বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহতের পূর্বে ভুট্টো ও কিসিঞ্জারের বাংলাদেশ সফর তাৎপর্যপূর্ণ

শোকের মাস আগস্ট

প্রকাশের সময় : ৯ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : একাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পূর্বে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হেনরি কিসিঞ্জারের বাংলাদেশ সফর সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে ছিল নানা দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। এর আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোও বাংলাদেশে তিন দিনের সফরে আসেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ১৯৭৪ সালের ৩০ অক্টোবর ১৯ ঘন্টার সফরে বাংলাদেশে আগমন করেন এবং গণভবনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দুই ঘণ্টাব্যাপী আলাপ-আলোচনা করেন। কিসিঞ্জারের এই সফরের প্রায় নয় মাস পনের দিন পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হন। জুলফিকার আলী ভুট্টো ১৯৭৪ সালের ২৪ জুন বাংলাদেশ সফরে আসেন।
হেনরি কিসিঞ্জারের এই সফর সম্পর্কে বিশিষ্ট মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিপস্যুলজ লেখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রমতে কিসিঞ্জারের ঢাকা ভ্রমণের এক মাসের মধ্যে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসটি কুচক্রী মহলের যোগাযোগ ক্ষেত্রে পরিণত হয়।
অধ্যাপক আবু সাইয়িয়ের লেখা ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড ফ্যাক্টস এন্ড ডকুমেন্টস’ গ্রন্থে এ সম্পর্কিত বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া লিপস্যুলজ তার ‘বাংলাদেশÑদ্য আনফিনিশ্ড  রেভ্যুলিউশন’ গ্রন্থেও এই বিষয়ে লিখেছেন।
সফরের সময় গণভবনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনা শেষে কিসিঞ্জার অপেক্ষমান সাংবাদিকদের বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলেন, একটি মানুষের অনুধাবন ক্ষমতা যে এতো ব্যাপক হতে পারে তা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপ না হলে কখনও বুঝতে পারতেন না। জাতির জনকের কাছ থেকে এই অভিজ্ঞতা তার কাছে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।
এ সময় একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, শেখ মুজিবের দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞা যদি এমনই তাহলে আপনি ১৯৭১ সালে বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন কেন? কিসিঞ্জার এর উত্তর না দিয়ে সম্মেলন কক্ষ ত্যাগ করলে তিন মিনিটের মধ্যেই সাংবাদিক সম্মেলন শেষ হয়ে যায়।
লিপস্যুলজ আরও লেখেন, যারা তখন কিসিঞ্জারের পরিকল্পনার সম্পর্কে অবগত ছিলেন তাদের কাছে তার এই বক্তব্য ছিল এক ধরনের ব্যঙ্গোক্তিমাত্র।
এ ছাড়া কোনো দেশের রাষ্ট্রপ্রধান যখন প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের ভাষণ দিতে যান, তখন প্রটোকল অনুযায়ী তাকে সৌজন্যমূলকভাবে ওয়াশিংটন সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়। বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বার বার অনুসন্ধান করা সত্ত্বেও শেখ মুজিবের ওয়াশিংটন সফর সম্পর্কে  কোনো সুস্পষ্ট ব্যবস্থা পাওয়া যাচ্ছিল না।
শেষ মুহূর্তে যখন পরিষ্কার হয়ে গেলো, যাই হোক না কেনো, শেখ মুজিব ওয়াশিংটনে তার বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য যাবেনই তখন নিরূপায় হয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট হোয়াইট হাউসে মাত্র ১৫ মিনিটের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
তবে ব্যবস্থা ও অনুষ্ঠানটি ছিল অত্যন্ত শীতল। কিসিঞ্জার ওয়াশিংটনে শেখ মুজিবের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ প্রদান করেননি। নিউইয়র্কে জাতিসংঘে অবশ্য শেখ মুজিবের সঙ্গে তিনি দেখা করেন ও ছবি তোলেন।
লিপস্যুলজ তাই বলেছেন, শেখ মুজিব সম্পর্কে কিসিঞ্জারের, বিশেষিত শব্দগুলো ‘এ ম্যান অব ভাস্ট কনসেপশন’ ছিল এক ধরনের কথার কথা।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত শনিবার একটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে কিসিঞ্জারের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ করে মামলা করার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানকে কুপরামর্শ দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত। ওই সময় তার শয়তানি ক্ষমা করা যায় না।
অর্থমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় একাত্তরের ১২ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের রেজ্যুলুশন করা হলেও কিসিঞ্জারের কারণে সেটা দেরি হয়। কিসিঞ্জার ইয়াহিয়া খানকে চাপ দিয়েছিলেন এটা করা যাবে না। এই দেরির কারণে ১৪ ডিসেম্বর স্বাধীনতা বিরোধীরা বুদ্ধিজীবীদের হত্যার সুযোগ পায় বলে অভিযোগ করেন তিনি ।
এ জন্য সব বুদ্ধিজীবীকে হত্যার দায় কিসিঞ্জারের উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, তার (কিসিঞ্জার) বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়নি। আমি মনে করি, তার (হেনরি কিসিঞ্জার) বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মামলা করা উচিত।
এর আগে ১৯৭৪ সালের ২৪ জুন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো বাংলাদেশে তিন দিনের সফরে আসেন। তার সঙ্গে সফরসঙ্গী ছিলেন সর্বমোট ১০৭ জন। এদিকে একজন বিদেশী রাষ্ট্রনায়ককে যোগ্য সম্মান প্রদর্শনের জন্য বঙ্গবন্ধু সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও ভুট্টোর আগমনের দিন বাংলাদেশে পাকবাহিনীর গণহত্যা ও বর্বরতার ভয়াল দিনসমূহের ছবি সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করে।
হেনরি কিসিঞ্জারের ঢাকা আগমন ছাড়াও পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পূর্ব পর্যন্ত এক বছরের বেশী সময় ধরে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক ঘটনার মধ্যে কয়েকটি বিশেষ ঘটনা ছিল দক্ষিণ ভিয়েতনামের বিপ্লবী সরকারকে স্বীকৃতি দান ও তার রাষ্ট্রপ্রধানকে বাংলাদেশে লালগালিচা সংবর্ধনা, ১৯৭৪ সালের প্রচ- বন্যা ও বন্যা উদ্ভূত দুর্ভিক্ষ, খন্দকার  মোশতাকের ইরান সফর ইত্যাদি। এ সবকিছুই বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে সম্পর্কিত বলে অনেকে মনে করেন।






























 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন