সাইয়্যেদেনা হজরত ইমাম হোসাইন (রা:) এবং তাঁর সঙ্গী-সহচররা সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে জিহাদে প্রাণ উৎসর্গ করে কারবালা প্রান্তরে ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের নজির স্থাপন করেছেন, তা পৃথিবী প্রথম হওয়া পর্যন্ত সত্যাশ্রয়ী মানুষের অন্তরে প্রেরণা ও অণুরাগের ফুল হয়ে ঝরতে থাকবে, অনাগতকালের মানুষ তাঁদের এই আদর্শকে অনুসরণ করে সত্য ও ন্যায়ের ঝান্ডাকে উচ্চকিত করার লক্ষ্যে এগিয়ে আসবে, এটাই যুগ ও কালের ঘূর্ণাবর্তের একমাত্র প্রতিধ্বনি। কারণ, সত্যের জন্য ও মিথ্যার অবলুপ্তির লক্ষ্যে যারা বীরদর্পে এগিয়ে যায়, তাদের পথ কুসুমাস্তীর্ণ না হলেও এর বদৌলতে অজয় ও অমরকীর্তি স্থাপতি হয়, তা সহজেই অনুধাবন করা যায়।
এই দিকনির্দেশনাই পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা:) প্রদান করেছেন। তিনি এরশাদ করেছেন: ‘তোমাদের মধ্যে যখন কেউ অমঙ্গল, অন্যায়, গর্হিত ও অসৎকর্ম বা মিথ্যার সদম্ভ প্রাচীর মাথা তুলে দাঁড়াতে দেখবে, তখন তার উচিত একে বাহুবলে প্রতিহত করাও উৎখাত করা এবং তার মেরুদন্ড ভেঙে দেয়া। যদি এই সামর্থ্য ও যোগ্যতা না থাকে তাহলে মুখ নিঃসৃত বাণীর দ্বারা ভাষণ ও বক্তব্যের দ্বারা ইহার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর পরিবেশ প্রস্তুত করতে হবে। প্রতিবাদী কণ্ঠরস্বর উচ্চকিত করে তোলতে হবে। যদি এতটুকু করার সামর্থ্যও না থাকে, তাহলে অন্যায় ও গর্হিত কর্মকে মনে মনে ঘৃণা করতে হবে। আর এটাই হচ্ছে ঈমানের দুর্বলতার পরিচায়ক;। (মোসনাদে আহমাদ)।
কারবালা প্রান্তরে সাইয়্যেদেনা হজরত ইমাম হোসাইন (রা:) তার সঙ্গী সহচররা হাবীবে কিবরিয়া মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:) এর দিকনির্দেশনা মোতাবেক জালেম এজিদের অনুগত বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং আল্লাহর পথে অকাতরে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে ছিলেন। তাদের এই ত্যাগ এই সাধনা যুগে যুগে কালে কালে মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের জন্য সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার হাতাছানি দিয়ে আহ্বান করবে এতে কোনোই সন্দেহ নেই।
তবে কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনাকে স্মরণ করে আহাজারি করা মাতমজারি করা ও ঢাকঢোল পিটিয়ে মিছিল-শোভা যাত্রা করা ও দৈহিক কমরত প্রদর্শন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও অনৈসলামিক লোকাচার মাত্র। এগুলো থেকে নিজেদের বিরত রাখা ও শহীদের রূহের মাগফেরাত এবং কুরব ও মানজে লাতের জন্য দোয়া ও মোনাজাত করা সব মুসলমানেরই ঈমানী দায়িত্ব। কেননা, পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা:) সুস্পষ্টভাবে এরশাদ করেছেন: ‘মানুষ যখন মৃত্যু বরণ করে, তখন তার যাবতীয় কর্মক্ষমতা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি দিক থেকে সে নেকী-হাসিল করতে থাকে। (ক) ছদকায়ে জারিয়ার মাধ্যমে। (খ) উপকারী জ্ঞানের মাধ্যমে এবং (গ) নেক সন্তানের দোয়ার মাধ্যমে। এ দোয়া বা সওয়াব রেছানী-শহীদানে কারবালার পুণ্যত্মাদের জন্য বেশি পরিমাণে করাই শ্রেয়। কেননা, দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তিরা পুণ্যের অধিকারী হতে পারে। আল্লাহপাক আমাদেরকে অধিক হারে নেক আমল করার তৌফিক এনায়েত করুন- আমীন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন