শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লেনদেন কমেছে পুঁজিবাজারে

প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : গুলশানে জঙ্গি হামলার প্রভাব পড়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। ফলে এক মাসের ব্যবধানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লেনদেন কমেছে। এর মধ্যে বিক্রির পরিমাণ বেশি বলেই সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। ফলে পুঁজিবাজারে কমে গেছে বিদেশি বিনিয়োগ। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টের হামলায় পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিনিয়োগ কমলেও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন বলে তাদের ধারণা।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসই সূত্রে জানা যায়, গুলশান ট্র্যাজেডির মাসে (জুলাই) ডিএসইতে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের লেনদেন হয়েছে ৫৫২ কোটি ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫২৭ টাকা, যা আগের মাসের (জুন) চেয়ে ২১৬ কোটি ৪৬ লাখ ৫৫ হাজার ৩৮৩ টাকা কম। জুনে লেনদেন হয়েছিল ৭৬৮ কোটি ৪৭ লাখ ৯৩ হাজার ৯১০ টাকা।
আর বিদায়ী অর্থবছরে (২০১৫-১৬) ডিএসইতে মোট বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লেনদেন হয় ৮ হাজার ৮৩ কোটি ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৮ টাকার শেয়ার। এর আগের অর্থবছরে (২০১৪-১৫) লেনদেন হয়েছিল ৬ হাজার ৯৯১ কোটি ২৯ লাখ ৯৮ হাজার ৯২৫ টাকার শেয়ার।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গি হামলার পরই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লেনদেন অনেক কমে যায়। এতে জুলাই মাসের প্রথমার্ধে লেনদেন হয় ১৬৬ কোটি ১৬ লাখ ৭৯ হাজার ৭৩২ টাকা। আর দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা গতি আসে লেনদেনে। সে সময় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা লেনদেন করে ৩৮৫ কোটি ৮৪ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯৫ টাকা।
এদিকে জুন মাসের প্রথমার্ধে লেনদেন হয় ৪০৬ কোটি ৭৫ লাখ ৬৫ হাজার ৭৪ টাকা। আর দ্বিতীয়ার্ধে লেনদেন হয় ৩৬১ কোটি ৭২ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩২ টাকা।
বিদেশি বিনিয়োগ বাজারের গভীরতা বাড়ায় এমন মত ব্যক্ত করে বাজার সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, দেশের নিরাপত্তা, বাজারের সম্ভাবনা ও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন। যখন নিরাপত্তার ঘাটতি দেখা দেয়, তখন তারা বিনিয়োগ কমিয়ে দিতে চান। তবে শিগগিরই এ অবস্থার উন্নতি হবে বলে আশা করছেন তারা।
জুলাই মাসে বিদেশি বিনিয়োগ কমার পেছনে জঙ্গি হামলা ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা, তারা বলেছেন, বিদেশিরা সাধারণত ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ করে থাকে। কিন্তু গত কয়েক বছরে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি বাজারে আসেনি। অথচ অনেক বিদেশি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা করছে। ভারতে বিদেশি কোম্পানি ব্যবসা করতে চাইলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি বাধ্যবাধকতা রয়েছে; কিন্তু আমাদের দেশে নেই। বাজারে ভালো শেয়ারের সংকট রয়েছে। বিদেশিরা বিনিয়োগ করলে অনেক সময় বাজারে গতি ফেরে। তাদের দেখাদেখি দেশি বিনিয়োগকারীরা আশান্বিত হয়ে বাজারে আসে।
এদিকে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ কমলেও জঙ্গি হামলার নেতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়েনি বলে দাবি করছেন ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বলেন, আমাদের শেয়ারবাজারের প্রতি বিদেশিদের আগ্রহ আছে। গত কয়েক মাসে দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশিদের বিনিয়োগ বেড়েছে। আর প্রতি মাসেই যে বাড়বে এমনটা ঠিক না।
গত সপ্তাহের লেনদেনে ডিএসই’র সব সূচকে উত্থান
গত সপ্তাহের লেনদেনে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সব ধরনের সূচকে উত্থান হয়েছে। এসময় ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স, শরিয়াহ সূচক, ডিএসই-৩০ সূচক, আর্থিক লেনদেন, মূল্য-আয় (পিই) ও বাজার মূলধন বেড়েছে। ডিএসই’র ওয়েবসাইট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ সময়ে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৩৯ দশমিক ৩১ পয়েন্ট বা ০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫৭৭ দশমিক ৫৭ পয়েন্টে। এ ছাড়া গত সপ্তাহে ডিএসই-৩০ সূচক ২৩ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট ও ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১১ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট বেড়েছে। গত সপ্তাহের ৫ কার্যদিবসে ডিএসইতে ২ হাজার ২১৬ কোটি ৫২ লাখ টাকার আর্থিক লেনদেন হয়েছে। যার পরিমাণ আগের সপ্তাহে ছিল ১ হাজার ৯৬৩ কোটি ১২ লাখ টাকা। মোট লেনদেনের ৯২ দশমিক ৯১ শতাংশ ‘এ’ ক্যাটাগরিভুক্ত, ১ দশমিক ৮০ শতাংশ ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত, ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ ‘এন’ ক্যাটাগরিভুক্ত এবং ০ দশমিক ৬১ শতাংশ ‘জেড’ ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে লেনদেন হয়েছে।
ডিএসইতে ৩২৮টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এরমধ্যে দর বেড়েছে ১৬৪টি’র, কমেছে ১৩২টি’র ও অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২টি’র। গত সপ্তাহের লেনদেনে ডিএসই’র মূল্য-আয় (পিই) অনুপাত বেড়েছে ০ দশমিক ০৬ পয়েন্ট বা ০.৪১ শতাংশ। সপ্তাহের শুরুতে পিই ছিল ১৪ দশমিক ৭৮। যা বর্তমানে রয়েছে ১৪ দশমিক ৮৪ পয়েন্টে। এ সময়ে বাজার মূলধন বেড়েছে ০ দশমিক ৩৩ শতাংশ। সপ্তাহের শুরুতে ডিএসই’র বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ২২ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। সপ্তাহের শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ২৩ হাজার ৩০২ কোটি টাকায়।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন