শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ভ্যাকসিন পলিটিক্সে ভারতের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৪ এএম

দ্রুততম সময়ে করোনার একটি সফল ভ্যাকসিন আবিষ্কার নিয়ে বিগত প্রায় আট মাস ধরে বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা দিন-রাত পরিশ্রম করে চলেছেন। কারণ, করোনা মানবসভ্যতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর আগে এমন ব্যাপক মরণঘাতী ভাইরাস পৃথিবীতে হানা দেয়নি। একটি কার্যকর ভ্যাকসিন যদি উদ্ভাবন না করা যায়, তবে মানুষের টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। ‘হিউম্যান রেস’ বিপন্ন হয়ে পড়বে। এখন পর্যন্ত যে মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে টিকে আছে, তার কারণ প্রচলিত কিছু ওষুধের সফল প্রয়োগ। তবে এসব প্রচলিত ওষুধ কিছু কাজ করলেও, করোনার নির্দিষ্ট ভ্যাকসিন ছাড়া এ থেকে পুরোপুরি মুক্ত হওয়া অসম্ভব। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খ্যাতিমান বিজ্ঞানীরা একটি সফল ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য অবিশ্রান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। যেকোনো সাধারণ রোগের একটি ওষুধ বা প্রতিষেধক আবিষ্কারে বিজ্ঞানীদের এক যুগেরও বেশি সময় লেগে যায়। কারণ, প্রাথমিকভাবে রোগটি প্রতিরোধে যে প্রতিষেধক নির্ধারণ করা হয়, তা এ রোগ প্রতিরোধে কতটা সক্ষম, এর প্রয়োগের পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, তা ধাপে ধাপে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়। এ প্রতিষেধকের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য সাধারণত ইঁদুর, বেড়াল, বানর, গিনিপিগের মতো প্রাণীদের বেছে নেয়া হয়। এসব প্রাণীর দেহে প্রতিষেধকটি প্রয়োগ করে এর প্রথম প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। বিজ্ঞানীরা প্রতিষেধক প্রয়োগকারী প্রাণীগুলোকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। প্রাথমিকভাবে সাফল্য দেখা দিলে প্রতিষেধকটি আরও কার্যকর এবং নিরাপদ করতে পুনরায় গবেষণা শুরু করেন। এভাবে পর্যায়ক্রমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে এক যুগ বা তারও বেশি সময় লেগে যায়। আবার দেখা যায়, কোনো কোনো প্রতিষেধক শুরুতেই অকার্যকর হয়ে পড়ে। বিজ্ঞানীরা নতুন করে গবেষণা শুরু করেন। এটি একটি নিরন্তর প্রক্রিয়া। এখানে জরুরী পরিস্থিতি বা তাড়াহুড়ো বলে কিছু নেই। কিন্তু করোনা এমনই এক ভাইরাস যা, অল্প সময়েই মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় এবং তা অত্যন্ত ছোঁয়াছে ও দ্রুত গতিতে মানুষকে আক্রমণ করে। এই ভাইরাসে ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী সাড়ে আট লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং তা অব্যাহত আছে। অনিবার্যভাবেই করোনার একটি কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কার জরুরী হয়ে পড়েছে। গত আট মাসে বিশ্বজুড়ে দুই শতাধিক করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের কাজ চলছে। এর মধ্যে ক্লিনিক্যালি ট্রায়ালের মধ্যে আছে ২৭টি।

দুই.
করোনা যে শুধু প্রাণসংহারী তা নয়, এটি মানুষের জীবন-জীবিকা এবং অর্থনীতিকে শ্লথ করে দিয়েছে। ফলে অর্থনীতির চাকা এবং মানুষের জীবিকা সচলে করোনা ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের কোনো বিকল্প নেই। তবে ভ্যাকসিন আবিষ্কার নিয়ে যে বিশ্বরাজনীতি হবে এবং এর পরিবর্তন ঘটবে, এ কথা এর আগের একটি নিবন্ধে উল্লেখ করেছিলাম। আমরা দেখেছি, যে কোনো দুষ্প্রাপ্য ও মূল্যবান জিনিস নিয়ে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ এমনকি সংঘাত সৃষ্টি হয়। মধ্যপ্রাচ্যের কোনো কোনো দেশের তেলের দখল নিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো জঙ্গী নিধনের নামে যুদ্ধ বাঁধিয়ে কীভাবে ধ্বংস করে চলেছে, তা সকলেই অবগত। ইরাককে তো ধ্বংসস্তুপে পরিণত করা হয়েছে। লিবিয়াকেও তাই করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো কিছু পথভ্রষ্ট মুসলমানকে জঙ্গী ‘ব্লেম’ দিয়ে কুরাজনীতি করে ধ্বংসলীলা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে একই রাজনীতি শুরু হয়েছে। করোনার শুরুতেই এর উৎপত্তি নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাকযুদ্ধ শুরু হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প বরাবরই এর জন্য চীনকে দায়ী করেছেন। এমনকি করোনাকে ‘চায়না ভাইরাস’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। করোনার সব দায় নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য চীনকে বলেছেন। বোঝা যাচ্ছে, করোনা নিয়ে এই রাজনীতি বিশ্বে এক নতুন স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা করেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই রাজনীতির মূল লক্ষ্য পরাশক্তির দেশগুলোর ‘বিশ্বনিয়ন্ত্রক’ হওয়া এবং তাদের কথা মতো বিভিন্ন দেশকে নিয়ন্ত্রণ করা। পাশাপাশি অর্থনৈতিক রাজনীতি করা। সাধারণভাবে বিবেচনা করলে দেখা যায়, যে দেশে দুর্ভিক্ষ থেকে শুরু করে মহামারি লেগে থাকে, সে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি শ্লথ হয়ে যায়। উন্নতি করতে পারে না। সোমালিয়ার দুর্ভিক্ষ তার উদাহারণ হয়ে রয়েছে। এ নিয়ে বিশ্বরাজনীতিও কম হয়নি। এখন এমনও হতে পারে, বিশ্বের পরাশক্তিগুলো করোনাকে টিকিয়ে রেখে এর ভ্যাকসিন ব্যবসা নিয়ে অর্থনৈতিক যুদ্ধ শুরু করতে পারে। অর্থাৎ যে দেশ করোনার সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে পারবে, সে দেশ এ যুদ্ধে এগিয়ে থাকবে। এজন্যই ভ্যাকসিন আবিষ্কারে কে কার আগে এগিয়ে থাকবে এবং বাজারে আনবে, এ নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। একটি দেশ যদি সবার আগে এ কাজটি করে ফেলে, তবে বিশ্বরাজনীতি এবং অর্থনীতিও ওপর প্রভাব এবং নিয়ন্ত্রণের একটা হাতিয়ার সে পেয়ে যাবে। এ নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং দর কষাকাষি শুরু হবে। দেশটি যদি বিশ্বের মানুষের জন্য তার উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন উন্মুক্ত করে না দিয়ে নিজের সম্পদ ভেবে ব্যবসা করতে চায়, তবে করোনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নাও হতে পারে। এ নিয়ে পরাশক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে অলরেডি এক ধরনের স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। এ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস অ্যাডানোম একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ভ্যাকসিন নিয়ে বিভিন্ন দেশ যদি জাতীয়তাবাদী আচরণ বা নিজস্ব সম্পদ দাবী করে উন্মুক্ত না করে, তবে করোনা মহামারি মোকাবেলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। এ ভাইরাস থেকে মুক্ত হতে হলে সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। বিশ্বের একাংশ বা গুটিকয়েক দেশ একা একা নিজেদেরকে ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখতে পারবে না। বিশ্বের প্রতিটি দেশ নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত কেউই নিরাপদ নয়। তাই প্রত্যেকটি দেশকে ভ্যাকসিন রাজনীতি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, ভ্যাকসিন রাজনীতিতে এগিয়ে থাকতে সর্বপ্রথম যুক্তরাষ্ট্র রেমডিসিভির নামে প্রতিষেধকের কার্যকারিতা ঘোষণা করে। তবে এটি যে শুধুমাত্র করোনার নির্দিষ্ট ভ্যাকসিন, তা নয়। এ ওষুধটি তা প্রতিরোধে কাজ করে। যুক্তরাষ্ট্র এ ওষুধের নাম ঘোষণা করে বোঝাতে চেয়েছে, আমারই এগিয়ে আছি। বাংলাদেশের দুটি বিখ্যাত কোম্পানি বেক্সিমকো ও এসকেএফ এই রেমডিসিভির দ্রুত উৎপাদন করেছে। ইতোমধ্যে বেক্সিমকো পাকিস্তান ও নেপালে এই ওষুধ রপ্তানি করেছে। এখন এটি যদি শুধুই করোনার প্রতিষেধক হতো, তাহলে এতদিনে বিশ্বে এই ওষুধই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হতো। এ নিয়ে রাজনীতিও হতো না। অর্থাৎ এটি করোনার মূল ভ্যাকসিন নয়। এটি করোনা প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তা নাহলে, বিশ্বে এই যে দুই শতাধিক ভ্যাকসিন আবিষ্কার কার্যক্রম চলছে এবং ২৭টি চূড়ান্ত ট্রায়ালে রয়েছে, এসবের প্রয়োজন পড়ত না।

তিন.
করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারে এখন পর্যন্ত চীন এগিয়ে। তার উদ্ভাবিত সিনোভ্যাক ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এর আগে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন অনেকটা এগিয়ে থাকলেও তার চূড়ান্ত ফলাফল কি, এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। ভ্যাকসিন আবিষ্কারের রেসে যে চীন এগিয়ে তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। এটাকে একদিকে সাধারণভাবে করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারের সাফল্য যেমন বলা যায়, তেমনি রাজনীতিও বলা যায়। কারণ, এ কথা প্রতিষ্ঠিত যে, করোনা পরবর্তী বিশ্বরাজনীতি এবং অর্থনীতির মূল নিয়ন্ত্রক হতে যাচ্ছে চীন। ইতোমধ্যে সে প্রতিবেশি দেশগুলোর পাশে করোনা মোকাবেলায় সহযোগিতাসহ অর্থনৈতিক উন্নতিতে ব্যাপক সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে চলেছে। আবার ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যবাদী নীতিরও ঠিক ঠিক জবাব দিচ্ছে। বাংলাদেশে যদি করোনাকালে চীনের ভূমিকার কথা উল্লেখ করা হয়, তবে বলতে হবে এ সময়ে অন্য কোনো দেশ বাংলাদেশের পাশে চীনের মতো সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়ায়নি। চীনে বাংলাদেশী সাড়ে আটশ’ পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধাসহ করোনা মোকাবেলায় যত ধরনের সহযোগিতা আছে, তার সব নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিনিয়োগে তিস্তা প্রকল্পে ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব, বাংলাদেশে করোনা পরীক্ষা, ট্রেসিং ও চিকিৎসাসেবার সক্ষমতা বাড়াতে ১০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়াসহ অন্যান্য খাতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। তার উদ্ভাবিত করোনা ভ্যাকসিনের তৃতীয় বা চূড়ান্ত পরীক্ষা করার বিষয়টি সর্বপ্রথম বাংলাদেশকে দেশটি প্রস্তাব করে। বাংলাদেশের পাশে চীনের এসব সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়ানোর বিষয়টি ভারতকে ব্যাকুল করে তোলে। কারণ, ভারত মনে করছে, চীনের এই সহযোগিতার কারণে বাংলাদেশ ভারতের বলয় থেকে বের হয়ে চীনের বলয়ে ঢুকে যাচ্ছে। এ নিয়ে তার উদ্বেগের সীমা ছাড়িয়ে যায়। পর্যবেক্ষকদের মতে, বাংলাদেশে চীনের ভ্যাকসিন পরীক্ষা দেরিতে শুরু করার পেছনে ভারতের হাত রয়েছে। সে চাচ্ছিল, এ ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত পরীক্ষা যাতে বাংলাদেশে না হয়। এর কারণ বুঝতে অসুবিধা হয় না। ভারত ভাল করেই জানে, এ ভ্যাকসিনের পরীক্ষা শুরু হলে করোনা নিয়ে বাংলাদেশের সাথে তার রাজনীতি করার কিছু থাকবে না। এ জন্য হঠাৎ করেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রীংলা এক অনির্ধারিত সফরে তড়িঘড়ি করে বাংলাদেশে ছুটে আসেন। সফরের মূল কারণ, বাংলাদেশ যাতে চীনের দিকে বেশি ঝুঁকে না পড়ে এবং তার আয়ত্তের মধ্যেই থাকে। যদিও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সাথে করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে কথা হয়েছে। এ নিয়ে দুই দেশ কাজ করবে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যেখানে ভারতই এখন করোনায় নাস্তানাবুদ হয়ে আছে এবং কার্যকর কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়নি, সে কীভাবে বাংলাদেশের সাথে ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করবে? তবে এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত প্রাজ্ঞতা এবং দূরদর্শিতা দেখিয়েছেন। তিনি ভারতকে যেমন সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তেমনি শ্রীংলার সফরের পরপরই চীনা ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত পরীক্ষার অনুমোদন দিয়ে দিয়েছেন। ভ্যাকসিনটি চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে বাংলাদেশকে চীন সবার আগে বিনামূল্যে এক লাখ ভ্যাকসিন দেবে। অর্থাৎ ভ্যাকসিন পলিটিক্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের চেয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে গেলেন। শুধু তাই নয়, ইতোমধ্যে বেক্সিমকোর উৎপাদিত পাঁচ হাজার রেমডিসিভির প্রতিষেধক নেপালেও রপ্তানি করা হয়েছে। সান্ত¦না হিসেবে ভারতের সাথে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন পেতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে বেক্সিমকো একটি চুক্তি করেছে। বলা যায়, ভারতের সাথে ভ্যাকসিন রাজনীতিতে বাংলাদেশ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সাফল্য লাভ করেছে। ভারত যে এ রাজনীতিতে পিছিয়ে গেছে, তা সেও ভাল করেই জানে। কিন্তু তার বলার কিছু নেই। আর এর পুরো কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য নিকটতম প্রতিবেশী নেপাল ও ভুটানের সাথে সম্পর্ককে গভীর করতে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে পদক্ষেপ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্ম ওলির সাথে তিনি ফোনে কথা বলেছেন এবং নেপালকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন সার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বাংলাদেশের সাথে চীন, নেপাল, ভুটান ও পাকিস্তানের সাথে সুসর্ম্পক সৃষ্টি যে ভারতের ভাল লাগার কথা নয়, তা একজন সাধারণ মানুষও বোঝে। এটাও বোঝে, তার দাদাগিরি ও আধিপত্যবাদী নীতির কারণে প্রতিবেশী দেশগুলো দূরে সরে গেছে এবং যাচ্ছে। এর জন্য ভারত শুধু নিজেকেই দায়ী করতে পারে।

চার.
করোনা যেমন মানুষের জন্য মরণঘাতী হয়ে এসেছে, তেমনি এককেন্দ্রিক বিশ্বরাজনীতিতেও আঘাত হেনেছে। এতে আধিপত্যবাদী শক্তির বলয়ে থাকা দেশগুলোর পক্ষে নিজেদের স্বার্থের দিক বিবেচনা করে বের হয়ে আসার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যে দেশ আধিপত্যবাদ ছেড়ে পারস্পরিক বন্ধুত্বের সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসছে, তার দিকেই দেশগুলো মুক্তভাবে ঝুঁকেছে এবং আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে কৌশলে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীনের মধ্যে যে প্রচ্ছন্ন রাজনীতি শুরু হয়েছে, তাতেও বাংলাদেশ রয়েছে। এখন দেখার বিষয়, এ যুদ্ধে কে এগিয়ে থাকে এবং নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প তো মনেপ্রাণে চাচ্ছেন, আগামী ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে অক্টোবরের মধ্যে বাজারে ভ্যাকসিন নিয়ে আসতে। এতে তার বিজয়ের পথ এবং বিশ্বরাজনীতিতে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের পথ সুগম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যাকসিন গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো ধারণা করছে, নির্বাচনের আগে বাজারে ভ্যাকসিন আসার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ পর্যাপ্ত পরীক্ষা ছাড়া বাজারে ভ্যাকসিন ছাড়লে তার ফলাফল উল্টো হতে পারে। অন্যদিকে রাশিয়ার আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনের প্রয়োগ শুরু হলেও ইউরোপের দেশগুলো তা নিয়ে অনাগ্রহ ও সংশয় প্রকাশ করেছে। জার্মানি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে, যে টিকার পূর্ণাঙ্গ ট্রায়াল হয়েছে, সে টিকা ছাড়া অন্য টিকার অনুমোদন ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেবে না। দেখা যাচ্ছে, একমাত্র চীনের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনটিই এখন পূর্ণাঙ্গ ট্রায়ালের শেষের দিকে রয়েছে এবং তার সাফল্যের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে চীনের ভ্যাকসিনই হতে পারে বিশ্বের প্রথম পূর্ণাঙ্গ এবং কার্যকর করোনার ভ্যাকসিন। তা হলে ভ্যাকসিন রাজনীতিতে বিশ্বে চীনই এগিয়ে থাকবে। বাংলাদেশ অটোমেটিক্যালি এই ভ্যাকসিন রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে গেছে। এটা সম্ভব হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত বিচক্ষণ কূটনৈতিক নীতির কারণে।
darpan.journalist@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
Mahmud Hasan ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:০৯ এএম says : 0
তার মানে চীন খেলোয়াড়দের কঠিন খেলোয়াড়, তবে এখন আমাদের পাশের দাদাদের কি উপায় হবেগো???
Total Reply(0)
Mahmud Hasan ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:১১ এএম says : 0
আসলে ভারতের কোনো দিক দিয়েই কোনো অর্জন নেই।
Total Reply(0)
কামাল রাহী ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:১৩ এএম says : 0
ইন্ডিয়া তো শুধু গায়ের জোর খাটিয়ে প্রভাব বিস্তার করে। ভ্যাকসিন নিয়ে তাদের পলিটিক্স গ্রহণযোগ্য নয়।
Total Reply(0)
নাসিম ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:১৫ এএম says : 0
বাংলাদেশ ভারতর চেয়ে অনেক পরিপক্ক ও ভদ্র রাষ্ট্র। এখানে পলিটিক্স চলে না।
Total Reply(0)
প্রতিদিন কুমিল্লা ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:১৫ এএম says : 0
বাংলাদেশের জন্য সুখবর।
Total Reply(0)
সোলায়মান ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:৫১ এএম says : 0
দাদাগিরি ও আধিপত্যবাদী নীতির কারণে প্রতিবেশী দেশগুলো দূরে সরে গেছে এবং যাচ্ছে। এর জন্য ভারত শুধু নিজেকেই দায়ী করতে পারে।
Total Reply(0)
রিপন ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:৫১ এএম says : 0
চীনের ভ্যাকসিনই হতে পারে বিশ্বের প্রথম পূর্ণাঙ্গ এবং কার্যকর করোনার ভ্যাকসিন। তা হলে ভ্যাকসিন রাজনীতিতে বিশ্বে চীনই এগিয়ে থাকবে। বাংলাদেশ অটোমেটিক্যালি এই ভ্যাকসিন রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে গেছে। এটা সম্ভব হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত বিচক্ষণ কূটনৈতিক নীতির কারণে।
Total Reply(0)
আবদুর রহমান ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:৫২ এএম says : 0
বাস্তবতার নিরিক্ষে সুন্দর ও বিশ্লেষণধর্মী এই লেখাটির জন্য কামরুল হাসান দর্পণ সাহেবকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)
ইব্রাহিম ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:৫৩ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদের দেশে কর্তাব্যক্তিদেরকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের তৌফিক দান করুক।
Total Reply(0)
মমতাজ আহমেদ ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:৫৮ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদেরকে এই বৈশ্বিক মহামারী থেকে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে হেফাজত করুক।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন