বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শিক্ষাঙ্গন

গণবিশ্ববিদ্যালয় “নারী হিসেবে কখনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হইনি”

প্রকাশের সময় : ৮ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নারী হিসেবে ৪২ বছরের কর্মজীবনে কখনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হইনি। যেখানেই গিয়েছি, সবার সহযোগিতায় সম্মানের সাথে কাজ করেছি।” কথাগুলো বলছিলেন গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. ফরিদা আদিব খানম। এইটুকু পরিচয় হয়তো যথেষ্ট নয় এই কিংবদন্তির জন্য। ১৯৪৯ সালে জন্ম নেওয়া এই নারী ১৯৬৭ সালে ভর্তি হন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের দশম ব্যাচে। এই ব্যাচেই তখনকার সময়ে সবথেকে বেশি মেয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল। সংখ্যায় ২৬ জন। ১৯৭৩ সালে এমবিবিএস পাস করে এই কলেজেই ফিজিওলজি বিভাগে যোগদান করেন তিনি। সেই থেকেই আজ ৪২ বছরের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে ফিজিওলজি ও বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের সাথে।

গত ৫০ বছরের বিজ্ঞানের অতি উন্নতির কথা স্মরণ করে বলেন, আমাদের সময় সম্পূর্ণ গ্রাম ছিল একটি পরিবারের মতো। সুখ-দুঃখে পরস্পরের প্রতি একটা কল্পনাতীত অনুভূতি কাজ করত সবার। এখন আর তা নেই। সামাজিক অনেক অবক্ষয় হয়েছে। আমরা এখন পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দার খবর রাখি না। ছেলেমেয়েরা এখন আর আগের মতো মাঠে খেলাধুলা করে না। একটা আবদ্ধ ঘরে, প্রযুক্তি ব্যবহার করেই বেড়ে উঠা একটা শিশু থেকে আমরা সেই অনুভূতি আশা করতে পারি না। দোষটা হয়তো আমাদের। আমরা প্রযুক্তির সাথে সাথে পারিনি অনুভূতিগুলোর উন্নতি করতে। ফলে অপরাধ বাড়ছে, অবক্ষয় বাড়ছে।”
১৯৯৭ সালে দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ মহিলা প্রিন্সিপাল হিসেবে কুমিলা মেডিকেল কলেজে যোগদানের মাধ্যমে যুক্ত হন প্রশাসনিক কাজে। কতটা বিশ্বাস থাকলে প্রশাসন একজন নারী হওয়া সত্ত্বেও কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাঁর উপর আস্থা রেখেছিল, তার উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেন, “২০০০ সালে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে নৈরাজ্যকর অবস্থা চলছিল। একদিনের নোটিশে সরকার আমাকে কুমিলা থেকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেলে প্রিন্সিপাল হিসেবে যোগ দিতে বলে। সবার সহায়তায় অল্পদিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।” পরবর্তীতে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক হিসেবে। সর্বশেষ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব হিসেবে ২০০৬ সালের পহেলা জানুয়ারি সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেন।
২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান। মেয়াদ শেষ করেই বান্ধবী অধ্যাপক ডা. লায়লা পারভীন বানুর (অধ্যক্ষ, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ) অনুরোধে যোগ দেন বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগীয় প্রধান হিসেবে। পাশাপাশি ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সোসাইটি অব ফিজিওলজিস্টস (বিএসপি)-এর বর্তমান সভাপতি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
‘‘নারীরা আজ এগিয়ে যাচ্ছে। সবাই এখন অনেক সোচ্চার। নিরাপত্তা, অধিকার ও ক্ষমতায়নের জন্য দেশে অনেক আইন হয়েছে। আজ উচ্চপদে নারীর ক্ষমতায়নের কথা শুনলে গর্ব হয়।’’ গর্বের স্মিত হাসির সাথে বলছিলেন এই কিংবদন্তি। মনে করেন, যোগ্যতা, নিষ্ঠা, সততা আর প্রজ্ঞাই মানুষকে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে ভূমিকা রাখে। বিশ্বাস করেন, একটি প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে যাওয়া ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের উপর নির্ভর করে। কেবলমাত্র ভালোবাসা থাকলেই একজন শিক্ষক কখনো পূর্ণাঙ্গ অবসরে যেতে পারেন না।
ষ মনির হোসেন শিমুল

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন