শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে চুরি-অপহরণ-খুন-গুমের মামলা ও ফায়সালা-৪

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

‘কাসামাহ’র এ ঘটনাটি ইসলামে প্রথম। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুন-হত্যার নানা দন্ডবিধি ফেকা শাস্ত্রের ইমামাগণ উদ্ভাবন করেছেন। খুন-হত্যার মহাপাপের শাস্তি যেমন সুকঠিন, প্রাণের বদলে প্রাণ তেমনি প্রমাণ করার জন্য সাক্ষ্য শেপথের ব্যাপারটিও যথেষ্ট জটিল। কাসামাহর ঘটনা হতে উদ্ভ‚ত বিষয়গুলো তাই আমরা বিভিন্ন হাদীসের আলোকে উপরে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ‘কাসামাহ’ নীতির ভিত্তিতে ইবনে ইসহাকের বর্ণনা অনুযায়ী, ঘটনাটি ছিল এই যে, রসূলুল্লাহ (সা.) তায়েফের দিকে গমনকালে কয়েকটি স্থান অতিক্রম করেন। ‘র্হারাতুর রামাদ’ নামক একটি পাথরি জমিতে উপনীত হলে সেখানে তিনি একটি মসজিদ কায়েম করেন এবং তাতে নামাজ আদায় করেন। ইবনে ইসহাক আমর ইবনে শোয়েবের বরাতে বলেন, ‘তিনি আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, ঐ দিন উক্ত স্থানে তিনি একটি খুনের কিসাস (বদলা) দেন, যা ইসলামে প্রথম খুন ছিল।’

ঘটনার বিবরণ এই যে, বনি লাইসের এক ব্যক্তি বনি হোজাইলের এক ব্যক্তিকে হত্যা করে। হুজুর (সা.) এর বদলা হিসেবে হত্যাকারীকে মৃত্যুদন্ড দান করেন। ‘ওয়াযেহা’ নামক পুস্তকে বর্ণিত হয়েছে যে, ঐ হত্যাকারীকে কাসামতের সাথে মৃত্যুদন্ড দান করেন।

আরো বলা হয়ে থাকে যে, মোহাল্লাম ইবনে জুসামা কর্তৃক আমের ইবনে আযবাত আসজায়ী নিহত হন। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে দিয়াত (শোণিতপণ) প্রদানের কথা বলেন, তা তারা কবুল করে। সুতরাং, রসূলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশ অনুযায়ী তারা একশত উট প্রদান করে। মোহাল্লাম কিছু দিন জীবিত ছিল। একটি বর্ণনায় সাত দিনেরও কম। অতঃপর তার মৃত্যু হয়। তাকে দাফন করা হলে জমিন তাকে ওগলে দেয়।

বর্ণিত আছে যে, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘হে আল্লাহ! মোহাল্লামকে ক্ষমা করো না।’ তাই জমিন তাকে তিনবার ওগলে দেয়। এতে রসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: ‘জমিন তার চেয়ে মন্দ লোককেও গ্রহণ করে, কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা তাকে তোমাদের জন্য শিক্ষণীয় করা।’ এরপর লোকেরা তাকে পর্বতের দুই উপত্যকার মধ্যে ফেলে দেয় এবং সে হিংস্র জন্তুদের খাদ্য হয়।

‘খুনের বদলে খুন’ এ নীতি কথা ইসলামে নতুন নয়। হজরত মূসা (আ:)-এর প্রতি অবতীর্ণ ‘তাওরাত’ গ্রন্থেও এ বিধান ছিল এবং আল্লাহ তাআলা কোরআনেও তা বহাল রেখেছেন। এতদসংক্রান্ত বিভিন্ন আয়াতে হত্যার নানা দিকও তুলে ধরা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, একজন নিরাপরাধ ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা যেন সারা বিশ্ববাসীকে হত্যা করার শামিল। তাই অন্যায় হত্যা যেমন মহাপাপ, তার শাস্তিও সুকঠিন।

অর্থাৎ প্রাণের বদলে প্রাণ হরণ করা। তবে তা করতে হবে ন্যায়ভিত্তিক সুবিচারের মাধ্যমে। সে জন্যই সাক্ষী-শপথের কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অন্যায় প্রদর্শিত হলে নিহতের লাশও কবর গ্রহণ করে না, জীব জন্তুর খাদ্য হয়, সে দৃষ্টান্তেরও অভাব নেই। রসূলুল্লাহ (সা.)-এর সময়েও এরূপ ঘটনার প্রমাণ রয়েছে।

আমরা গুম-খুন-হত্যা, অপহরণ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে জাহেলী যুগের কাসামার ইতিহাস, কাহিনী তথা ঘটনার উল্লেখ করেছি এবং কাসামার মাধ্যমে হত্যাকারির বিচার ও নিহত ব্যক্তির ওয়ারেশগণকে শোণিতপণ (দিয়াত) প্রদানে রসূলুল্লাহ (সা.)-এর ফয়সালার কথাও বলা বলেছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Md Rejaul Karim ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:২৩ এএম says : 0
একমাত্র আল্লাহপাক সকল সাহায্য ও ভরসার দেয়ার মালিক।
Total Reply(0)
হিমেল ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:৩২ এএম says : 0
কেউ শয়তানের ধোঁকায় চুরি করে ফেললে তাকে অবশ্যই আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট খাঁটি তাওবা করে চুরিত বস্ত্তটি উহার মালিককে ফেরৎ দিতে হবে। চাই সে তা প্রকাশ্যে দিক অথবা অপ্রকাশ্যে।
Total Reply(0)
গাজী মোহাম্মদ শাহপরান ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:৩৩ এএম says : 0
কেউ কেউ কোন কাফিরের সম্পদ চুরি করতে এতটুকুও দ্বিধা করে না। তাদের ধারণা, কাফিরের সম্পদ আত্মসাৎ করা একেবারেই জায়িয। মূলত এরূপ ধারণাও সম্পূর্ণটাই ভুল।
Total Reply(0)
জাবের পিনটু ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:৩৩ এএম says : 0
অনেকেই রাষ্ট্রীয় তথা জাতীয় সম্পদ চুরি করতে একটুও দ্বিধা করে না। তাদের ধারণা, সবাই তো করে যাচ্ছে তাই আমিও করলাম। এতে অসুবিধে কোথায়? মূলত এ ধারণা একেবারেই ঠিক নয়।
Total Reply(0)
হাফেজ মোহাম্মদ মাহদী হাছান ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:৩৩ এএম says : 0
জাতীয় সম্পদ বলতে রাষ্ট্রের সকল মানুষের সম্পদকেই বুঝানো হয়। সুতরাং এর সাথে বহু লোকের অধিকারের সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষভাবে তাতে রয়েছে গরিব, দু:খী, ইয়াতীম, অনাথ ও বিধবাদের অধিকার। তাই ব্যক্তি সম্পদের তুলনায় এর গুরুত্ব অনেক বেশি এবং এর চুরিও খুবই মারাত্মক।
Total Reply(0)
হৃদয়ের ভালোবাসা ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:৩৩ এএম says : 0
কিন্তু সীমালঙ্ঘনের পর যে তাওবা করে ও সংশোধিত হয়, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।
Total Reply(0)
তাসফিয়া আসিফা ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:৩৪ এএম says : 0
দেশে আজ ইসলামি আইন থাকলে অপরাধ অনেক কমে যেত।
Total Reply(0)
ইসলামী শরিয়তের বিধান চর্চা খুবই জরুরি। ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৭:১০ এএম says : 0
জ্ঞান চর্চা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।
Total Reply(0)
Jack Ali ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৮ পিএম says : 0
We liberated our country from pakistan -- because they used to oppressed us. But what we have witness after liberation our government stared killing people like shooting bird not only that plain clothe people come and abduct people and they never come back.. O'Allah rescue us from these Zalem government and send us a muslim leader who will rule the country by the Law of Allah.. then we will be able to live in our Beloved country in peace and with human dignity..
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন