স্টাফ রিপোর্টার : ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সাত পরামর্শ দিয়েছেন। দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ও বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি ও ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানগুলোতেও নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। এ কারণে তারা এসব স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য ক্রমাগতভাবে বাড়তি স্থায়ী পুলিশ নিয়োগের জন্য পুলিশের কাছে আবেদন করেছে। পুলিশের সংখ্যার স্বল্পতার কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী পুলিশ দেয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো: আছাদুজ্জামান মিয়া। তবে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাড়াতে ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় জনগণকে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের উদ্দেশে সাতটি পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
ডিএমপির আটটি বিভাগের উপ-কমিশনারদের (ডিসি) কাছে এ ব্যাপারে পরামর্শ পাঠানো হয়েছে। এতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের করণীয় নির্ধারণসহ জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে পুলিশের করণীয় সম্পর্কে বলা হয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার ওই চিঠিতে লিখেছেন, ‘জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় পুলিশের পাশাপাশি জনগণকেও সম্পৃক্ত করতে হবে। এ জন্য জাতিসংঘ, অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিদেশী ব্যাংক ও এনজিওর অফিস, গার্মেন্টস সামগ্রী ক্রেতাদের অফিস, বিদেশীদের ক্লাব, বিনোদন কেন্দ্র, ইংরেজি মাধ্যমের সব স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কোচিং সেন্টার, ছাত্রাবাস, মেস, সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শপিংমল, ব্যাংক, দেশী এনজিও, সব ধরনের সরকারি ও বেসরকারি অফিস, সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অফিস ও স্থাপনা নিয়মিত পরিদর্শন করতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার এবং সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর (শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে শিক্ষক, ছাত্র ও অভিভাবক) সমন্বয় সভা করে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়নে সচেতন করতে হবে।
তিনি চিঠিতে আরো উল্লেখ করেছেন, দেশী ও বিদেশী সংস্থাসহ জননিরাপত্তা রক্ষায় ডিএমপির পক্ষ থেকে সামর্থ্যরে সর্বোচ্চ উদ্যোগ ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানের মালিক তাদের প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নিরাপত্তার জন্য ক্রমাগতভাবে বাড়তি স্থায়ী পুলিশ নিয়োগের জন্য চাহিদা দিচ্ছেন। কিন্তু ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা রক্ষায় পেট্রোল ডিউটি, চেকপোস্ট, ব্লক রেইড, তল্লাশি অভিযান, দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান পুলিশি ব্যবস্থা গ্রহণ, বিভিন্ন দূতাবাস, ঢাকাস্থ আন্তর্জাতিক সংস্থার স্থানীয় কার্যালয় এবং কূটনীতিকদের আবাসিক এলাকার পাশাপাশি ঢাকায় বসবাসকারী বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের বাড়িতে নিরাপত্তা দেয়া, ভিভিআইপি, ভিআইপি, বিচারপতিদের বাসায় প্রহরা ও সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা বাড়ানো এবং গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিভিন্ন স্থাপনায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ক্রমবর্ধমান নৈমিত্তিক চাহিদার প্রেক্ষিতে পুলিশ ফোর্সের স্বল্পতার কারণে চাহিদা অনুযায়ী সবখানে স্থায়ীভাবে পুলিশ ফোর্স নিয়োজিত করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সব নিরাপত্তা বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। কেননা, নিরাপত্তা একটা সামগ্রিক ব্যাপার। সরকার সাধ্য অনুযায়ী যেমন চেষ্টা করবে, তেমনি নাগরিকদেরও করণীয় সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। এ জন্য তাদের মানসিকভাবে তৈরি থাকতে হবে। একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মরত লোকদের স্বভাবচরিত্র যাচাই-বাছাই করা, তাদের লক্ষণীয় কোনো পরিবর্তন আছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করা প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধারের দায়িত্ব।
চিঠিতে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা জোরদারের জন্য সাতটি পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার। তিনি লিখেছেন, আপনার প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনাসমূহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে বিষয়গুলো অবশ্যই মেনে চলবেন।
১. প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনাসমূহের চার দিকের দেয়াল যথাসম্ভব উঁচু করা এবং দেয়ালের ওপর সুরক্ষিত গ্রিল বা কাঁটাতারের বেড়া দেয়া। এতে সহজেই যে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। এর ফলে আপনার প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ির নিরাপত্তা অনেকখানি নিশ্চিত হবে।
২. আপনার প্রতিষ্ঠানে একটি করে রেজিস্টার খাতা রাখার ব্যবস্থা করতে পারেন এবং এই রেজিস্টার খাতায় প্রবেশের সময় দর্শনার্থীর নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর অন্তর্ভুক্ত করে রাখুন। এতে কারা কখন এলো বা গেল এর একটি পরিসংখ্যান থাকবে, যা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে আপনার কাজে লাগতে পারে।
৩. প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ির চার দিকে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করুন। আলোযুক্ত স্থানে দুষ্কৃতকারীরা সহজে প্রবেশ করতে চাইবে না। সম্ভব হলে আপনার প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে সিসিটিভি লাগানোর ব্যবস্থা করুন। সিসিটিভির ফুটেজ থেকে যে কোনো অপরাধীকে পুলিশের পক্ষে শনাক্ত করা সহজ হবে।
৪. যানবাহন তল্লাশির জন্য ভেহিকল সার্চ মিররের ব্যবস্থা করুন। ভেহিকল সার্চ মিরর বড় ধরনের যে কোনো বিপদ থেকে আপনাকে রক্ষা করতে সহায়ক হবে।
৫. প্রতিষ্ঠান ও স্থপনাসমূহের প্রবেশমুখে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে লাগেজ স্ক্যানার স্থাপন করুন।
৬. পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রাইভেট সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ করুন।
৭. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সশস্ত্র আনসার নিয়োগ করতে পারেন।
এছাড়াও চিঠিতে তিনি পুলিশ উপ-কমিশনারদের (ডিসি) নিয়মিত উঠান বৈঠক ও কমিউনিটি বৈঠক আয়োজনের মাধ্যমে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। বৈঠকে কী কী আলোচ্য বিষয় থাকবে সে বিষয়েও ওই চিঠিতে ডিসিদের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন