বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সর্বোচ্চ সঙ্কোচনে জাপানের অর্থনীতি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সর্বোচ্চ সংকোচনের মধ্য দিয়ে গেছে জাপানের অর্থনীতি। নভেল করোনাভাইরাস মহামারী যে ধারণার চেয়েও বড় ধাক্কা দিয়েছে, এ তথ্যে তা উঠে এসেছে। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিটি যখন নতুন প্রধানমন্ত্রী বাছাইয়ে হিমশিম খাচ্ছে, তখন অর্থনীতির এ বেহাল দেশটির রাজনীতিবিদদের কাছে কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে হাজির হবে। খবর রয়টার্স। অন্যান্য উপাত্তেও বেহাল চিত্র ফুটে উঠেছে। মে মাসে লকডাউন প্রত্যাহার হলেও সার্বিক ভোগে যে মহামারী প্রভাব রাখছে, তা জুলাইয়ের খানা ব্যয় ও মজুরিতে পতনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত মোট দেশীয় উৎপাদনের (জিডিপি) সংশোধিত উপাত্তে দেখা গেছে, এপ্রিল-জুনে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিটি ২৮ দশমিক ১ শতাংশ বার্ষিক হারে সংকুচিত হয়েছে। প্রাথমিক উপাত্তে যেখানে ২৭ দশমিক ৮ শতাংশ সংকোচনের কথা বলা হয়েছিল। দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী রেকর্ড সংকোচন রয়টার্সের মধ্যমেয়াদি বাজার পূর্বাভাসের ২৮ দশমিক ৬ শতাংশের কাছাকাছি। উপাত্ত পরিবর্তনের পেছনে প্রধান কারণ ছিল ৪ দশমিক ৭ শতাংশ মূলধন ব্যয় হ্রাস, যেখানে প্রাথমিক উপাত্তে ১ দশমিক ৫ শতাংশ পতন হয়েছিল। এতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে অর্থনীতির বিস্তৃত খাতে কভিড-১৯ মহামারী কেমন প্রভাব রেখেছে। মিৎসুবিশি ইউএফজে মরগান স্ট্যানলি সিকিউরিটিজের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ হিরোশি মিয়াজাকি বলেন, আগামী দিনগুলোয় মূলধন ব্যয় বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে না। সামনের দিনগুলো কেমন হবে—এ অনিশ্চয়তার মধ্যে কোম্পানিগুলো তাদের ব্যয় বাড়াবে না। মঙ্গলবারের উপাত্ত নতুন প্রধানমন্ত্রীর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসবে। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর ক্ষমতাসীন দল থেকে নতুন প্রধানমন্ত্রী বাছাই হবে। অর্থনীতি চাঙ্গায় নতুন প্রধানমন্ত্রীকে বিস্তৃত অর্থনৈতিক সহায়তা প্যাকেজ গ্রহণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকা চিফ ক্যাবিনেট সেক্রেটারি ইওশিহিদে সুগা এরই মধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, যদি নির্বাচিত হন তাহলে সরকারি ব্যয় বাড়াবেন। সাম্প্রতিক সময়ে জাপানে নতুন করে কভিড-১৯ সংক্রমণ বেড়েছে। তবে পশ্চিমা দেশগুলোয় যেমন প্রাণহানি হয়েছে, সে রকমটা দেখা যাচ্ছে না। সোমবার নাগাদ জাপানে মোট আক্রান্ত দাঁড়িয়েছে ৭২ হাজার ৩২১ জন। এতে মারা গেছে ১ হাজার ৩৮০ জন। পুরো বিশ্বে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭ কোটি ৭০ লাখের বেশি এবং মারা গেছে ৮ লাখ ৮৮ হাজারেরও বেশি। টানা তিন প্রান্তিকে সংকোচনের পর জাপানের অর্থনীতিতে প্রাণের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। গাড়ির চাহিদা বৃদ্ধির ওপর দাঁড়িয়ে গত জুলাইয়ে কারখানা উৎপাদন বেড়েছে। তবে অর্থনীতি বড় আকারে যে আরোগ্য লাভ করেনি, তা মঙ্গলবারের উপাত্তে ফুটে উঠেছে। জুলাইয়ে খানা ব্যয় গত বছরের চেয়ে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। টানা পঞ্চম মাসের মতো জুলাইয়েও প্রকৃত মজুরি কমেছে। আগামীতেও যে ভোক্তাব্যয় খারাপ যাবে তার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। চলমান স্বাস্থ্য সংকট সব খাতকেই বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি হোন্ডা মোটর চলতি বছর ৬৮ শতাংশ পরিচালন মুনাফায় পতনের পূর্বাভাস দিয়েছে। মহামারীতে কসমেটিকস বিক্রি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চলতি বছরে নিট লোকসানের শঙ্কা করছে কসমেটিকস তৈরির কোম্পানি শিসেইদো। আগামী সপ্তাহে ব্যাংক অব জাপান (বিওজে) যখন তাদের পরবর্তী পলিসি মিটিংয়ে বসবে, তখন মুদ্রানীতি পুনর্বিবেচনায় এ উপাত্তগুলো অবশ্যই ভূমিকা রাখবে। তবে জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের মুদ্রানীতি অপরিবর্তিত রাখবে বলেই আশা করা হচ্ছে। গত আগস্টে পরিচালিত রয়টার্সের একটি জরিপে বলা হয়, আগামী মার্চে শেষ হওয়া চলতি অর্থবছরে জাপানের অর্থনীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ সংকুচিত হবে। পরবর্তী অর্থবছরে মাত্র ৩ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধিরও পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। গত জুলাইয়ে বিওজে সেখানে চলতি অর্থবছরে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ সংকোচন ও পরবর্তী অর্থবছরে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল। চলতি অর্থবছরে দুবার মুদ্রানীতি পরিবর্তন করেছে জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি। সেগুলো নগদ অর্থ সংকটে ভোগাক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ সুবিধা দেয়া এবং দুটি বৃহৎ সরকারি প্রণোদনা প্যাকেজে সহায়তা করা। রয়টার্স, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন