শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

শ্রমবাজার হারানোর ঝুঁকি দূর করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার ৮ বছর ধরে বন্ধ। বাজার উন্মুক্ত করার ক্ষেত্রে অগ্রগতির তেমন কোনো খবর নেই। এই অচলাবস্থার কারণে বাংলাদেশী কর্র্মীরা সে দেশে কাজের জন্য যেতে পারছে না। বাস্তবতা এমন যে, প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরাও বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়ে যেতে পারছে না। এমতাবস্থায়, বাজারটি পুরোপুরি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। সেখানে বাংলাদেশী কর্মীদের নিয়োগ বন্ধ থাকলেও অন্যান্য দেশের বিশেষত পাকিস্তান ও ভারতের কর্মীদের নিয়োগ যথারীতি অব্যাহত রয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের নিরূপায় হয়ে বিদেশী কর্মী এবং প্রধানত, পাকিস্তানী ও ভারতীয়দের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। পরিস্থিতির ফেরে পড়ে তাদের স্বদেশী কর্মী নিতে না পারা কতটা মর্মপীড়াদায়ক, সহজেই অনুমেয়। কর্মসংস্থানের এমন একটা সহজ সুযোগ কাজে লাগাতে না পারা দেশের জন্যও একটা বড় ধরনের ক্ষতি। ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে জানা গেছে, প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা কর্মী বা শ্রমিক সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে পাকিস্তান ও ভারতের দিকে ঝুঁকছে। ইতোমধ্যে তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার পাকিস্তানী ও ভারতীয় কর্মী কাজ পেয়েছে। পরিস্থিতিগত এ সুযোগ পাকিস্তানী ও ভারতীয় রিক্রুটিং এজেন্সি ও আদম ব্যবসায়ীরা খুব ভালোভাবেই লুফে নিয়েছে। তারা বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোতে গিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই এবং চাহিদানুযায়ী কর্মী সরবরাহের চেষ্টা করছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে রীতিমত প্রতিযোগিতা চলছে। পাকিস্তানী ও ভারতীয় কর্মীরা বাংলাদেশী কর্মীদের তুলনায় দক্ষ না হলেও নানাভাবে তাদের গছিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে পাকিস্তানী ও ভারতীয় রিক্রুটিং এজেন্সি ও আদম ব্যবসায়ীরা। এমন কি তারা কৌশল করে ডিজিট ভিসার কর্মী এনে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোতে হাজির করিয়ে নিয়োগ ভিসা লাগানোর ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। এভাবে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশী কর্মীমুক্ত হয়ে যাচ্ছে। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কি হতে পারে!

বিদেশে কর্মসংস্থান কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা কারো না বুঝতে পারার কথা নয়। আমাদের মত অতিরিক্ত শ্রমশক্তির দেশের জন্য বিদেশে কর্মসংস্থান বেকারত্ব হ্রাসের জন্য যেমন তেমনি রেমিটেন্স হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য অপরিহার্য। বিদেশী কর্মীদের পাঠানো রেমিটেন্স আমাদের অর্থনীতির একটি শক্তিশালী স্তম্ভ। এক কোটির অধিক বাংলাদেশী কর্মী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের কাজ করছে। তাদের উপার্জিত অর্থের বড় অংশই তারা দেশে পাঠাচ্ছে। এ অর্থ তাদের পরিবার-পরিজনের কাজে লাগছে। কাজে লাগছে দেশের। বিদেশে কাজ করার উপযুক্ত কর্মীর অভাব দেশে নেই। আরো এক কোটি-দু’কোটি কর্মীরও যদি বিদেশে কর্মসংস্থান হয়, তাতেও দেশের কর্মযোগ্য মানুষের অভাব হবে না। মানুষের জীবনমানের উন্নতি ও দেশের সমৃদ্ধি-অগ্রগতির জন্য বিদেশে কর্মসংস্থান বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য বললেও বেশি বলা হয় না। অথচ এক্ষেত্রে আমাদের উদ্যোগ ও প্রয়াস-প্রচেষ্টা মোটেই সন্তোষজনক নয়। ওয়াকিবহাল মহলের অবিদিত নেই, করোনাকারণে বিদেশের প্রতিটি শ্রমবাজারেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। হাজার হাজার বাংলাদেশী দেশে ফিরে এসেছে। জানা যাচ্ছে, আরো লক্ষাধিক কর্মী ফিরতে পারে। ওদিকে প্রায় পাঁচ লাখ কর্মী পুরানো-নতুন কর্মস্থলে যেতে পারছে না নানা কারণে। এই দুর্ঘট মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, মন্ত্রণালয় ও সরকার বিকারহীন বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। পরিস্থিতি সন্দেহাতীতভাবে উদ্বেগজনক। এদিকে আরো নজর ও যথাবিহীত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

বাংলাদেশের কর্মসংস্থানের বড় বাজার মধ্যপ্রাচ্যের সউদী আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার প্রভৃতি এবং পূর্ব এশিয়ার মালয়েশিয়া। এশিয়ার অন্যান্য দেশ ও ইউরোপ-আমেরিকাতেও বাংলাদেশী কর্মীর চাহিদা আছে। দু:খজনক হলেও বলতে হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের বাজারগুলোর বেশির ভাগই ঘোষিত-অঘোষিতভাবে বন্ধ থাকায় বাংলাদেশী কর্মীরা যেতে পারছে না। মালয়েশীয়াতেও একই অবস্থা। সউদী আরবে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক বাংলাদেশীর কর্মসংস্থান হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাতে ভাটার টান চলছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাজার তো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধই। মালয়েশিয়ার দুয়ারও খুলছে না। একেক দেশে একেক পরিস্থিতি, ভিন্ন ভিন্ন কারণ। কিন্তু সরকার এসব নিরসন করার ক্ষেত্রে এখনো সফলকাম হতে পারেনি। কথাবার্তা, আলাপ-আলোচনা যে একেবারে হয়নি, তা নয়। তবে সেসব ফলপ্রসূ হয়নি। আমরা লক্ষ্য করেছি, পাকিস্তান, ভারত প্রভৃতি দেশ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বছরের পর বছর ধরে পড়ে আছে। তাদের মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা রফতানি সহজ ও মসৃণ হয় এজন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম হলো বাংলাদেশ। বন্ধ ও নিষিদ্ধঘোষিত শ্রমবাজার খোলার ক্ষেত্রে শোচনীয় ব্যর্থতা সরকারের প্রচেষ্টার অভাবেরই প্রমাণ বহন করে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসের কর্মকর্তাদের ভূমিকা সব সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ। বিশ্বের বড় বড় শ্রমশক্তি আমদানিকারী দেশ মুসলিম দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের বিশেষ সুবিধা পাওয়ার কথা। এ সুবিধা পেতে হলে শীর্ষ রাজনৈতিক পর্যায় থেকে উদ্যোগী হতে হবে। ওইসব দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক গভীর করতে হবে। তখন আর শ্রমবাজার হারানোর ঝুঁকি থাকবে না। সরকার এদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেবে, এটাই আমরা আশা করি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Anwar ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৩:৩৭ পিএম says : 0
প্রায় নয় বছর একই কোম্পানিতে আছি. না পারতাছি কোম্পানি পরিবর্ন করতে.না পাইছি অবস্থান.না আছে বেতন বৃদ্ধি .এবং আমাদের প্রতিবেশি দেশ গুলো আমাদের কে কোনঠাসা মধ্যে রাখছে. এবং তারা আমাদের কে উপরে উঠা কোন রাস্তা দেয়না. তারা জানে যে আমাদের কোনো নতুনভাবে ভিসা হবে না.আমাদের একটাই দাবি যতই তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের ভিসা জটিলতা টা সমাধান করা হক.যদি সম্ভব না হয় তাদের আগ্রাসনে আমাদের কে কাজ করতে হবে. আর কি.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন