শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

রেকর্ড ৪০ বিলিয়ন ছুঁই ছুঁই রিজার্ভ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০২০, ৮:৪১ পিএম | আপডেট : ৮:৪৪ পিএম, ৩১ আগস্ট, ২০২০

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফের রেকর্ড ভেঙ্গে ৩৯ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। দেশের ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ রিজার্ভ। গত তিন মাসে ছয় বার রেকর্ড করেছে রিজার্ভ। প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে নয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান রিজার্ভ সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। রিজার্ভের দিক দিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। যা পাকিস্তানের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।

করোনার ধাক্কা সামলে উঠে ঘুরে দাড়িয়েছে দেশের অর্থনীতি। বিশ্বজুড়ে করোনা সঙ্কটের মধ্যেও বৈধ পথে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে আসছে। চলতি ২৭ আগস্ট পর্যন্ত প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১৭২ কোটি ৫৮ লাখ ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। আগের বছরের পুরো আগস্ট মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৪৪ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। এভাবে রেমিট্যান্স বাড়লেও আমদানি দায় পরিশোধের তেমন চাপ নেই। যে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংককে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রচুর ডলার কিনতে হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে প্রায় ১৬০ কোটি ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি থেকে প্রচুর ঋণ আসছে। যে কারণে রিজার্ভে একের পর এক রেকর্ড হচ্ছে। সোমবার (৩১ আগস্ট) দিনশেষে রিজার্ভের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ২৮বিলিয়ন ডলার বা তিন হাজার ৯২৮ কোটি ডলার। গত তিন মাসে ছয় বার রেকর্ড করেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গত ৩ জুন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে ২৪ জুন সেই রিজার্ভ আরও বেড়ে ৩৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই ৩০ জুন রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। এক মাস পর ২৮ জুলাই রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারের ঘরও অতিক্রম করে। তিন সপ্তাহ পর গত ১৭ আগস্ট রিজার্ভ ৩৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুলাই-অগাস্ট মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে। তার আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে অবস্থান করবে বলে আশা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ-এই নয়টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।

এদিকে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিছু বিদেশী ঋণ ও দান অনুদানও। আমদানি ব্যয় কমে যাওয়ায় রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পাশাপাশি রফতানি আয় বাড়ায় রিজার্ভ নতুন মাইলফলক অতিক্রম করতে চলেছে। করোনাভাইরাস মহামারীতে রেমিট্যান্সের গতিতে ছেদ তো পড়েইনি, বরং তা আরও বেড়েছে। কোরবানির ঈদের পরও রেমিট্যান্সের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের পাশপাশি বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি ও এআইআইবির ঋণ সহায়তাও রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। তিনি বলেন, গত চার মাসে (এপ্রিল-জুলাই) এই দাতা সংস্থাগুলোর প্রায় চার বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা যোগ হয়েছে রিজার্ভে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান রিজার্ভ সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। রিজার্ভের দিক দিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। যা পাকিস্তানের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়। বাংলাদেশকে দুই মাস পরপর পরিশোধ করতে হয় আকুর বিল। প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয়ের খরচ হিসাবে হাতে থাকা রিজার্ভ দিয়ে বর্তমানে সাড়ে নয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ বা রেমিট্যান্স। দেশের জিডিপিতে এই রেমিট্যান্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো। এবার করোনাভাইরাস মহামারীতে মার্চ থেকে বৈশ্বিক পরিস্থিতি ওলটপালট হয়ে যাওয়ায় রেমিট্যান্সও কমে গিয়েছিল। কিন্তু এপ্রিল থেকে রেমিট্যান্সে ঊর্ধ্বগতির ধারা চলছে। রেমিট্যান্সের গতি ধরে রাখতে গত অর্থবছর বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করেন। চলতি অর্থবছরেও একই হারে প্রণোদনা অব্যাহত রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট এক হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ (১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ছিল আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি আগস্ট মাসের ২৭ দিনে ১৩৪ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত বছরের পুরো আগস্ট মাসে ১৪৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। আগের মাস জুলাইয়ে ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক মাসে এতো বেশি রেমিট্যান্স আসেনি। এর আগে এক মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল গত জুনে, ১৮৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

অন্যদিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে ৩৯১ কোটি (৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। এর মধ্য দিয়ে সাত মাস পর বাংলাদেশ রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধিতে ফিরে এসেছে। সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে দুই দশমিক ৮৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল রফতানি আয়ে। এরপর ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি কমছিল। মার্চে দেশে মহামারীর ধাক্কা লাগতে শুরু করার পর এপ্রিলে রফতানি আয় কমে মাত্র ৫২ কোটি ডলারে নেমে এসেছিল, যা ছিল রেমিট্যান্সের চেয়েও কম। এ বছর এপ্রিলে গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে রফতানি আয় কমেছিল ৮৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ। মহামারী রোধে চলা বিধিনিষেধ শিথিল করে কলকারখানা চালুর পর মে মাসে রপ্তানি বেড়ে ১৪৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলারে দাঁড়ায়; তবে প্রবৃদ্ধি কমেছিল ৬১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে রফতানি আয় বেড়ে ২৭১ কোটি ৪৯ লাখ ডলারে উঠলেও প্রবৃদ্ধি কমেছিল ২ দশমিক ৫ শতাংশ।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত অর্থবছরের যেকোনো মাসের চেয়ে নতুন অর্থবছরের প্রথম মাসে পণ্য রফতানি থেকে বেশি আয় হয়েছে। মহামারীর প্রভাব পুরোপুরি শুরু হওয়ার আগের মাস মার্চে পণ্য রপ্তানি থেকে ২৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ; যদিও প্রবৃদ্ধি কমেছিল ১৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। জুলাই মাসে রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক রফতানি এক ধাক্কায় বেড়ে দাঁড়ায় ৩২৪ কোটি ৪৯ লাখ ডলারে। আর চলতি মাসের প্রথম ২২ দিনে ২৩৭ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
নুর ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:০৮ পিএম says : 0
তবুও প্রবাসিরা নির্জাতিত হয় কেনো
Total Reply(0)
নুর ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:০৯ পিএম says : 0
তবুও প্রবাসিরা নির্জাতিত হয় কেনো
Total Reply(0)
Mohammed Ibrahim ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৩:০২ এএম says : 0
Please dear all National government team members love your country love Bangladesh mack great country.... love you guys all of you who mack great country all national & international Bangladeshi team members
Total Reply(0)
Mohammed Ibrahim ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৩:০২ এএম says : 0
Please dear all National government team members love your country love Bangladesh mack great country.... love you guys all of you who mack great country all national & international Bangladeshi team members
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন