দেশজুড়ে সাড়া জাগানো ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে অনেকেইে ধরা পড়লেও নেপথ্যে জড়িতরা ধরাছোয়ার বাইরেই থেকে গেছে। গত এক বছরে বহুল আলোচিত ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে ৩২টি মামলা মধ্যে ২০টি মামলায় চার্জশিট দাখিল করা হলেও ১২টি মামলা এখনও তদন্তাধিন। ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর প্রথম দিনই রাজধানীর ফকিরাপুলের ইয়াংমেনস ক্লাবে অভিযান চালানো হয়।
ওইদিন সন্ধ্যায় গুলশানের বাসা থেকে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগাঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভ‚ঁইয়াকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ৬ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের সীমান্ত এলাকা থেকে র্যাব গ্রেফতার করে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে। এসব গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে রাজধানীর ক্লাব কেন্দ্রিক ক্যাসিনোকান্ডের কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজির তথ্য বেরিয়ে আসে। ক্যাসিনো অভিযান শুরুর পর অনেকেই গাঢাকা দেন। কেউ কেউ থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতে আত্মগোপন করেন। র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ গতকাল বলেন, ক্যাসিনো অভিযানের ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলোর মধ্যে ১৩টি মামলার চার্জশিট দেয়া হয়েছে। একটি মামলার তদন্ত চলছে। শিগগির চার্জশিট দেয়া হবে।
আইন-শৃংখলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, প্রায় তিন মাস ধরে ক্যাসিনো বিরোধী মোট ৪৯টি অভিযান পরিচালিত হয়। এর মধ্যে ৩২টি র্যাব এবং ১৭টি অভিযান পুলিশ পরিচালনা করে। এসব অভিযানে ২৭৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে ঢাকায় ২২২ জন এবং ঢাকার বাইরে ৫৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এই সময়ের মধ্যে ১১টি ক্যাসিনো ও ক্লাবে অভিযান চালিয়েছে র্যাব। এই ক্যাসিনোকান্ডে আলোচিত ক্লাবগুলো হল- ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাব, মতিঝিলের ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র, কলাবাগান ক্রীড়া চক্র, ধানমন্ডি ক্লাব, ফু-ওয়াং ক্লাব, চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব, আবহানী ক্লাব, মোহামেডাম ক্লাব এবং বনানীর গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ। এরপর আরও বেশ কয়েকটি ক্যাসিনোতে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
ওই সূত্র আরো জানায়, এসব অভিযানে ৮ কোটি ৪৫ লাখ নগদ টাকা, ১৬৬ কোটি টাকার এফডিআর, ১৩২টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই এবং ১১ কোটি ৭৭ লাখ টাকার চেক জব্দ করা হয়। এছাড়া আট কেজি স্বর্ণ, ২২টি অবৈধ আগ্নেয়ান্ত্র এবং বিপুল পরিমাণ বিদেশী মদ ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এসব ঘটনায় দায়ের করা হয় মোট সর্বমোট ৩২টি মামলা। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ১৪টি মামলার তদন্ত করে র্যাব। এর মধ্যে ১৩টি মামলার চার্জশিট আদালতে প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া এখনো ১টি মামলা তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া বাকি ১৮টি মামলা তদন্ত করে পুলিশ। পুলিশের তদন্ত করার মামলাগুলোর মধ্যে সাতটি মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে। এদের মধ্যে গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক এনু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুপন ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের ৫ টি মামলার মধ্যে ৪টির চার্জশিট দাখিল করেছে সিআইডি।
সিআইডির ডিআইজি (অর্গানাইজড ক্রাইম) ইমতিয়াজ আহমেদ জানিয়েছিলেন, এনু-রুপনের কাছ থেকে জমিসহ ২০টি বাড়ি, ১২০টি ফ্ল্যাট, ২৫ কাঠা জমি ছাড়াও ৯১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রায় ১৯ কোটি টাকা পাওয়া গেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন