বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ

স্বাস্থ্যখাতে লুটপাট মিঠু-আবজালের

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

দেশব্যাপী গত দু’বছর থেকে আলোচিত নাম স্বাস্থ্য অধিদফতরের কেরানী আবজাল হোসেন দম্পতির কয়েকশ’ কোটি টাকার সম্পদের বিষয়টি। বর্তমানে অবৈধ সম্পদ অর্জনের দুই মামলায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মচারী আবজাল হোসেনকে ১৪ দিন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। কিন্তু অধরাই থাকছেন আবজাল হোসেনের গডফাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু। পুরো স্বাস্থ্যখাতে বিস্তৃত মিঠুর জাল। স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আবজাল হোসেনের মতই একাধিক কর্মকর্তা মিঠুর হয়ে কাজ করে থাকে।

শুধু স্বাস্থ্য খাতেই নয়; সরকারি বিভিন্ন দফতরে রয়েছে মিঠুর লোক। আর তাই মিঠু বছরের অধিকাংশ সময়ে বিদেশে থাকলেও তার নির্দেশেই চলতো স্বাস্থ্যখাত। এই মিঠু-আবজাল যোগসাজশেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। বাজারমূল্যের চেয়ে মেডিক্যাল যন্ত্রপাতির দাম ১৫০ থেকে ২০০ গুণ বেশি দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছে তারা। মিঠু-আবজাল যেন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।

সূত্র মতে, অফিস সহকারী বা কেরানী হিসেবে চাকরি নিলেও আবজাল হোসেন অল্প সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরে ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন। সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, বিএনপি আমলে নিয়োগ পেলেও মিঠুর সহযোগিতায় সব আমলেই সমানভাবে প্রভাবশালী ছিলেন তিনি। নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, কাজ না করে বিল তুলে নেয়ার মতো কাজগুলো করেছেন আবজাল। এর মাধ্যমে বিপুল বিত্তবৈভব গড়ে তুলেছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের অভিযোগ।

গত বছর ২৭ জুন দুদকের উপ-পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ অবৈধ সম্পদ অর্জন, মুদ্রা পাচার এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে মামলা দুটি করেন। দীর্ঘদিন পলাতক থেকে গত ২৬ আগস্ট আবজাল হোসেন আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করে। সেদিন বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে গত বুধবার ঢাকার মহানগর সিনিয়র বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশ শুনানি শেষে ১৪ দিন দুদক হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন।

মামলায় বলা হয়, আবজালের নামে থাকা সম্পদের চেয়ে তার স্ত্রীর সম্পদ বেশি। অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায় থেকে নিজেকে রক্ষা করতে তিনি স্ত্রীর নামে সম্পদ করেছেন। এসব সম্পদের বৈধ উৎস খুঁজে পায়নি দুদক। আবজালের নামে ২০ কোটি ৭৪ লাখ এবং রুবিনা খানমের বিরুদ্ধে ২৬৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা পাচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আবজাল অধিদফতরে যে পদে কাজ করেন, তাতে ‘আলাদিনের চেরাগ’ না পেলে এত সম্পদের মালিক হতে পারতেন না।

সূত্র মতে, মিঠু-আবজাল দু’জনই স্বাস্থ্য সেক্টরে দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি-লুটপাটের সঙ্গী। ২০১৮ সালে এসব টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্ব›দ্ব শুরু হয় দু’জনের মধ্যে। মিঠু ২০১৫ সালের পর থেকে আমেরিকা অবস্থান করে এবং বাংলাদেশের সকল দায়িত্ব আবজাল পালন করে। আবজাল তখন মিঠুর স্বাস্থ্যখাতসহ সকল কাজ একাই করে। একচেটিয়া কাজের সুযোগ পেয়ে আবজাল তার স্ত্রীর নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’ খুলে কক্সবাজার মেডিকেলসহ বিভিন্ন মেডিকেলের কাজ বাগিয়ে নেয়। যা মানতে পারেননি মিঠু। আর এই নিয়ে মিঠুর সাথে আবজালের দ্ব›দ্ব শুরু হয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা ওই সময়ে বলেন, মিঠু-আবজাল মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। ঠিকাদারি কাজের একটা অংশ সবসময় আবজালকে ভাগ দিতো মিঠু। আবজালের স্ত্রীর নামে প্রতিষ্ঠান খুলতে নিষেধও করে মিঠু। কিন্তু আবজাল মিঠুর কথা না শুনে তার স্ত্রীর নামে প্রতিষ্ঠান খুলে কাজ করে। এতে আবজালের ওপর মিঠুর ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এরপরই আবজালকে শায়েস্তা করতে মিঠু তার সব ক্ষমতা কাজে লাগায়। মিঠু তখন ভেবেছিল আবজাল যদি স্ত্রীর নামে এভাবে কাজ বাগিয়ে নেয় তাহলে স্বাস্থ্য সেক্টরে মিঠুর কর্তৃত্ব বিলীন হয়ে যাবে। এ ভাবেই মিঠু ও আবজাল দ্ব›েদ্বর সৃষ্টি হয়। মিঠু ও আফজালের সম্পর্ক ভাঙন ধরে বলে উল্লেখ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা।

মিঠুর ৮৫ কোটি টাকা লুটপাট ভেস্তে যায় আবজালে
২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের জুলাই মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ৮৫ কোটি টাকা লুটপাটের সবকিছু ঠিক করেন মিঠু। ৩০ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৮৫ কোটি টাকা ছাড় করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠান এবং অর্থ মন্ত্রণালয় ১৪ আগস্ট ৮৫ কোটি টাকা ছাড় করে। মিঠু অর্থ ছাড়ের চিঠিও পায়। কিন্তু ৮৫ কোটি টাকা লোপাটের বিষয়টি গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সকলে জেনে যায়। মিঠু সিন্ডিকেট এই অর্থ লোপাট করতে পারে না। এতে মিঠুর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিন্ডিকেট ধরা পড়ে এবং তারা শাস্তির আওতায় আসেন।

এ ঘটনায় মিঠু সিন্ডিকেট বিপাকে পড়ে। ৮৫ কোটি টাকা লোপাটের বিষয়টি মিঠু সিন্ডিকেটের বাইরে কারো জানার কথা না। অথচ কিভাবে জানলো। তখন মিঠু জানতে পারে এটা আবজালের মাধ্যমে জানাজানি হয়েছে। এ বিষয়টি প্রকাশ করেছে আবজাল। এ নিয়ে মিঠু ও আবজালের দ্ব›দ্ব চরমে পরিণত হয়। এই অর্থ লোপাটের সঙ্গে জড়িত থাকায় ওই সময়ের স্বাস্থ্য সচিব মো. সিরাজুল হক খান ওএসডি হন। অতিরিক্ত সচিব জাকিয়া সুলতানা, উপসচিব রেহানা ইয়াসমিন এবং উপসচিব সারজিল হাসানকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বদলি করা হয়। মন্ত্রণালয়ে মিঠু সিন্ডিকেটে ধস নামে।

এরপরই মিঠু সিদ্বান্ত নেয়, আফজালকে শেষ করতে হবে। ওই সময়ে মিঠু আমেরিকা থেকে দেশে আসেন। দেশে এসে আবজালকে শায়েস্তা করতে বিভিন্ন ফন্দি আটেন। এতে সাহায্য হিসেবে কাজ করেছে মিঠুর অফিসে থাকা আবজালের সব তথ্য। দু’জন যেহেতু একসঙ্গে কাজ করতেন তাই মিঠুর অফিস মানেই আবজালের অফিস, আবজালের অফিস মানে মিঠুর অফিস। তাই মিঠুর অফিসে থাকা আবজালের সকল তথ্যাদি বাড়ি, গাড়ি, জমি-জমার সকল কাগজপত্র, দলিল চলে আসে সম্মুখে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ইনকিলাবকে বলেন, কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ আসলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যারাই অনিয়ম করবে তাদেরকেই কালো তালিকাভুক্ত করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Md Kobirul Islam Kobir ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:১৮ এএম says : 0
কি করে হলো গডফাদার এটা জাতি শুনতে চাই না জাতি চাই ওকে এখুনি গ্রেপ্তার করে সাস্তি দিতে
Total Reply(0)
Mohammad Mainuddin ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:১৮ এএম says : 0
মিঠু একা জড়িত না তার সাথে আমাদের সরকারের এমপি ও মন্ত্রী ও জড়িত থাকতে পারে "" দেশের কোটি কোটি টাকা আত্মসাত্ করিতেছে লুটপাট করে খাচ্ছে "" শিক্ষিত শয়তান দুর্নীতিবাজেরা শিক্ষিত ডাকাইত ""
Total Reply(0)
Saful Saful ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:১৯ এএম says : 0
সাহেদের মতো এসর চুনোপুটি দের দরে কি বড় বড় রুই কাতল চেড়ে দিয়েচে
Total Reply(0)
Jakir Hossain ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:২০ এএম says : 0
এই গুলা কি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসেনায়।
Total Reply(0)
Md Swapon ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:২০ এএম says : 0
এ দুর্নীতিবাজ যারা তাদের কাছে কি তাহলে ধরে নেবো রাষ্ট্র বিক্রি হয়ে গেছে
Total Reply(0)
Nannu chowhan ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৭:৩৮ এএম says : 0
Eai shasto montrir shakkahatkar potrikaguli boycott kora uchit karon eai montrir kas theke kono uttoroi asha jogaina borong shasto khate eakjon ojoggo montri shodhu nirashar jogan dei..
Total Reply(0)
A K AZAD ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৮:০২ এএম says : 0
The head of the Health department is lawfully responsible. Our existing law should not skip them doesn’t matter if they are ruling government party member. Only an examplury punishment can stop this kind of corruptions. The nation still believe our primer minister will take effective action against them. We are looking forward to her decision.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন