বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পদ-প্রার্থিতায় নেতার ছড়াছড়ি

আন্দোলনে লোকবল সঙ্কটে বিএনপি

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। জাতীয় নির্বাচনে কৌশল নির্ধারণে ব্যর্থতার কারণে ভরাডুবি হয়েছে। দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে করাবন্দী হলেও কার্যকর কোন আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। নেতাদের ব্যর্থতার কারণে পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়ে বেগম জিয়াকে কারামুক্ত করেছেন। চার, চার বার রাষ্ট্র ক্ষমতার সুবিধা ভোগ করলেও রাজপথে কঠোর আন্দোলনের জন্য বরাবরই লোকবলের সঙ্কটে ভুগতে হয়েছে আন্দোলনমুখী নেতাদের। রাজপথে লড়াইয়ের পরিবর্তে লোক দেখানো ঝটিকা মিছিল, ফেসবুকে ছবি পোস্টের বৃত্তেই আটকে গেছে বিএনপি। এজন্য এখন পর্যন্ত কোন আন্দোলনেই সফলতার মুখ দেখেনি দলটি।

তবে আন্দোলন-সংগ্রামে পদ-পদবী ও নির্বাচনে মনোনয়নের সময় এলেই হুমড়ি খেয়ে পড়েন অসংখ্য নেতা। মনোনয়ন ও পদ পেতে এই দুঃসময়েও নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হন প্রার্থীদের কর্মীরা। যে কোন নির্বাচনেই একেকটি আসনে ৮-১০ জন নেতাও মনোনয়ন পেতে চালান লবিং-তদবির। আবার নির্বাচন শেষ হলেই তাদের খুঁজে পায়না স্থানীয় নেতাকর্মীরা। নির্বাচনের মতো পদ-পদবীর ঘোষণা এলেও নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয় ও গুলশান চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে স্লোগানে, স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন মনোনয়ন ও পদপ্রত্যাশীদের অনুসারিরা।

নেতাকর্মীদের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, আন্দোলনের সময় হলে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। সময় হলে অনেকের টেলিফোন বন্ধ পাওয়া যায়। আবার আন্দোলনের সময় চলে গেলে তারা বলে আন্দোলন চাই।
নতুন করে পাঁচটি শূণ্য আসনে উপ-নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শূণ্য হওয়ার পর থেকেই এসব আসনে মনোনয়ন পেতে দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। অভিযোগ রয়েছে যারা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কোন দিন এলাকায় যাননি তারাও দীর্ঘদিন এলাকায় যাওয়া-আসা শুরু করেন।

বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত দিলে এবং মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করলে হুমড়ি খেয়ে পড়েন নেতারা। পাবনা-৪ আসনের প্রার্থী আগেই ঘোষণা হয়ে যাওয়ায়, বাকী ৪টি আসনেই দলীয় প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন ২৯জন। এর মধ্যে- ঢাকা-৫ আসনে ৬জন, ঢাকা-১৮ আসনে ৯জন, সিরাজগঞ্জ-১ আসনে ৫জন এবং নওগাঁ-৬ আসনে ৯জন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলীয় মনোনয়ন পেতে আগ্রহী প্রার্থীরা যে কেউ ফরম কিনতে পারবেন। এদের মধ্য থেকে দল যাকে যোগ্য মনে করবে তাকেই প্রার্থী করবে।

মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা হলেন- ঢাকা-৫ আসনে সালাহউদ্দিন আহমেদ, নবী উল্লাহ নবী, অধ্যক্ষ সেলিম ভ‚ঁইয়া, মো. জুম্মন মিয়া, আকবর হোসেন নান্টু ও আনোয়ার হোসেন সরকার।

ঢাকা-১৮ আসনে ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, বাহাউদ্দিন সাদী, হাজী মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, কফিল উদ্দিন, এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, ইসমাইল হোসেন, আখতার হোসেন, হাজী মোস্তফা জামান ও আব্বাস উদ্দিন।
সিরাজগঞ্জ-১ আসনে টিএম তহজিবুল রহমান তুষার, নাজমুল হাসান তালুকদার রানা, মো. রবিউল হাসান, সেলিম রেজা ও রুমানা মাহমুদ কনকচাঁপা।

নওগাঁ-৬ আসনে আনোয়ার হোসেন, মো. আব্দুস শুক্কুর, এস এম ফারুক জেমস, মাহমুদুল আরেফিন স্বপন, আতিকুর রহমান রতন মোল্লা, শেখ মো. রেজাউল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, আবু জাহিদ মো. রফিকুল আলম রফিক ও ইছহাক আলী।
এর মধ্যে গতকাল শনিবার প্রার্থীদের সাক্ষাতকার অনুষ্ঠানে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে সংঘর্ষে লিপ্ত হন ঢাকা-১৮ আসনের দুই প্রার্থী কফিলউদ্দীন-এসএম জাহাঙ্গীরের কর্মী-সমর্থকরা।

এর আগে ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে যুবদল নেতা এসএম জাহাঙ্গীরকে মনোনয়ন না দিতে দলের হাইকমান্ডের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন বিএনপি সমর্থিত আট কাউন্সিলর প্রার্থী। আবেদনকারীরা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন। তারা অভিযোগ করেন গত ঢাকা সিটি নির্বাচনে এসএম জাহাঙ্গীর সরকারের সাথে আঁতাত করে নিজের সব মামলা চার্জশিট থেকে প্রত্যাহার করে নেন। এছাড়া বেগম জিয়া জেলে যাওয়ার পর ওই নির্বাচনী এলাকায় তিনি কোনদিন মিছিল-সমাবেশে অংশগ্রহণ করেননি।

জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদেই ৩০০ আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন সাড়ে ৪ হাজারের বেশি প্রার্থী। কিন্তু নির্বাচনের পর তাদের বেশিরভাগকেই এলাকায় খুঁজে পাননি স্থানীয়রা।
একইভাবে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কমিটি পুনর্গঠন শুরু হলেই নেতাকর্মীদের হুড়োহুড়ি লেগে যায়। মনোনয়নের মতো পদ পেতেও নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ, দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনাও একাধিকবার ঘটেছে। আবার যারা কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভাঙচুর করে তাদেরকেই পরবর্তীতে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দেয়া হয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতান্ত্রিক পথেই আমরা সরকার পরিবর্তনে বিশ্বাসী। এ কারণে সব নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। নির্বাচনে অংশ নেওয়াটা আমাদের আন্দোলনের অংশ, পার্ট অব দ্যা মুভমেন্ট। আপনি যখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করতে পারছেন না, ডেমোনেস্ট্রেশন করতে পারেন না, তখন তো সেই সুযোগগুলো নিতে হবে যে সুযোগে আপনি কিছুটা হলেও জনগণের কাছে যেতে পারবেন, জনগণকে নিয়ে এগিয়ে আসতে পারবে, কথাগুলো বলতে পারবেন। সেই কারণে আমাদের সব অ্যাকশন গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য, আমাদের আন্দোলনটা গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার দেশকে অন্ধাকার গহ্বরে ফেলে দিয়েছে। গণতান্ত্রিক সব স্পেস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই অবস্থায় আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে পৌঁছাচ্ছি, তাদেরকে সংগঠিত করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে রাজপথে নামতে হবে। #

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন