খাতুনে জান্নাত কণা
দেশের বন্যা পরিস্থিতি এখনও বেশ আতংক সৃষ্টি করার মত অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু ভূক্তভোগীদের অভিযোগ , অনেকেই মানবেতর অবস্থার মধ্যে থাকলেও , সরকারী বা বেসরকারী কোনো ত্রাণ তারা পাচ্ছেন না। বন্যার ভয়াবহতা এবার গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশী।অনেকেই বলছেন, এবারের বন্যা ১৯৮৮ এবং ১৯৯৬ সালের বন্যার মতই ব্যাপক। কিন্তু সে সময়গুলোতে সরকারী , বেসরকারী এবং বিদেশী সাহায্য সংস্থা যেভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে এসেছেন, এবার তেমনটি হয়নি। তাই বন্যার পানি সরে গেলেও এক ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের আশংকা থেকে যাচ্ছে। নানা ধরনের পানি বাহিত রোগ ছাড়াও , খাদ্য শস্য এবং ফসলের যে ক্ষতি হয়েছে , অনেক পরিবারই তাতে নিঃস্ব হয়ে যাবে।
জামালপুরের ইসলামপুরের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বললেন,‘ আমরা চর এলাকায় ত্রাণ দিতে গিয়ে দেখলাম , আমাদের আগে তাদের কাছে কেউ ত্রাণ নিয়ে যায়নি। চারিদিকে পানি। এর মাঝে মানুষের বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যারা ত্রাণ সহায়তা দিতে আগ্রহী, তাদের পর্যাপ্ত অর্থ নিয়ে যেতে হবে। কারণ , নৌকা ভাড়াইতো লাগে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। সরকারী সহায়তা ছাড়া এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠা কঠিন হবে।’ বাংলাদেশে মোট ১৬টি জেলা বন্যা প্লাবিত হয়েছে।এর মধ্যে জামালপুর অন্যতম। এর একদিকে যমুনা নদী, অন্যদিকে ব্রক্ষ্মপুত্র। বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যমুনার পার্শ্ববর্তী ইসলামপুর উপজেলা।
জামালপুরের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া স্টুডেন্টরা মিলে ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তারা শুকনো খাবার, চাল-ডাল, মোম, লাইটার খাবার স্যালাইন সহ একটা করে প্যাকেট করছে। একদিন আগে বন্যার্তদের টোকেন দিয়ে এসে পরদিন টোকেন নিয়ে নিয়ে ত্রাণ দিচ্ছে।এছাড়া ক্ষেত্র বিশেষে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সহায়তা নিচ্ছে। একজন শিক্ষার্থী জানালো,‘ চর এলাকার মানুষ একটু অসহিষ্ণু। অনাহারে আর কষ্টে দিন কাটিয়ে তাদের মন-মানসিকতা এখন আরো বেশী আক্রমনাত্মক হয়ে উঠছে। ত্রাণ বিতরণের সময় যাতে বিশৃংখলা না হয়,তাই আমরা আগে থেকেই সতর্ক থাকি।এ ব্যাপারে সরকারী সহায়তা না পেলে অনেক সমস্যা হয় ।‘ কুড়িগ্রামের বন্যার্তরাও মানবেতর অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। অন্যান্য জেলার চাইতে জামালপুর এবং কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতি বেশী ভয়াবহ। বিভিন্ন বেসরকারী সংগঠনের পক্ষ থেকে এবং সরকারী সহায়তা যা দেয়া হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রেই তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশী অপ্রতুল। তাই দল-মত নির্বিশেষে , আমাদের প্রতিটি মানুষের এসব বানভাসী মানুষের পাশে দাঁড়ানো দরকার। যার যা আছে , তাই নিয়েই সহযোগিতার হাত বাড়ানো উচিত।শুকনো খাবার , যেমন চিড়া-গুড়-মুড়ি, চাল-ডাল, বিশুদ্ধ পানি, ওর স্যালাইনসহ যেকোনো কিছুই আপনি ত্রাণ সহায়তা হিসেবে দিতে পারেন।পরিধেয় পুরনো কাপড়-চোপড়ও দেয়া যেতে পারে। এ মুহুর্তে যা-ই-ই দিবেন, তাদের জন্য তাই কাজে লাগবে। তাদের জীবণ বাঁচানোর উপাদান হিসেবে তা কাজে দেবে। যাদের আগ্রহ অছে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর , অথচ কাছে-পিঠে কোনো বন্যার্তকে খুঁজে পাচ্ছেন না, তারা কিন্তু নিজের বাসায় বসেও ত্রাণ বিতরণ করতে পারেন।এদেশের জন্মসূত্রে নাগরিকদের প্রায় সবারই গ্রামের বাড়ীতে কোনো না কোনো আত্মীয় থাকেন। যাদেরকে অনুরোধ করলে আপনার হয়ে তারা অনায়াসেই ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করতে পারেন।
চিড়া-মুড়ির মত কিছু শুকনো খাবার , কিছু চাল-ডাল, নুন-তেল, বিশুদ্ধ পানি , স্যালাইন ইত্যাদি আপনার তরফ থেকে কিনে দিতে বলুন।তারপর ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে বা বিকাশ করে তাদের প্রয়োজনীয় টাকা পাঠিয়ে দিন। বিদেশে থেকেও এভাবেই সাহায্য করা সম্ভব। আপনি যদি মাত্র দু’তিন শ টাকার সাহায্য উপকরণও তাদের দেন, অনেক ক্ষেত্রে এটা তাদের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করবে। তাই দেরী না করে আসুন, যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াই। এক প্যাকেট খাবার স্যালাইন দিয়ে হলেও তাদের সাহায্য করি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন