শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর মাইলফলক রায়

| প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৭ এএম

পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপরাধপ্রবণ সদস্যদের বেপরোয়া কর্মকান্ড দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম অন্তরায়। সরকার এবং পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে বিব্রত ও নিরূপায় হয়ে পড়েন অনেক সময়। বছরে হাজার হাজার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে বিভাগীয় শাস্তি দেয়া হলেও পুলিশের অপরাধ কমছে না। গুরুতর অপরাধে লঘু দন্ড এবং পুলিশী অপরাধের পর্যাপ্ত সাক্ষী ও তদন্ত না হওয়ার কারণে বেশিরভাগ অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য বিচারিক শাস্তির বাইরেই রয়ে যায়। তারা আরো বেপরোয়া হয়ে অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যেতে থাকে। দেশের পুলিশ বাহিনীর দুইলক্ষাধিক সদস্যের খুব অল্প সংখ্যক সদস্যই অপরাধের সাথে জড়িত হয়। পুলিশ বাহিনীর অধিকাংশ সদস্য পেশাগত দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠার সাথে কাজ করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড এবং পুলিশী নির্যাতন বা হেফাজতে মৃত্যুর বেশ কিছু ঘটনা ঘটলেও এসব হত্যাকান্ডের বিচার নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধী পুলিশ কর্মকর্তা বা সদস্যের তেমন কোনো বিচারের দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে ২০১৩ সালে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর বিচারের আইন সংশোধনের পর গত ৭ বছরের মধ্যে প্রথম দৃষ্টান্তমূলক বিচারের রায় হয়েছে গত বুধবার। ঢাকার সিএমএম কোর্টের সেশন জজ ইমরুল কায়েসের আদালতে হত্যাকান্ডের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তিন পুলিশ সদস্যকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং দুইজনের ৭ বছরের সাজার রায় দেয়া হয়।

পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু বা হত্যাকান্ডের অভিযোগে দায়ের করা কোনো মামলায় এ ধরনের রায়কে একটি মাইলফলক, ঐতিহাসিক রায় হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, ২০১৪ সালে রাজধানীর পল্লবী থানায় ইশতিয়াক হোসেন জনী নামের জনৈক যুবক পুলিশের নির্যাতনে মারা যান। নিহতের ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকি পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হত্যামামলা দায়ের করার পর থেকে গত ৬ বছর ধরে মামলাটির বিচার কার্যক্রম চলমান থাকে এবং অবশেষে তা চূড়ান্ত রায় লাভ করে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, সাম্প্রতিক কালে এটি এ ধরনের মামলার প্রথম দৃষ্টান্তমূলক রায়। পুলিশী অপরাধের বিভাগীয় শাস্তির বাইরে সাধারণ আদালতে এই রায়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হলো, আইন ও বিচার সকলের জন্য সমান। কোনো বিশেষ বাহিনী বা সরকারি আমলাদের জন্য এর ব্যত্যয় ঘটলে তা দেশের আইনশৃঙ্খলা এবং বিচারব্যবস্থার উপর সাধারণ মানুষের আস্থার সংকট সৃষ্টি করতে পারে। এমন সময় এই রায়টি প্রকাশিত হলো, যখন টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ কতিপয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলা নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় চলছে। ইতোমধ্যে ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাÐের অভিযোগে আরো মামলা হয়েছে। পল্লবী থানার জনি হত্যা মামলার রায়ের দৃষ্টান্ত থেকে এই প্রত্যাশা জেগে উঠেছে যে, সিনহা হত্যা মামলায় অভিযুক্তরাও এর চেয়ে কঠোর শাস্তি পাবে।

মামলার তদন্তসহ সামগ্রিক বিচার কার্যক্রমে পুলিশের পেশাদারি ভূমিকা ও সহযোগিতা ছাড়া মামলাকে চূড়ান্ত রায়ের পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়া দুঃসাধ্য। ন্যায়বিচারের স্বার্থে জনি হত্যা মামলায় পুলিশ যেভাবে সহযোগিতা ও পেশাদারি ভূমিকা পালন করেছে, সিনহা হত্যা মামলার ক্ষেত্রে পুলিশের কাছে অনুরূপ ভূমিকা প্রত্যাশা করে দেশের মানুষ। গত ১২ বছরে রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি মামলায় সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা, গোয়েন্দা কর্মকর্তা, সরকারি আমলা ও সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের বিচার ও সাজার সম্মুখীন হতে দেখা গেছে। এটা নিঃসন্দেহে আশাব্যাঞ্জক। অপরাধের বিচার অপরাধীর পেশা, অবস্থান ও রাজনীতি নিরপেক্ষ হলেই কেবল দেশে আইনের শাসন নিশ্চিত করা সম্ভব। পুলিশের অপরাধী সদস্যদের বেপরোয়া তৎপরতা কোনো নতুন বিষয় নয়। এর ফলে সমগ্র পুলিশ বাহিনীকে বদনামের ভাগীদার হয়। পুলিশের ইমেজ সংকট এবং সাধারণ মানুষের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হলে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর যথাযথ তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে। জনি হত্যা মামলার বিচারের রায় পুলিশী অপরাধের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষকে আদালতের দ্বারস্থ হতে উৎসাহ যোগাবে। পুলিশ বাহিনীর মহাপরিদর্শক ড. বেনজির আহমেদ, ডিএমপি কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উচ্চশিক্ষিত, দক্ষ ও ন্যায়পরায়ণ হিসেবে গণ্য ও প্রশংসিত। আইন ও ন্যায়বিচারের প্রতি তাদের অবস্থান ও নির্দেশনার কারণেই পুলিশের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক বিচার পরিণতি লাভ করল। এ ধরনের দৃষ্টান্তমূলক রায়ের মধ্য দিয়ে পুলিশ ও বিচার বিভাগের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বৃদ্ধি পাবে, এটা আশা করা যায়। পুলিশের ইমেজ বৃদ্ধির পাশাপাশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হবে এবং সত্যিকার অর্থে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে, এটাই সাধারণ মানুষের বড় প্রত্যাশা।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Jack Ali ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:০০ পিএম says : 0
We should break their both hands-- then they will stop torturing us.
Total Reply(0)
Mohammed Shah Alam Khan ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:২৯ পিএম says : 0
খুবই কঠিন সম্পাদকীয় লিখেছেন। বর্তমানে বাংলার জনগণ পুলিশি বেপরোয়া অপরাধের বিরুদ্ধে সচ্চার হয়েছে এবং পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা ঠোকা শুরু হয়েছে। ঠিক তখনই সরকার পুলিশকে বাচানোর জন্যে আইন করলেন সরকারের পূর্ব অনুমতি ছাড়া মামলা করা যাবে না। এটাযে সরকারের কতটা হটকারিতা সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এখনাএ সম্পাদক সাহেব বলেছেন, ‘পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপরাধপ্রবণ সদস্যদের বেপরোয়া কর্মকান্ড দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম অন্তরায়।‘ সম্পাদক সাহেব আরো বলেছেন, ‘সরকার এবং এ ধরনের দৃষ্টান্তমূলক রায়ের মধ্য দিয়ে পুলিশ ও বিচার বিভাগের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বৃদ্ধি পাবে, এটা আশা করা যায়। পুলিশের ইমেজ বৃদ্ধির পাশাপাশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হবে এবং সত্যিকার অর্থে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে, এটাই সাধারণ মানুষের বড় প্রত্যাশা।‘ কথাগুলো খুবই সত্য কথা কিন্তু এসব কি সরকার করবে??? জনগণ চায় জাতীর জনকের সময়ে যেভাবে পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করা হতো ঠিক সেই সব আইন আবার প্রণয়ন করে পুলিশকে নিয়ন্ত্রণে আনা হউক।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন