শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

বন্ধ নির্মাণ কাজ

গোমা সেতু

বরিশাল ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

দুই দফতরের টানাপোড়ন
দু’টি সরকারি দফতরের টানাপোড়েনে বরিশাল থেকে লক্ষ্মীপাশা হয়ে পটুয়াখালীর দুমকী পর্যন্ত জেলা মহাসড়কের ‘গোমা সেতু’র নির্মাণ কাজ গত প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর এবং বিআইডব্লিউটিএ’র মধ্যে জট খুলছে না। এ বিষয়ে সড়ক ও সেতু সচিব এবং নৌপরিবহন সচিবের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হলেও অনিশ্চয়তা কাটেনি। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মিত হবার কথা।
বরিশাল-লক্ষ্মীপাশা-দুমকী মহাসড়কের ১৪তম কিলোমিটারে রাঙ্গামাটি নদীর ওপর ‘গোমা সেতু’র ডিপিপি প্রণয়নের সময় বরিশাল সড়ক বিভাগ থেকে বিআইডব্লিউটিএ’র দক্ষিণ ব-দ্বীপ শাখার কাছে নদীটি কোন শ্রেণির তা জানতে চাওয়া হয়। সেখান থেকে সেতুর স্থানের নদীটি দ্বিতীয় শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত বলে জানায়। নির্মাণ কাজের আগে বিআইডব্লিউটিএ’র কাছ থেকে ভার্টিক্যাল ও হরাইজেন্টাল ক্লিয়ারেন্স গ্রহণের তাগিদ দেয়া হয়।
এ প্রেক্ষিতে বরিশাল সড়ক বিভাগ থেকে বিআইডব্লিউটিএ’র কাছে অনাপত্তি চাওয়া হয়। সেখান থেকে ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর ৭.২ মিটার ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ও ৩০.৪৮ মিটার হরাইজেন্টাল ক্লিয়ারেন্স রেখে প্রস্তাবিত সেতুটি নির্মাণে অনাপত্তিপত্র প্রদান করা হয়। বিআইডব্লিউটিএ’র সুপারিশ অনুযায়ী সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের সেতু নকশা সার্কেল থেকে প্রস্তাবিত গোমা সেতুর জন্য ডিটেইল ডিজাইন সম্পন্ন করা হয়। পরে দরপত্র প্রক্রিয়াসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে কৃতকার্য প্রতিষ্ঠানের বরাবরে মূল সেতু নির্মাণে ২০১৮ সালের ১৫ মে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়।
নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সেতুটির সমুদয় পাইল সম্পন্ন করে। এবাটমেন্ট ও পিয়ারের ক্যাপ পর্যন্ত কাজ শেষ করার মধ্যে বিআইডব্লিউটিএ’র একটি প্রতিনিধি দল নির্মাণাধীন সেতু এলাকা পরিদর্শন করে। গত বছরের ৯ মে বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে দেয়া এক চিঠিতে গোমা সেতুর রাঙ্গামাটি নদীটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করার কথা জানিয়ে সেতুটির ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ১২.২০ মিটার ও হরাইজেন্টাল ক্লিয়ারেন্স ৪০ মিটার রেখে নির্মাণ কাজ করার নতুন দিক-নির্দেশনা প্রদান করে। এরপর থেকেই সেতুটির নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা হয়। বিষয়টি নিয়ে সড়ক অধিদফতরসহ সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় একাধিকবার কথা বলেছে বিআইডব্লিউটিএ’র সাথে। সর্বশেষ গত ২২ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায়ও বিষয়টি উপস্থাপিত হয়। সেখানে বিস্তারিত আলোচনার পরে ‘যেসব সেতুর নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স পূর্বে নেয়া হয়েছিল এবং অধিকাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে, বিআইডব্লিউটিএ’র সাথে আলোচনাক্রমে ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স যতটুকু সম্ভব সংশোধনপূর্বক সে সকল সেতুর কাজ অবিলম্বে শুরু করতে হবে’ মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এদিকে সড়ক অধিদফতরের ব্রিজ ম্যানেজমেন্ট উইং গত ৩০ জুন এক চিঠিতে জানায়, নির্মাণাধীন গোমা সেতুটি ভিত্তিসহ পিয়ার ও এবাটমেন্টের নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে বিয়ারিং সিট লেভেল পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে বিধায় ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স (উচ্চতা) বৃদ্ধি করতে হলে নির্মিত অবকাঠামোসমূহ ভেঙে পুনর্নির্মাণ করতে হবে, যা স্ট্রাকচারের জন্য ক্ষতিকর। তাছাড়া ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স বৃদ্ধি করলে সেতুর লোড বৃদ্ধি পাবে। যা সেতুর ইতোমধ্যে সম্পন্ন হওয়ায় ফাউন্ডেশনের জন্য অতিরিক্ত লোড হবে। ফলে গোমা সেতুর ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স বৃদ্ধি করা কারিগরি ও বাস্তব দিক বিবেচনায় যৌক্তিক নয় বলেও জানিয়ে দিয়েছে ব্রিজ ম্যানেজমেন্ট উইং।
গত মাসে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর বরিশাল সড়ক জোনের সাথে ভার্চুয়াল বৈঠকেও বিষয়টি উত্থাপিত হয়। মন্ত্রণালয়ের সচিব বিষয়টি নিয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। ইতোমধ্যে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিনে গোমা সেতুর স্থান পরিদর্শন করে গেছেন।
এ ব্যাপারে সড়ক অধিদফতরের বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সুশীল কুমার সাহা জানান, বিষয়টি নিয়ে সড়ক অধিদফতর ও মন্ত্রণালয় সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। খুব শিগগিরই বিষয়টি সুরাহা হবার ব্যাপারেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, নির্মাণাধীন গোমা সেতুর কয়েক কিলোমিটার ভাটিতে একই নদীর ওপর অপর একটি সেতু ৭.৬২ মিটার ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্সে ইতোমধ্যে নির্মিত হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন