মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ইমাম হোসাইন (রা.) -এর আত্মত্যাগের মর্মকথা

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ২৮ আগস্ট, ২০২০, ১২:০১ এএম

পৃথিবীর ইতিহাসে কারবালা হত্যাকান্ডের মতো নির্মম ও জঘন্য হৃদয়বিদারক রক্তপাত হওয়ার নজির খুঁজে পাওয়া যায় না। কেন যায় না এবং কি জন্য যায় না, আসুন, এবার তার তত্ত্ব ও মর্ম উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। সকল অবস্থায় আল্লাহপাকই আমাদের সহায়।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, নবী করিম সা. হিজরী একাদশ সালের ১২ রবিউল আউয়াল ইন্তেকাল করেন। দুনিয়া হতে পর্দা করার পূর্বে তিনি মসজিদে নববীর মিম্বরে বসে ঘোষণা করেছিলেন, ‘‘আমার ইন্তেকালের পর ‘খিলাফাতুন আলা মিনহাজিন নবুওয়াত’ অর্থাৎ নবুওয়াতের প্রশাসনিক রূপরেখা অনুসারে প্রতিনিধিত্বসুলভ শাসনব্যবস্থা ত্রিশ বছর যাবত অব্যাহত থাকবে। তারপর এই শাসনব্যবস্থা ‘আমারত’ অর্থাৎ রাজতন্ত্রের রূপ পরিগ্রহ করবে।’’ এই ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতা সাধিত হয়েছিল সাইয়্যেদেনা হযরত ইমাম হাসান (রা.)-এর খলীফার পদ পরিত্যাগের মাধ্যমে। যার মূলে ছিল কুটিল ষড়যন্ত্রের এক অন্ধকার প্রতিচ্ছায়া।

এই সুবাদে হযরত মুয়াবিয়া (রা.) খলীফা পদে সমাসীন হন এবং নিজেকে ‘আমীর’ উপাধিতে বিভ‚ষিত করেন। এতে করে ‘খিলাফাতুন আলা মিনহাজিন নবুওয়াত’-এর পরিসমাপ্তি ঘটে। এই বিষয়টি আরো প্রকট রূপ ধারণ করে হযরত মুয়াবিয়া (রা.) কর্তৃক স্বীয় পুত্র এজিদকে খলীফা বলে ঘোষণার মাধ্যমে। এতসব ষড়যন্ত্র ও দুনিয়ালোভী কার্যক্রম সাইয়্যেদেনা হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)-কে ব্যথিত ও মর্মাহত করে তুলেছিল। তিনি মনে-প্রাণে খিলাফাতুন আলা মিনহাজিন নবুওয়াতকে পুন: প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন এবং সত্য, ন্যায় ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন।

তাই তিনি অগণতান্ত্রিকভাবে ঘোষিত খলীফা এজিদের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করাকে ঘৃণাভরে বর্জন করেছিলেন। তার এই দৃঢ় প্রত্যয় সম্ভূত ন্যায় ও কল্যাণবহ আকুতি প্রকাশ পেয়েছিল স্বীয় স্বজনদের অনুরোধের উত্তরে। তিনি দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, যে খেলাফত নবুওয়াতের ক্রমধারাপুষ্ট ব্যবস্থার বিপরীত, তা আমি এবং আমরা মেনে নিতে পারি না। এর জন্য যে কোনো পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে আমরা প্রস্তুত। কেননা, আমরা আল্লাহর অনুগত বান্দাহ এবং বিশ্বনবী মোহাম্মাদ (সা.)-এর নবুওয়াত ও রিসালাতের প্রতি একান্তই বিশ্বাসী এবং শ্রদ্ধাশীল। এর ব্যতিক্রম কোনো কিছু আমরা কখনোই মেনে নেব না।

কারবালা ময়দানে যুদ্ধের পূর্বক্ষণে তিনি এজিদপক্ষীয় সৈন্য ও কুফাবাসীদের লক্ষ করে বলে ছিলেন, আমি কে তা আপনাদের অজানা নয়। আমি পরকালে জান্নাতি যুবকদের সর্দাররূপে বরিত হব। আমাকে কুফা আগমনের জন্য আপনারাই বহু আমন্ত্রণপত্র প্রেরণ করেছিলেন। কিন্তু আজ আপনারা এসব কথা বেমালুম ভুলে গেছেন কেন? এই কেন এর সদুত্তর প্রতিপক্ষের দিক থেকে উচ্চারিত হয়নি। বরং তারা তীর নিক্ষেপের মাধ্যমে সত্যোজ্জ্বল কিরণ ধারাকে নির্বাপিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল, যা কালের খাতায়, ইতিহাসের পাতায় কলঙ্ক-কালিমার পঙ্কিল আবর্তে চিরকাল ঘুরপাক খেতে থাকবে।

বস্তুত সাইয়্যেদেনা হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) খিলাফাতুন আলা মিনহাজিন নবুওয়াতকে চির উন্নত ও চির প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই ধূসর কারবালার তপ্ত মরুর দাবদাহ ও ক্ষুৎ-পিপাসার জ¦ালা সহ্য করে আল্লাহর রাস্তায় জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি জানতেন, এই পথে বুকের রক্ত অকাতরে বিলিয়ে যে দিতে পারে, সে-ই পরকালে কামিয়াবী ও সফলতা লাভে ধন্য হবে এবং আল্লাহপাকের কুরবত ও নৈকট্যের শামিয়ানার নিচে আশ্রয় গ্রহণের সুযোগ লাভ করবে। এর কোনো অন্যথা হবে না।

আমরা এ-ও জানি যে, খিলাফাতুন আলা মিনহাজিন নবুওয়াত অবশ্যই দুনিয়াতে পুন: প্রতিষ্ঠিত হবে। এই খিলাফতের ঘোষণা পবিত্র কাবা গৃহের ছাদে দাঁড়িয়ে হযরত জিব্রাঈল (আ.) প্রদান করবেন। তিনি বলবেন, ‘হাজা খালিফাতুল্লাহিল মাহদিয়্যি, ফাআবিহু ওয়াত্তাবিয়ূহু’ অর্থাৎ তিনিই হচ্ছেন, আল্লাহর খলীফা মাহদি আ.। তোমরা তার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করো। চলতি হিজরী ১৪৪২ সালের পৈঠায় দাঁড়িয়ে আমরা এর প্রতীক্ষার প্রহর গুনে চলেছি। জানি না, সেই মধুময় ক্ষণ আমাদের জীবনে দেখা দেবে কি না। তবুও ‘আশায় মোরা বাঁধছি বাসা মর্তবাসী ক্ষুদ্র নর।’ আল্লাহপাক আমাদের সহায় হোন। আমীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Mohammad Sirajullah, M.D. ২৮ আগস্ট, ২০২০, ২:১৮ এএম says : 0
I am sorry to note that the narrater might have made some mistake. It was stated that the Prophet said that unto 30 years the Khilafat will be on the basis of election and after 30 years it will be on the basis of yers it will be on the basis of inheritance. If it is true why we are trying to establish election for khilafat. Is it self contradictory ?
Total Reply(0)
Bangladesh ২৮ আগস্ট, ২০২০, ৩:২০ এএম says : 2
Muslim is ended by France and British, America started destroyed Muslim after them.
Total Reply(0)
কে এম শাকীর ২৮ আগস্ট, ২০২০, ৪:১৭ এএম says : 0
আল কোরআনে ইশারা দেওয়া হয়েছে যারা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শত্রুতা করবে আহলে বাইতের বিরোধিতা করবে আসলে তারাই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
Total Reply(1)
৩০ আগস্ট, ২০২০, ১১:৫৪ এএম says : 0
হোসাইন এনায়েত ২৮ আগস্ট, ২০২০, ৪:১৮ এএম says : 0
কারবালায় ১০ মহররম আহলে বাইতের বিপুলসংখ্যক সদস্যের শাহাদাতবরণ সত্ত্বেও তাদের আদর্শ নিশ্চিহ্ন হওয়ার বদলে আরও উজ্জীবিত হয়েছে। নবীবংশের বিরুদ্ধে যারা অস্ত্র ধরেছিল তারাই কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়েছে। মানুষ তাদের ১৪০০ বছর পরও দেখে ঘৃণার চোখে।
Total Reply(0)
কায়সার মুহম্মদ ফাহাদ ২৮ আগস্ট, ২০২০, ৪:১৮ এএম says : 0
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতদের কাছে মহররমের তাৎপর্য অপরিসীম। এ মাসের ১০ তারিখে ইরাকের কারবালা প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শহীদ হন রসুল-দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)
Total Reply(0)
কামাল রাহী ২৮ আগস্ট, ২০২০, ৪:১৯ এএম says : 0
ইয়াজিদকে খলিফা হিসেবে ঘোষণার বিরোধিতা করে কুফার দেড় শতাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তি ইমাম হোসাইন (রা.)-এর আনুগত্য স্বীকার করে চিঠি লেখেন ও তাঁকে কুফা গমনের আমন্ত্রণ জানান। হজরত হোসাইন (রা.)-এর কুফা সফরের প্রস্তুতিতে ইয়াজিদ শিবিরে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। তারা কুফার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়ে তাদের নিজেদের পক্ষে আনার চেষ্টা করে। এ অপচেষ্টা সাময়িকভাবে সফলও হয়
Total Reply(0)
elu mia ২৮ আগস্ট, ২০২০, ১১:২২ এএম says : 0
মুয়াবিয়া (রা.) কোন ষড়যন্ত্র করেন নাই।আর তিনি খিলাফত বেবস্থার বিলুপ্তি ঘটান এটাও ভুল কথা।উনি এয়াজিদ কে বেস কিছু কারনে খলিফা নিজুক্ত করেন,তার মধ্য একটা হল তার উমাইয়া বংশের লোকরা তখন অনেক প্রভাবশালি হয়ে পরে,এবং তারা ইয়াজিদ বেতিত অন্য কাওকে খলিফা হিসেবে দেখতে চান না।ইয়াজিদ কে খলিফা না করলে গণ্ডগল বাধবে এই ভয়ে তিনি ইয়াজিদকে খলিফা বানান।আর একটা কারন ছিল ইয়াজিদ প্রসাসনিক কাজে অনেক দক্ষ ছিলেন,ইয়াজিদ তার বাবার সাথে কাজ করতে করতে অনেক কিছু সিখসিল জার জন্য তাকে খলিফা বানান হয়।ইয়াজিদ ফাসিক মুসলিম ছিল এবং হসাইন রাঃ এর সাথে এর তুলনা হয়না।কিন্তু মুয়াবিয়া রাঃ একজন বড় মাপের সাহাবি ছিলেন এবং তার নামে কুতশা রতান বা তাকে গালি দেয়া হারাম।
Total Reply(1)
Monjur Rashed ২৯ আগস্ট, ২০২০, ৮:১০ পিএম says : 0
Plenty mistakes in spelling, sentence constructions are also poor.
M.Hossain ২৮ আগস্ট, ২০২০, ৪:২৮ পিএম says : 0
মুয়াবিয়া রাঃ নিসন্দেহে একজন বড় মাপের সাহাবীছিলে। কোন মতবিরোধ নেই। কিন্তু এয়াজিদ কি আদতে খলিফা হওয়ার যোগ্য ছিল,বিশেষ করে তার চারিত্রিক আচার, ব্যবহার,সহ অন্যান্য বিষয়। তাহলে সেদিন জান্নাতে যুবদের সর্দার, নবী পাক সাঃ আঃ সালামের কলিজার টুকরা সাইয়েদুনা হোসাইন আঃ সালামকে অন্যায়ভাবে,নিষ্ঠুরভাবে হত্যার বিচার কেন করলেন না।
Total Reply(2)
২৯ আগস্ট, ২০২০, ৮:২৯ পিএম says : 0
৩০ আগস্ট, ২০২০, ১১:৫৯ এএম says : 0
Bangladesh ২৮ আগস্ট, ২০২০, ৫:০১ পিএম says : 0
Hello inqilab, France British and other part of American makes a civil war in Bangladesh, when NRC is failed in Indian Civil war.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন