বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

জাতীয় মহাসড়কের নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৮ আগস্ট, ২০২০, ১২:০৩ এএম

জাতীয় মহাসড়ক যে কোনো দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা, পণ্য পরিবহন, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকের ভূমিকা পালন করে। মহাসড়কগুলো রাজধানী ও বিভাগীয় শহরগুলোর সাথে যোগাযোগের মূল সেতুবন্ধ। এ ক্ষেত্রে ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কটি আমাদের বাণিজ্য ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে লাইফলাইন হিসেবে কাজ করছে। দেশের আমদানি-রফতানির শতকরা আশিভাগই এই মহাসড়কের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়ে থাকে। এ কারণেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা এবং গতিশীলতা আমাদের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একেকটা জাতীয় মহাসড়কের নিরাপত্তা এবং ব্যবস্থাপনার পেছনেও বছরে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা এবং পরিচ্ছন্নতাই প্রতিটা মহাসড়ক ব্যবস্থাপনার মূল লক্ষ্য হলেও আদতে তা কতটুকু রক্ষিত বা অর্জিত হচ্ছে তা দেখার যেন কেউ নেই। একদশকের বেশি সময়ের নিরন্তর প্রয়াসে বিপুল ব্যয়ে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উন্নয়ন ও চারলেনে উন্নীতকরণের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও এই মহাসড়কের নিরাপত্তা, গতিশীলতা, সৌন্দর্য ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত হওয়ার প্রত্যাশা এখনো পূরণ হয়নি।

গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বিভিন্ন স্থানে ময়লার স্তূপ জমে রয়েছে। সম্প্রতি সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে যথাশীঘ্র মহাসড়কের পাশ থেকে ময়লার ভাগাড় সরিয়ে পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়ার পরও তা বাস্তবায়ন হয়নি। যদিও জাতীয় মহাসড়কের নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি কোনো মন্ত্রীর নির্দেশের বিষয় নয়। এটি একটি বিধিবদ্ধ প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব পালনের বিষয়। সব দেশেই মহাসড়কের জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনা ও ট্রাফিক সিস্টেম থাকে। পুরোপুরি না হলেও আমাদের দেশেও হাইওয়ে পুলিশ, সড়ক ও সেতু বিভাগ কার্যকর রয়েছে। কিন্তু খোদ সেতু ও সড়কমন্ত্রীর নির্দেশের পরও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ময়লার স্তূপ ও ভাগাড় পরিষ্কার না হওয়ার মধ্য দিয়ে বুঝা যাচ্ছে, এসব কর্মকান্ডের সাথে যারা জড়িত তারা যথেষ্ট প্রভাবশালী ও বেপরোয়া। দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম মহাসড়কটির হাল অবস্থা থেকে অন্যান্য জাতীয় মহাসড়কের অবস্থা আঁচ করা যায়। ময়লার ভাগাড় ছাড়াও স্থানে স্থানে অবৈধ স্থাপনা, হাট-বাজার, পার্কিংসহ নানাভাবে দখলদারিত্ব কায়েম করা হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে চলা এসব দখলদারিত্বের উচ্ছেদ এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে কখনো কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় তারা ক্রমশ আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত একটি ভার্চুয়াল কনফানেন্সে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কুমিল্লা জোনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে কৈফিয়ত চেয়েছেন। শুধু মৌখিক কৈফিয়ত চাইলেই হবে না দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

দেশের সড়ক-মহাসড়কের নিরাপত্তা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিদিনের সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের রিপোর্টগুলো দেখলেই বুঝা যায়। নিরাপদ সড়কের দাবিতে ২০১৮ সালে সারাদেশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে এসেছিল। দেশের প্রায় সব মানুষ, রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন তাদের সেই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন ও একাত্মতা প্রকাশ করেছিল। সে আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বহুল প্রতিক্ষিত নতুন সড়ক পরিবহন আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন ও বাস্তবায়ন শুরু হয়। সে বছর অক্টোবরের ২২ তারিখে বিআরটিএ’র উদ্যোগে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘটা করে নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত হয়। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নানাবিধ প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। দুই বছর পেরিয়ে এসে আজ দেখা যাচ্ছে, দেশের প্রধান জাতীয় মহাসড়কে ময়লার স্তূপ ও অবৈধ দখলদারিত্ব আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এবং আর্থ-সামাজিক বাস্তবতার প্রত্যাশিত উন্নয়নের স্বার্থেই জাতীয় মহাসড়কগুলোকে পরিচ্ছন্ন, গতিশীল ও দখলমুক্ত করতে হবে। মহাসড়ক মানেই যাতায়াতের দীর্ঘ পথ। প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মহাসড়কে অবস্থান করতে হয়। সেখানে সড়কের পাশে ময়লার দুর্গন্ধযুক্ত ভাগাড়, অবৈধ গ্রাম্য হাট-বাজার বা বাস-ট্রাকের পার্কিংয়ে দখলদারিত্ব কায়েম হলে মানুষের দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। অবিলম্বে এ সব দখলদারিত্ব বন্ধ করতে হবে। গতানুগতিক নির্দেশনায় কাজ হয় না। এ জন্য প্রয়োজন কঠোর ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ। জনগণের ট্যাক্সের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেও মহাসড়কের রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তায় এহেন চরম ব্যর্থতা মেনে নেয়া যায় না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন