বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ফ্রি-ল্যান্সিংয়ের স্বীকৃতি ও সম্ভাবনা

| প্রকাশের সময় : ২৭ আগস্ট, ২০২০, ১২:০১ এএম

সামগ্রিকভাবে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে দীর্ঘস্থায়ী মন্দার মধ্যে দেশের লাখ লাখ শিক্ষিত তরুণ-তরুণীর আত্মকর্ম সংস্থানের বড় প্লাটফর্ম হয়ে উঠেছে ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং। সামান্য বেতনের চাকরির জন্য দ্বারে দ্বারে না ঘুরে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জনের মধ্য দিয়ে ঘরে বসে ফ্রি-ল্যান্সিং করে মাসে লাখ টাকা কামাই করছে হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু এই পেশার সামাজিক-প্রশাসনিক স্বীকৃতি না থাকায় ফ্রিল্যান্সার তরুণ-তরুণীরা সামাজিকভাবে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এ বিষয়ে ফ্রিল্যান্সারদের বিয়ে এবং ব্যাংক লেনদেনের ক্ষেত্রে নানাবিধ প্রশ্ন ও হয়রানির সম্মুখীন হওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ফিল্যান্সারদের পেশার স্বীকৃতি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাশেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় গড়ে ওঠা ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল পাচ্ছে এখন দেশের সব মানুষ। শুধু তাই নয়, হাজার হাজার শিক্ষিত বেকারের আত্মকর্ম সংস্থানের উজ্জ্বল ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে ডিজিটাল বা অনলাইন প্লাটফর্ম। দেশের প্রায় সব মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন, ফোরজি নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট এক্সেস প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্পের ফসল। এ প্রসঙ্গে যার কথা উল্লেখ না করলেই নয়, তিনি হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর পুত্র ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়। তরুণ মেধাবী তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য। অত্যন্ত দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একটি পরিকল্পনার আওতায় বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।

করোনাভাইরাস মহামারীতে হঠাৎ সারাবিশ্ব থমকে দাঁড়িয়েছে। সব সামাজিক-অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে কর্মসম্পাদনের একমাত্র বিকল্প মাধ্যম অনলাইন। কোটি কোটি মানুষের হাতে মোবাইলফোন, ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং উচ্চ কানেক্টিভিটির কারণে বাংলাদেশের মানুষ করোনা দুর্যোগের সময়টাতে ঘরে বসে কাজ সমাধার সুযোগ পেয়েছে। দারিদ্র্য ও সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থানের ক্ষেত্রে বৈষম্যের কথা বাদ দিলেও স্কুল-কলেজের কোটি কোটি শিশু-কিশোর শিক্ষার্থী অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার সুযোগ পেয়েছে। স্কুল-কলেজ, মার্কেট-শপিংমল, গণপরিবহণ বন্ধ থাকলেও অনলাইনে কেনাকাটা, ব্যবসা-বানিজ্য, জরুরী চিকিৎসা সেবা, ওয়েবিনারে সভা-সমাবেশ, মত বিনিময় এবং নানাবিধ সামাজিক, সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার এই সক্ষমতা ও অবকাঠামোগত ব্যবস্থাপনার পেছনে রয়েছে সরকারের ডিজিটালাইজেশন রূপরেখার সফল বাস্তবায়ন। ই-কর্মাসের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রচলিত বা কনভেনশানাল পণ্যসম্ভারের পাশাপাশি অপ্রচলিত অনেক পণ্য আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টিতে সহায়ক হচ্ছে। করোনাকালে সরকারি কাজকর্মে তেমন কোনো ঘাটতি দেখা যায়নি। মন্ত্রীপরিষদের নিয়মিত বৈঠক, একনেক বৈঠকে অনলাইনের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী সব সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা দিচ্ছেন। করোনাভাইরাস মহামারীতে মানুষের তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভরতা আমাদের সামাজিক-অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছে। বলতে গেলে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশে এক প্রকার বিপ্লব ঘটে গেছে। অনলাইন মাধ্যমগুলো মানুষের কাছে উন্মুক্ত না থাকলে করোনাকালীন দুর্যোগ ঘরবন্দি মানুষের জন্য আরো দুর্বিষহ হয়ে উঠত।

একটি বিদেশি সংস্থার জরিপে দেখা যায়, সারাবিশ্বের আউটসোর্র্সিং কর্মকান্ডের প্রায় ১৬ ভাগ বাংলাদেশ থেকে করা হয়। তবে প্রধানত ভারতীয় মাধ্যম হয়ে এ দেশের ফ্রিল্যান্সারদের কাজ করতে গিয়ে নানাবিধ হয়রানি ও বঞ্চনার শিকার হতে হয়। উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা, পরিবেশ ও অবকাঠামোগত সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করা হলে দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং সাশ্রয়ী মূল্যে কাজ করে দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তরুণ উদ্যোক্তা ও ফ্রিল্যান্সারদের সম্ভাবনাকে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবেনা। সরকারি নীতি-নির্দেশনা ছাড়াই দেশের হাজার হাজার তরুণ-তরুণী যে হারে ফ্রিল্যান্সিংয়ে জড়িয়ে কোটি কোটি ডলারের বৈদেশিক মূদ্রা আয় করছে, সঠিক দিক নির্দেশনা, স্বীকৃতি ও সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হলে এ খাতের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা আরো অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে। উন্নত প্রশিক্ষণ, স্বল্পমূল্যে কম্পিউটার-ল্যাপটপ সরবরাহ এবং স্বল্পমূল্যে উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করা হলে দেশের আউটসোর্সিং খাত ভারত, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কার মত প্রতিদ্বন্দ্বি দেশগুলোকে পেছনে ফেলে বিশ্ববাজারে অন্যতম নিয়ন্ত্রক শক্তি হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশ। সরকারের পক্ষ থেকে এ খাতের প্রশিক্ষণ এবং ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোক্তাদের সঠিক গাইডলাইন, অর্থনৈতিক সুযোগসুবিধা ও প্রনোদনা দিতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোগগুলোর অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন