আজকাল চিকিৎসায় ওষুধের খরচ বেশি হয়ে যাচ্ছে। ওষুধ কোম্পানি ও ডাক্তারদের মধ্যে কিছু দুষ্টুচক্র তৈরি হয়ে গেছে যারা অনৈতিক অভ্যাসে জড়িয়ে পড়েছে। প্রেসক্রিপশনে বেশি ওষুধ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ করতে হবে।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সকলের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সারা দেশে চার হাজার ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে শুরু করতে হবে। এগুলো এখন আর কার্যকর নয়। তিনি বলেন, উপজেলায় এমপির নেতৃত্বে একটি স্বাস্থ্য কমিটি আছে কিন্তু তাদের কোনো কর্তৃত্ব নেই। এদের অথবা সিভিল সার্জনকে ডাক্তারদের উপর কর্তৃত্ব দিলে উপজেলায় ডাক্তার থাকবে। তিনি বলেন, উপজেলায় অস্ত্রোপচারের জন্য অজ্ঞান করার ডাক্তার নিয়োগ দিতে হবে। প্রয়োজনে স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষণ দিয়ে অজ্ঞান করার ডাক্তার বানাতে হবে।
প্রফেসর রশীদ-ই মাহবুব বলেন, বাংলাদেশের মানুষ নিজের পকেট থেকে অনেক টাকা খরচ করে চিকিৎসার জন্য। ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হলে সরকারকে সকল নাগরিকের চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগ প্রচুর কিন্তু সেখানে মানসম্মত চিকিৎসা দেয়া হয় না।
মো. নাসির উদ্দিন বলেন, সবার জন্য সেবা নিশ্চিত করতে হবে ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের দেশের সমস্যা হলো-সরকার পরিবর্তন হলে স্বাস্থ্যের অগ্রাধিকারও পরিবর্তন হয়ে যায়। ডা. শামীম বলেন, ডাক্তার ক্যাশ, চেক এবং সুবিধা নেয়া বন্ধ করে দিতে পারলে চিকিৎসা ব্যয় কমে যাবে। ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ কিছু সুনিদিষ্ট সুপারিশ করেন আলোচনার ভিত্তিতে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য বাজেট বাড়াতে হবে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে কার্যকর করতে হবে, রেফারাল সিস্টেম চালু করতে হবে, শুধু সরকারিভাবে নয় বেসরকারিভাবেও এগিয়ে আসতে স্বাস্থ্যসেবায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন