পাট গাছ পানিতে কিছুদিন ভিজিয়ে রেখে বাকল ছাড়ানোর পর যে আঁশ পাওয়া যায় তা হচ্ছে পাট। কাঁচা অবস্থায় পাট গাছের বাকল ছাড়িয়ে নিয়ে পানিতে ভিজিয়েও পাট সংগ্রহ করা যায়। এ পাট শুকিয়ে বাজারজাত করা হয়। আর পাটকাঠি শুকিয়ে লাকড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কেউ কেউ ঘরের বেড়া তৈরির কাজেও পাটকাঠি ব্যবহার করেন।
মাদারীপুরের শিবচরের পাটকাঠি পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে ছাই। এ ছাই বিশ্বমানের কার্বন হিসেবে রফতানি হচ্ছে চীন, তাইওয়ান, বেলজিয়ামসহ বিভিন্ন দেশে। দুই বছর আগে শিবচরের উমেদপুরে এক্সিলেন্ট জুট স্টিক কার্বন ফ্যাক্টরি ও শরীয়তপুরে দুটি ফ্যাক্টরি স্থাপনের পর পাটকাঠি নিয়ে নতুন সম্ভাবনা দেখা দেয়। ফ্যাক্টরিগুলো এখন কৃষকের পাটকাঠি কিনে নেয়। কৃষক পাটকাঠির মণ প্রতি দাম পান ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। বিপুল পরিমাণ পাটকাঠির জোগান পাওয়ায় বছর জুড়েই থাকে সরবরাহ ও উৎপাদন। প্রতিদিন ফ্যাক্টরিতে এক থেকে দেড় টন কার্বন উৎপাদন হয়। এ খাতকে ঘিরে নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। উৎপাদিত কার্বন চীন, তাইওয়ান, ব্রাজিল, বেলজিয়ামসহ বিভিন্ন দেশে প্রিন্টারের কালি, ফটোস্ট্যাট মেশিনের কালি, আতশবাজি, ব্যাটারিসহ গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী তৈরি হয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকায় বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়। এতে দেশের কাঁচামালে তৈরি পণ্যই কয়েকগুণ বেশি দামে কিনতে বাধ্য হয় বাংলাদেশ।
স্থানীয় কৃষক আ. মালেক বলেন, আগে পাট বিক্রি করতে পারলেও পাটকাঠির কোনো দাম পেতাম না। পাটকাঠিগুলো সাধারণত রান্নার কাজেই ব্যবহৃত হতো। এখন কার্বন মিলে পাটকাঠি বিক্রি করতে পেরে লাভবান হচ্ছি। ব্যবসায়ী স্বপন পাল বলেন, আমাদের এলাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলায় কার্বন তৈরির ফ্যাক্টরি স্থাপন হওয়ায় এখানে পাটকাঠি বিক্রি করি। এ ফ্যাক্টরিতে তৈরি কার্বন বিভিন্ন দেশে রফতানি হয় বলে শুনেছি। এ কার্বন নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় প্রক্রিয়াজাত হয়ে ফটোস্ট্যাট মেশিন ও কম্পিউটারের কালি হিসেবে দেশেই অনেক বেশি দামে আমদানি হয়।
কার্বন ফ্যাক্টরির শ্রমিক আলমগীর হোসেন বলেন, মাদারীপুরের শিবচরসহ ফরিদপুর ও শরীয়তপুরের পাটকাঠি খুব উন্নতমানের। এ পাটকাঠি পুড়িয়ে প্রতিদিন এক থেকে দেড় টন ছাই বা কার্বন উৎপাদন করি। এ কার্বন কম্পিউটারের প্রিন্টারসহ ফটোস্ট্যাট মেশিনের কালি ও ব্যাটারি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এক্সিলেন্ট জুট স্টিক কার্বন ফ্যাক্টরির ম্যানেজার সাহিদুর রহমান বলেন, মাদারীপুর, ফরিদপুর ও শরীয়তপুর অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণ পাটের আবাদ হয়। পাট সংগ্রহ করার পর পাটকাঠির ওপর ভিত্তি করে এ ফ্যাক্টরি তৈরি করা হয়েছে। ফ্যাক্টরিতে তৈরি কার্বন চীন, তাইওয়ান, ব্রাজিলসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়। আমাদের কার্বন খুবই উচ্চ মানসম্পন্ন। তাই এর চাহিদাও বেশি।
কোম্পানির একজন স্বত্ত্বাধিকারী তুহিন সরদার বলেন, সরকার যদি এ কার্বন প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা করে তাহলে অল্প দামে কম্পিউটার ও ফটোস্ট্যাট মেশিনের কালি কিনতে পারবে। এতে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচনের মাধ্যমে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। তাই দেশে পাটকাঠির কার্বন থেকে কালি প্রক্রিয়াজাতকরণের ফ্যাক্টরি স্থাপন করা খুবই জরুরি।
মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক এম এ গফুর বলেন, শুনেছি মাদারীপুর, ফরিদপুর, শরীয়তপুরের আবাদকৃত পাটকাঠি শিবচরের একটি ফ্যাক্টরিতে পুড়িয়ে ছাই বা কার্বন তৈরি হয়। আবার তা ¦ রফতানি হয়। সে কার্বন থেকে কালি প্রস্তুত করে আবার আমাদের দেশেই বিক্রি করা হয়। এ ধরনের প্রকল্প দেশেও করা সম্ভব। বাংলাদেশে যেহেতু উন্নতমানের কাঁচামাল রয়েছে, তাই এখানে পাটকাঠির কার্বন থেকে কালি তৈরির ফ্যাক্টরি স্থাপন সময়ের দাবি। যারা উদ্যোক্তা রয়েছেন তারা এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন। এতে দেশের অর্থনীতিতে এ ধরনের পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন