বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রদীপের ভেতরেই অন্ধকার

জেলে ডিভিশনের জন্য এসপির প্রত্যায়নপত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি আজ জেরা করবে : লিয়াকত-নন্দের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

কক্সবাজার ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনায় টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ ঘনিষ্টভাবে জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, কমিটি এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ৬৭ জনের জবানবন্দি নেয়। সিংহভাগ বক্তব্যে ওঠে এসেছে ওসি প্রদীপ সিনহা হত্যাকান্ডের ঘটনায় ঘনিষ্টভাবে জড়িত। প্রদীপের জবানবন্দি নিয়ে তার দেওয়া তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করতে হবে। ইতোমধ্যে তদন্ত রিপোর্ট অনেকটা গুছিয়ে আনা হয়েছে। শুধু ওসি প্রদীপের জবানবন্দির অপেক্ষায়। সুত্র জানায়, তদন্তকারীরা প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে এতো অপরাধ কর্মের অভিযোগ পাচ্ছেন। অতপর প্রদীপের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়েরের খবর পাচ্ছেন। এতে তারা মন্তব্য করেছেন, আইন শৃংখলা বাহিনীর দায়িত্বশীল পদে চাকরি করা প্রদীপের ভিতরে এতো অন্ধকার?

সিনহা হত্যার মামলার ২ নম্বর আসামি প্রদীপ কুমার দাশকে এক মাসেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি তদন্ত কমিটি। তাই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য তৃতীয় দফায় সময় বৃদ্ধির আবেদন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত এই তদন্ত কমিটি। পহেলা সেপ্টেম্বর র‌্যাবের তৃতীয় দফায় রিমান্ড শেষ হলে ওই দিনই ওসি প্রদীপের সাথে কথা বলবেন তদন্ত কমিটি।

আবার রিমান্ডঃ সিনহা হত্যা মামলায় প্রদীপ কুমার দাশ চতুর্থ দফায় এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট টেকনাফ-৩ আদালতে আসামিদের হাজির করা হলে তদন্তকারী কর্মকর্তা র‌্যাব-১৫ এর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) খায়রুল আলম অধিকতর তথ্যের স্বার্থে তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করলে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

লিয়াকত-নন্দুর স্বীকারোক্তিঃ আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে সিনহা হত্যার দায় স্বীকার করেছেন লিয়াকত আলী ও নন্দ দুলাল। রোববার লিয়াতক ও সোমবার নন্দ দুলাল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে পৃথকভাবে ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে স্বীকারোক্তি দেন।

জবানবন্দি শেষে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র‌্যাবের এসএসপি খায়রুল ইসলাম জানান, সিনহা হত্যা মামলার প্রধান ২ আসামী রিমান্ডে যা স্বীকার করেছেন আদালতের কাছেও তা স্বীকার করেছেন। মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলার তথ্য-উপাত্ত সম্পর্কে নিজের সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করেছেন লিয়াকত আলী ও নন্দ দুলাল। মামলার প্রধান ২ আসামী লিয়াকত আলী ও নন্দ দুলাল সিনহা হত্যা সম্পর্কে র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে যা স্বীকার করেছে আদালতের কাছেও একই স্বীকারোক্তি দিয়েছে।

মামলায় তৃতীয় দফায় তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের একদিন পরই রোববার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে প্রধান আসামী বরখাস্ত এসআই লিয়াকত আলীকে আদালতে আনা হয়। আদালতে তার জবানবন্দি রেকর্ড সম্পন্ন হয়। একইভাবে সোমবার এসআই নন্দ দুলালকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে আনা হলে তিনি স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী দেন। এর আগে এপিবিএনের তিন পুলিশ সদস্য পৃথকভাবে বুধ ও বৃহস্পতিবার আদালতে ১৬৪ ধারা মতে জবানমন্দি দিয়েছেন।

সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস গত ৫ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন। এতে ৯ জনকে আসামি করা হয়। পরে আরো ছয়জনকে আসামী করা হয়।
প্রদীপের ডিভিশনে এসপির প্রত্যায়নঃ মেজর (অব.) সিনহা রাশেদ হত্যা মামলার আসামি ও টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং প্রধান আসামি এসআই লিয়াকত আলীকে জেলহাজতে ডিভিশন দেয়ার প্রত্যয়নপত্র দিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছেন কক্সবাজারের এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন। সেখানে তিনি ওসি ও এসআইকে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা উল্লেখ করে ডিভিশন দিতে অনুরোধ জানান। তবে কক্সবাজার জেল সুপার মো. মোকাম্মেল হোসেন ওই আবেদন দুটি বাতিল করে দেন।

জেল সূত্রে জানা গেছে, সিনহা হত্যার ঘটনায় ওসি প্রদীপসহ প্রধান তিন আসামিকে আলাদা সেলে রাখা হয়েছিল। সেখানে অন্য কাউকে রাখা হয়নি। বিশেষ আসামি হওয়ায় তাদেরকে আলাদা রাখা হয়। ওসি প্রদীপ ও এসআই লিয়াকতের জন্য পুলিশ সুপার ডিভিশনের আবেদন করলেও কক্সবাজার জেলা কারাগারের সুপার মো. মোকাম্মেল হোসেন সেই আবেদন বাতিল করে দেন।

প্রদীপের বিরুদ্ধে আরো মামলা ঃ ৫০ লাখ টাকা না দেয়ায় দুই ভাই এবং এক ভাগিনাসহ তিনজনকে ক্রসফায়ারে হত্যার অভিযোগে টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৪১জনের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। টেকনাফ উপজেলা রঙ্গীখালী গাজী পাড়ার সুলতানা রাজিয়া মুন্নি নামের এক নারী বাদি হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেছেন।

গতকাল সোমবার বিচারক হেলাল উদ্দীনের আমলী আদালতে এই মামলাটি দায়ের করা হয়। বাদি পক্ষের আইনজীবি এড. কাশেম আলী সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৬ মে রাত ২টার দিকে রঙ্গীখালী গাজী পাড়ার সৈয়দ আলম ও তার ভাই নূরুল আলম এবং তাদের ভাগিনা আনসার সদস্য সৈয়দ হোসন প্রকাশ আবদুল মোনাফকে ধরে নিয়ে যায় ওসি প্রদী কুমার দাশের নেতৃত্বে একদল পুলিশ। পরে পরিবারের কাছে ৫০ লাখ দাবি করেন ওসি প্রদীপ। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ওই দিন ভোরে বন্দুকযুদ্ধের নামে এক সাথে তিনজনেকই তাদের ধানক্ষেতে হত্যা করা হয়। বাদি পক্ষের আইনজীবী এড. কাশেম আলী বলেন, মামলাটি আমলে নিয়ে তার তদন্তের জন্য টেকনাফ থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

প্রসঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট : এদিকে সিনহা হত্যকান্ডের ঘটনা তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিতে তৃতীয় দফায় আরও ৭ দিন সময় বাড়ানো হয়েছে। এর আগের এই কমিটির তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার মেয়ার আরো দুই দফায় বাড়ানো হয়েছে। উল্লেখ গত ২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করে। অতপর ১০ আগস্ট, ২২ আগস্ট ও ৩১ আগস্ট তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় বৃদ্ধি করা হয়। ##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (14)
MD Imran ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:০৭ এএম says : 0
ফাসি চাই
Total Reply(0)
Ashik Tibbi ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:০৯ এএম says : 0
রিমান্ডে নিয়া কি পিডায়,নাকি পরামর্শ করে, কিভাবে কি করা যায় বা বলা যায় এইসব বিষয়ে, আল্লাহই জানে,নাহলে এ-ই কদিনের রিমান্ডে ও হাটে কিভাবে বুঝিনা।
Total Reply(0)
Md Sojib ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:০৯ এএম says : 0
রিমান্ডে নিয়ে কি প্রদীপকে যাত্রা পালার ডান্স দেখানো হয়
Total Reply(0)
Mohd Abdullah Bin Ali ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:০৯ এএম says : 0
সঠিক বিচার যেন হয় যদি মেজর সিনার বিচার না হয় তাহলে প্রদীপের বিচার জনগন করবে
Total Reply(0)
Ad Mannan ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:১০ এএম says : 0
ওসি প্রদীপের আইন জিবি তাদের কে বিচারের আলতায় আনা হোক্
Total Reply(0)
Kazi Ahmed ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:১০ এএম says : 0
হয়তো ওকে রিমান্ডে নিয়ে জামাই আদর করতেছে এজন্য সব সত্যি কথা বলছে না আর জনগণকে রিমান্ডের নামে নাটক দেখাইতেছে
Total Reply(0)
Prodhan Jilany ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:১০ এএম says : 0
যথেষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও এত লুকোচুরি কেন ক্রসফায়ার কেন দিচ্ছে না
Total Reply(0)
Ballal Hossin ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:১১ এএম says : 0
এত রিমান্ড নাকি। উন্নত দেশে বিচার করতে ১৫ দিনই যথেষ্ট।
Total Reply(0)
Slima Munia ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:১২ এএম says : 0
বার বার রিমান্ডে নিয়ে কি করছেন আপনারা? রিমান্ড সম্পর্কে আমাদের ধারনাই পাল্টে যাচ্ছে! 1
Total Reply(0)
Md Rejaul Karim ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:৪৮ এএম says : 0
প্রদ্বীপের নিচে অন্ধকার এটি একেবারেই স্বাভাবিক কারন প্রদ্বীপ নিজের আলো উপভোগ করতে পারে না ।।। তবে প্রদ্বীপ নিজের আলো ব্যবহার করতে না পারলেও সারা দেশে প্রদ্বীপ ছড়িয়ে দিয়েছে।।। যার কারনে প্রথম শ্রেনীর মর্যাদা পাওয়ার সুপারিশ সহ পর্যাপ্ত পরিমাণ আইনজীবি ও রেডি রেখে যেতে পেরেছেন।
Total Reply(0)
Engr Amirul Islam ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৭:০৮ এএম says : 0
Pradip will be saved by India ...................... all are drama to make people fool
Total Reply(0)
Engr Amirul Islam ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৭:২২ এএম says : 0
Dramma total dramma
Total Reply(0)
Ahmed Faisal ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৯:২১ এএম says : 0
We want real justice,3 criminal police officer should be hanged till die
Total Reply(0)
Mohammed Shah Alam Khan ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৯:০১ পিএম says : 0
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেছেন, টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ ঘনিষ্টভাবে জড়িত। তদন্ত কমিটি প্রদীপ কুমারের প্রচুর অপরাধের অভিযোগ ও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের খবর পেয়ে তারা মন্তব্য করেছেন, আইন শৃংখলা বাহিনীর দায়িত্বশীল পদে চাকরি করা প্রদীপের ভিতরে এতো অন্ধকার? অপরদিকে জবানবন্দি শেষে সাংবাদিকদের র্যা বের এসএসপি খায়রুল ইসলাম জানান, মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলার তথ্য-উপাত্ত সম্পর্কে নিজের সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করেছেন লিয়াকত আলী ও নন্দ দুলাল। এদিকে নতুন করে বরখাস্ত ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে আরো একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে টেকনাফ উপজেলা রঙ্গীখালী গাজী পাড়ার সুলতানা রাজিয়া মুন্নি নামের এক নারী। আদালত মামলাটা অমলে নিয়ে তদন্তের জন্যে দিয়েছে। এই খবরে আরো একটা চমকদার খবর হচ্ছে কক্সবাজারের এসপি সাহেব জেলখানায় বরখাস্ত ওসি প্রদীপ বাবু ও এসআই লিয়াকত মিয়াকে ডিভিশন দেয়ার জন্যে অনুরোধ করেছেন। এটা জানার পর অবাক হচ্ছি এই এসপি সম্পর্কে এত অভিযোগ থাকার পরও কিভাবে তাঁকে কক্সবাজারের এসপি হিসাবে এখনও রাখা হয়েছে। এটা জনগণের কাছে প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাস্তবে আমরা শুনতে পাচ্ছি যে, এই মামলাটা দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নজরে রেখেছেন। কিন্তু জনগণের এটা বিশ্বাস হচ্ছেনা, কারন তাঁর প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে যা জানেন সেই হিসাবে বর্তমানে এই মামলায় যা ঘটছে এরসাথে প্রধানমন্ত্রীর কোন সম্পর্ক থাকতে পারেনা বলেই তাদের অভিমত।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন