বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

১৪ বছরে গুমের শিকার ৬০৪ জন

আজ আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০২০, ১২:০০ এএম

আজ ৩০ আগস্ট। আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস। সারা পৃথিবীতে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস পালিত হচ্ছে আজ। ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর গুম হওয়া থেকে সব ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সনদ জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর প্রটেকশন অব অল পারসন্স অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়্যারেন্স এই আন্তর্জাতিক সনদ কার্যকর হয়। তাতে ৩০ আগস্টকে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা করা হয়। এছাড়া গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবসে উপলক্ষে মায়ের ডাকসহ বিভিন্ন সংগঠন গতকাল শনিবার রাজধানীসহ সারাদেশে মানববন্ধন করেছেন। অন্যদিকে গতকাল আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গুমের শিকার সকল নিখোঁজ ব্যক্তিকে অনতিবিলম্বে খুঁজে বের করা, প্রতিটি গুমের অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিতে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠন, জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গুমের শিকার ব্যক্তি ও তার পরিবারের যথাযথ পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একই সাথে গুম সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদ স্বাক্ষর করে গুম প্রতিরোধে সরকারের সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়েছে।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশ এখন দুঃশাসনে ডুবে গেছে। আন্দোলন ছাড়া চোখের জল এই সরকারের গদি নড়াতে পারবে না। প্রতিবছরই এখানে আসলেই স্বজনদের কান্না দেখি। কান্না কোনো সমাধান নয়। আন্দোলনই এই সরকারের পতন নিশ্চিত করতে পারে। পুলিশ লীগ না থাকলে আ’লীগের অস্তিত্বও থাকবে না। দুর্নীতিতে সারাদেশ ছেয়ে গেছে। করোনাকালীন সময়েও যারা দুর্নীতি করেছে তাদের সেভাবে বিচার করতে পারছে না। কারণ দুর্নীতির ওপর ভর করেই জনগণের ভোট ছাড়া এ সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। ৩০ আগস্ট গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে মায়ের ডাক এর উদ্যোগে গতকাল বিকাল ৩টায় শাহবাগস্থ জাতীয় জাদুঘরের সামনে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের উপস্থিতিতে তিনি এসব কথা বলেন।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, আসক কর্তৃক বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ থেকে ২০২০ (২৫ আগস্ট) পর্যন্ত ৬০৪ জন গুমের শিকার হয়েছে বলে ভুক্তভোগী পরিবার ও স্বজনরা অভিযোগ তুলেছেন। এদের মধ্যে পরবর্তী সময়ে ৭৮ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে, ৮৯ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং ৫৭ জন ফেরত এসেছে। অন্যদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য গণমাধ্যমসূত্রে জানা যায়নি। এসব ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবার, স্বজন বা প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা, সাংবাদিক বা মানবাধিকার সংগঠনের তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, বিশেষ বাহিনী-র‌্যাব, ডিবি পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের পরিচয়ে সাদা পোশাকে ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের তুলে নেয়া হচ্ছে। প্রায়শ সংশ্লিষ্ট বাহিনী তাদের গ্রেফতার বা আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে। পরিচিত কিংবা প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ ছাড়া খুব কম ক্ষেত্রেই আলোচনা বা আলোড়ন সৃষ্টি হয় এবং উদ্ধারের তৎপরতা লক্ষ করা যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গুম হওয়ার কিছুদিন পর হঠাৎ করেই তাদের কোনো মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় বা ক্রসফায়ারে তাদের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়। যারা ফিরে আসতে পেরেছেন তাদের ক্ষেত্রেও কি ঘটেছে তা জানা যায় না।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে গুমের ঘটনা বরাবর অস্বীকার করা হলেও দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার ব্যবস্থার আওতাধীন বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ বা বিশেষজ্ঞ কমিটি এ বিষয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করে এসেছেন। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটির ৬৭তম অধিবেশনে নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক অথবা মর্যাদাহানিকর আচরণ বা শাস্তিবিরোধী সনদের আওতায় বাংলাদেশের অগ্রগতি পর্যালোচনা হয়। এ পর্যালোচনায় অঘোষিত আটক, যাকে কমিটি অন্তর্ধান বা গুম হিসেবে বর্ণনা করেছে, সেই বিষয়টিতে কমিটি বলেছে, এভাবে আটককৃত ব্যক্তিকে যদি হত্যা করা হয় অথবা তিনি ফিরে আসেন- যাই ঘটুক না কেন, তাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে গুম হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। আসক বিশ্বাস করে, একটি ন্যায় ও মানবাধিকারভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় গুমের মতো ঘৃণ্যতম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধ করতে হবে। আসক গুমের ঘটনা প্রতিরোধে এবং ভুক্তভোগী ও পরিবারের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছে।

এছাড়া মায়ের ডাক এর সভাপতি হাজেরা খাতুনের অসুস্থতার কারণে তার বড় মেয়ে গুম হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমনের বড় বোন মারুফা ইসলাম ফেরদৌসির সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি, ঢাবি’র সাবেক ভিপি নূর, নুর খান লিটন, অধিকার’র নাসির উদ্দিন এলান, বাসদের আব্দুর রাজ্জাক, ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ কমিটির সদস্য ইফতেখার আহমেদ, জাতীয় মানবাধিকার সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন আল আমিন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের অনির্বান প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন